পরিসংখ্যান কাকে বলে | পরিসংখ্যানের ব্যবহার
পরিসংখ্যান কি?
পরিসংখ্যান বা Statistics হচ্ছে সংখ্যাবিষয়ক বিজ্ঞান৷ Statistics শব্দের বাংলা পরিভাষা হচ্ছে পরিসংখ্যান। যা সংখ্যাত্মক তথ্য ও সংখ্যাত্মক পদ্ধতি উভয় অর্থেই ব্যবহৃত হয়৷ সংখ্যাত্মক তথ্য অর্থে পরিসংখ্যান আবার দুই ধরনের হয়ে থাকে।পরিসংখ্যান |
যথাঃ একবচন ও বহুবচন অর্থে পরিসংখ্যান৷ সুতরাং পরিসংখ্যান আমরা তিনটি ভিন্ন ভিন্ন অর্থে বুঝে থাকি৷ নিচে এদের বর্ণণা দেয়া হলঃ
প্রথমতঃ
একবচনে পরিসংখ্যান বলতে নমুনাজমানকে বুঝায়৷ একজাতীয় কিছু সমকালীন তথ্যকে একটি প্রতিনিধিত্বমূলক সংখ্যা যেমনঃ গড় দ্বারা প্রকাশ করা হলে ঐ সংখ্যাটিকে একবচন পরিসংখ্যান বলা হয়। অর্থাৎ যদি বলা হয় যে কোন একটি কলেজের ছাত্রদের গড় উচ্চতা ৫.৫ ফুট হয় তবে এটি একটি পরিসংখ্যান হবে।
দ্বিতীয়তঃ
বহুবচন পরিসংখ্যান বলতে কোন ঘটনা বা বৈশিষ্ট্যের পরিমাপ সূচক একসেট সংখ্যাকে বুঝয়৷ একসেট সংখ্যা যদি কোন ঘটনার হিসেবে প্রকাশ করে তবে তাদেরকে বহুবচনে পরিসংখ্যান বলা হবে৷
যেমনঃ একটি দেশের জনসংখ্যা বিভিন্ন ধরনের হিসাব, কতকগুলা পণ্যের বিভিন্ন সময়ে উৎপাদন বা মূল্য বা আমদানি রপ্তানির হিসাব, কতগুলো পরিবারের শিশুর সংখ্যা ইত্যাদি সংখ্যা হচ্ছে ঐ সব বিষয়ের পরিসংখ্যান।
তৃতীয়তঃ
সংখ্যাত্মক পদ্ধতি অর্থে পরিসংখ্যান বলতে নিয়মতান্ত্রিক উপায়ে সংখ্যাত্মক তথ্য সংগ্রহ সংজ্ঞাবদ্ধকরণ উপস্থিপন ব্যাখ্যা ও বিশ্লেষণের বিজ্ঞান বলা যায়৷
অর্থাৎ পরিসংখ্যান এমন একটি বিজ্ঞান যার সাহায্যে সংখ্যা বিশ্লেষণ করে তত্ত্ব উদঘাটন করা হয়৷ একবচন অর্থে পরিসংখ্যান বলতে একটি বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিকে বুঝায়৷
এক্ষেত্রে পরিসংখ্যান তার নিজস্ব ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হয়৷ একবচনে পরিসংখ্যানে সংজ্ঞাঃ পরিসংখ্যান হল বিজ্ঞানের সেই শাখা যেখানে কোন অনিশ্চিত বিষয় সম্পর্কে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়৷
পরিসংখ্যান হল প্রাক্কলন ও সম্ভাব্যতার বিজ্ঞান৷ বহুবচন অর্থে পরিসংখ্যান প্রাত্যহিক জীবনের রাজনৈতিক, সামাজিক ও অর্থনৈতিক ঘটনার সংখ্যাত্মক প্রকাশ বলে ধরা হয়৷
বহুবচন অর্থে পরিসংখ্যানের সংজ্ঞাঃ
Bowley এর মতে যে কোন ধরনের অনুসন্ধানের ফলে সংগৃহীত পারস্পরিক সম্পর্কে আবদ্ধ সংখ্যাভিত্তিক তথ্যের সমষ্টিকে পরিসংখ্যান বলে৷
Bowley এর মতে যে কোন ধরনের অনুসন্ধানের ফলে সংগৃহীত পারস্পরিক সম্পর্কে আবদ্ধ সংখ্যাভিত্তিক তথ্যের সমষ্টিকে পরিসংখ্যান বলে৷
পরিসংখ্যানের বৈশিষ্ট্য?
এর মতে পরিসংখ্যান ফলিত বিজ্ঞানের এমন শাখা যা সংগৃহীত তথ্য পর্যবেক্ষণে প্রয়োগ করা হয়৷ পরিসংখ্যানের বৈশিষ্ট্যসমূহ নিচে দেয়া হলঃ- পরিসংখ্যান ব্যবসার বাণিজ্য অবস্থা বা ঘটনার অংশ বিশেষ পরীক্ষা করে৷
- পরিসংখ্যান ভবিষ্যৎ অবস্থার মূল্যায়নের সাথে সম্পর্কিত অতীত ও বর্তমান তথ্যসমূহ যথাযথ ব্যাখ্যা করে৷
- পরিসংখ্যান হচ্ছে তথ্যের সমষ্টি৷
- পরিসংখ্যানের অনুসন্ধান কোন একটি নির্দিষ্ট ক্ষেত্রের সাথে সম্পর্কিত হতে হবে৷
- পরিসংখ্যানে সংখ্যাসূচক প্রকাশ আবশ্যক৷
- পরিসংখ্যান তথ্য সুশৃঙ্খলভাবে সংগ্রহ করতে হবে৷
- পরিসংখ্যান তথ্য বহুবিধ কারণ দ্বারা প্রভাবিত হয়৷
পরিসংখ্যানের কার্যাবলি?
কোন বিষয়ে অতীত ও বর্তমান তথ্যের ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত গ্রহণের জন্য সংখ্যাভিত্তিক ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ করাই পরিসংখ্যানের কাজ৷ বিভিন্ন পরিসংখ্যান বিদগণের দেয়া সংজ্ঞাগুলো বিশ্লেষণ করলে দেখা যায় যে কোন পরিসাংখ্যিক অনুসন্ধানে প্রধানত তথ্য সংগ্রহ, সংঘবদ্ধকরণ, উপস্থাপন, বিশ্লেষণ ও ব্যাখ্যা প্রদান এ পাঁচটি কাজ সম্পন্ন করা হয়ে থাকে৷এসব ছাড়াও পরিসংখ্যানে আরও কিছু কাজ করা হয়ে থাকে৷ নিচে পরিসংখ্যানের কাজগুলো আলোচনা করা হলঃ
- তথ্য সংগ্রহ
- সংঘবদ্ধকরণ
- উপস্থাপনা
- বিশ্লেষণ
- ব্যাখ্যাদান
- সংখ্যার মাধ্যমে প্রকাশ
- বিজ্ঞানের নীতি
তথ্য সংগ্রহ
যে কোর পরিসাংখ্যিক অনুসন্ধানের প্রথম ধাপ হচ্ছে উপাত্ত সংগ্রহ করা৷ প্রয়োজনীয় উপাত্ত প্রাথমিক অথবা মাধ্যমিক হবে তা নির্ধারণ করতে হবে৷
প্রাথমিক তথ্য সংগ্রহ করতে হলে তথ্য সংগ্রহের পদ্ধতি যেমন শুমারি জরিপ বা নমুনা জরিপ নির্ধারণের পর নির্ভুলভাবে তথ্য সংগ্রহ করা পরিসংখ্যানের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ কাজ৷
সংঘবদ্ধকরণ
বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই মাধ্যমিক তথ্য মোটামুটি সংঘবদ্ধ অবস্থায় পাওয়া যায়৷ কিন্তু প্রাথমিক তথ্য অসংঘবদ্ধ অসামঞ্জস্য অশ্রেণিকৃত অবস্থায় থাকে বলে ও তথ্য থেকে সহজে তত্ত্ব উদঘাটন করা যায় না৷
এজন্য তথ্যকে সম্পাদনের মাধ্যমে সংঘবদ্ধ করতে হয়৷ তথ্য সংঘবদ্ধকরণ বলতে তথ্যকে সম্পূর্ণ সুসঙ্গত সঠিক ও নির্ভুল এবং সমজাতীয় করা হয়৷
উপস্থাপনা
অশ্রেণিকৃত তথ্য থেকে সহজে তত্ত্ব উদঘাটন করা যায় না৷ সুতরাং সংগীত তথ্যকে সংজ্ঞা্দ্ধ করার পরে তথ্যকে শ্রেণিবদ্ধকরণ সারণিবদ্ধকরণ ও গণসংখ্যা নিবেশনের মাধ্যমে বিভিন্ন ধরনের পরিসাংখ্যিক ছকনও সারণিতে উপস্থাপন করা হয়৷
এছাড়াও তথ্যকে বিভিন্ন ধরনের পরিসাংখ্যিক লেখ ও চিত্রের মাধ্যমে উপস্থাপন করা হয়৷ ছক সারণি লেখ ও চিত্রের মাধ্যমে তথ্যকে উপস্থাপন করলে৷ ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ ও তত্ত্ব উদঘাটনের কাজ সহজ হয়৷
বিশ্লেষণ
বিভিন্ন ধরনের পরিসাংখ্যিক ছক ও সারণির মাধ্যমে উপস্থাপিত তথ্যের উপর কেন্দ্রিক প্রণতার পরিমাপ বিস্তার পরিমাপ পরিঘাত বষ্কিমতা সূঁচালতা সংশ্লেষ নির্ভরণ ইত্যাদি পরিসাংখ্যিক পদ্ধতি ও সূত্রাবলি প্রয়োগ করে তথ্যকে ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ করা হয় এবং প্রয়োজনীয় গণনার কাজ করা হয়৷
ব্যাখ্যাদান
পরিসাংখ্যিক বিশ্লেষণের মাধ্যমে প্রাপ্ত ফলাফলের ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়ে থাকে৷ এজন্য কোন অভিজ্ঞ পরিসংখ্যানবিদের কাজ থেকে উক্ত ফলাফলের উপর ব্যাখ্যা গ্রদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়ে থাকে৷
এজন্য কোন অভিজ্ঞ পরিসংখ্যানবিদের কাছ থেকে উক্ত ফলাফলের উপর ব্যাখ্যা গ্রহণ করা হয় এবং সেই ব্যাখ্যা অনুসারে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়ে থাকে৷
সংখ্যার মাধ্যমে প্রকাশ
তথ্যকে সংখ্যার মাধ্যমে প্রকাশ করে এবং ঘটনাকে সহজ ও সুশৃঙ্খলভাবে উপস্থাপন করে৷ শ্রেণিবদ্ধকরণ বা সারণিবদ্ধকরণ গণসংখ্যা নিবেশন লেখ ও চিত্র ইত্যাদি পদ্ধতির মাধ্যমে উপস্থান করে অশ্রেণিকৃত তথ্য থেকে তত্ত্ব সংগ্রহের কাজ ত্বরান্বিত করে৷ এটি দুই বা ততোধিক নিবেশনকে তিলনা করার পদ্ধতি প্রণয়ন করে৷
বিজ্ঞানের নীতি
এটি অন্যাস্য বিজ্ঞানের নীতি উদ্ভাবন সূত্রের সঠিকতা নিরূপণ ও কল্পনা যাচাইয়ে সাহায্য করে৷ অন্যান্য বিজ্ঞানের নিয়ম কানুনের সত্যতা যাচাই এবং অনিশ্চিত কোন বিষয়ের গৃহীত পরিকল্পনা যাচাইয়ের মাধ্যমে সিদ্ধান্ত গ্রহণের সহায়তা করে৷ এটি পূর্বাভাস প্রদানে সহায়তা করে৷
অতীত অভিজ্ঞতা ও বর্তমান তথ্যের ভিত্তিতে ভবিষ্যৎ অবস্থা সম্পর্কে আনুমানিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা পরিসংখ্যান একটি উল্লেখযোগ্য কাজ৷
পরিসংখ্যানের গুরুত্ব?
প্রাচীনকালে রাষ্ট্রের বিভিন্ন সম্পদ আয় ব্যয় জনশক্তি ইত্যাদির হিসাব নিকাশের কাজ পরিসংখ্যান ব্যবহার করা হত৷ কিন্তু বর্তমান কালে যে কোন সংখ্যাত্মক গবেষণার কাজ পরিসংখ্যান ব্যবহার করা হয়৷ কোন বিষয়ে অতীত ও বর্তমান তথ্যের ভিত্তিতে ভবিষ্যৎ ঘটনা প্রবাহের উপর আলোকপাত করার জন্য সংগৃহীত তথ্য উপস্থাপন ব্যাঁখ্যা ও বিশ্লেষণের কাজে পরিসংখ্যান নীতি ও পদ্ধতি প্রয়োগ করা হয়ে থাকে৷মানব কল্যাণের সাথে জড়িত বিভিন্ন সামাজিক অর্থনৈতিক বৈজ্ঞানিক গবেষণার ক্ষেত্রে পরিসংখ্যানের গুরুত্ব ও ব্যবহার দিন দিন বেড়েই চলছে৷ নিচে পরিসংখ্যানের গুরুত্ব ও ব্যবহার সংক্ষেপে আলোচনা করা হলঃ
- পরিসংখ্যান মানব কল্যাণে সাহায্য করে
- পরিসংখ্যান নীতিনির্ধারণে সহায়তা করে
- পরিসংখ্যান পরিকল্পনা গ্রহণে সহায়তা করে
- পরিসংখ্যান প্রশাসনিক কাজে সহায়তা করে
- পরিসংখ্যান অন্যান্য বিজ্ঞানকে সাহায্য করে
- পরিসংখ্যান অন্যান্য বিজ্ঞানকে সাহায্য করে
- পরিসংখ্যান অর্থনৈতিক বিশ্লেষণ সাহায্য করে
- পরিসংখ্যান ব্যবসা বাণিজ্য সাহায্য করে
- পরিসংখ্যানের অপব্যবহার হতে পারে
- পরিসংখ্যান অর্থনৈতিক বিশ্লেষণ সাহায্য করে
- পরিসংখ্যান ব্যবসা বাণিজ্যে সাহায্য করে
পরিসংখ্যান মানব কল্যাণে সাহায্য করে
পরিসংখ্যান মানব কল্যাণ বিষয়ক বিভিন্ন সামাজিক সমসর উপর গবেষণাকার্য পরিচালনা করতে সাহায্য করে৷ বিভিন্ন সামাজিক সমস্যা যেমন বেকার সমস্যা দরিদ্রতা শিক্ষা সমস্যা খাদ্য সমস্যা অপরাধ ইত্যাদি সঠিকভাবে নির্ণয় ও তার সমাধানের পথ নির্ধারণের জন্য পরিসংখ্যানিক অনুসন্ধান পরিচালনা করা হয়৷পরিসংখ্যান নীতিনির্ধারণে সহায়তা করে
পরিসংখ্যান যে কোন সামাজিক অর্থনৈতিক ও বাণিজিত প্রতিষ্ঠানের নীতিনির্ধারণের জন্য অতীত ও বর্তমান তথ্য সংগ্রহ ও বিশ্লেষণের ভিত্তিতে প্রয়োজনীয় নীতি গ্রহণে সহায়তা করে৷পরিসংখ্যান পরিকল্পনা গ্রহণে সহায়তা করে
যে কোন প্রাতিষ্ঠানিক বা জাতীয় পরিকল্পনা প্রণয়ন নিয়ন্ত্রণ ও পরিচালনা ক্ষেত্রে পরিসংখ্যান অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে৷ যে কোন পরিকল্পনা প্রণয়নের জন্য বিভিন্ন সমস্যা চিহ্নিত ও সে সবের উপর তথ্য সংগ্রহ ও ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ করে পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য পরিসংখ্যানিক পদ্ধতি প্রয়োগ করা হয়৷পরিসংখ্যান প্রশাসনিক কাজে সহায়তা করে
পরিসংখ্যান রাষ্ট্রের প্রশাসনিক নীতিনির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে৷ দেশের বাজেট প্রণয়ন কর নীতি শ্রম নীতি আমদানি রপ্তানি নীতি ইত্যাদি নীতি প্রণয়নে পরিসংখ্যান সহায়তা করে থাকে৷ প্রশাসনিক নীতিনির্ধারণের জন্য সামাজিক ও অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে পরিসংখ্যানিক গবেষণা অপরিহার্য৷জনসংখ্যা কৃষি শিক্ষা বাণিজ্য শিল্প ইত্যাদি ক্ষেত্রে তথ্য সংগ্রহ ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ ও পর্যালোচনার মাধ্যমে নীতিনির্ধারণের জন্য পরিসংখ্যানিক পদ্ধতি পয়োগ করা হয়৷
পরিসংখ্যান অন্যান্য বিজ্ঞানকে সাহায্য করে
পরিসংখ্যান অন্যান্য সামাজিক ও প্রাকৃতিক বিজ্ঞান যেমন পদার্থ বিজ্ঞান রসায়ন জীববিজ্ঞান মনোবিজ্ঞান সমাজবিজ্ঞান ইত্যাদি বিষয়ের ফলাফলের সঠিকতা নিরূপণে সাহায্য করে৷পরিসংখ্যান শিল্প ও ব্যবসা বাণিজ্য সাহায্য করে
শিল্প ব্যবসায়িক ও অর্থলগ্নী প্রতিষ্ঠানেন ব্যবস্থাপনার উন্নতিকল্পে পরিসংখ্যান গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে৷ শিল্প প্রতিষ্ঠানের শ্রমনীতি ক্রয় বিক্রয় নীতি ইত্যাদি নীতি প্রণয়নের আগে পণ্যের চাহিদা বাজার দর উৎপাদন খরচ ও মুনাফা ইত্যাদি যাচাই করার কাজে পরিসংখ্যানিক পদ্ধতি প্রয়োগ করা হয়ে থাকে৷ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানেন ব্যবস্থাপককে ব্যবসার গতি বাণিজ্যচক্র মুদ্রাস্ফীতি ইত্যাদি পরিস্থিতি সম্পর্কে ধারণা রাখার জন্য বাজার দর শেয়ার মূল প্রভৃতি বিষয়ের উপর তর্থ সংহো ব্যাখ্যা বিশ্লেষণের কাজে পরিসংখ্যান পদ্ধতি প্রয়োগ করা হয়ে থাকে৷
পরিসংখ্যান অর্থনৈতিক বিশ্লেষণ সাহায্য করে
অর্থনীতিতে চাহিদার বিশ্লেষণ কালীন সারির বিশ্লেষণ সূচসংখ্যা ও মুদ্রা সংক্রান্ত হিসেবে নিকাশের কাজে পরিসংখ্যান পদ্ধতি প্রয়োগ করা হয়৷ বিভিন্ন দ্রব্যের উৎপাদন চাহিদা যোগান বিনিয়োগ আমদানি রপ্তানি আয় ব্যয় ক্রয় বিক্রয় ইত্যাদি অবস্থার বিশ্লেষণের কাজে পরিসংখ্যান ব্যবহার করা হয়৷জনসম্পদ, কর্মসংস্থান, কার্যকর মুদ্রা ও রাজস্ব ইত্যাদি জাতীয় সম্পদসমূহ হিসাব নিকাশের কাজে পরিসংখ্যান ব্যবহার করা হয়ে থাকে৷ কৃষি সংক্রান্ত তথ্যাদি যেমন পশু সম্পদ কৃষি ক্ষেত্রে বিনিয়োগ ও উৎপাদন ইত্যাদির বিশ্লেষণেও পরিসংখ্যান ব্যবহার করা হয়৷
পরিসংখ্যান ব্যবসা বাণিজ্য সাহায্য করে
ব্যবসা বাণিজ্য পরিসংখ্যান অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে৷ ব্যবসায় পূর্বাভাসে অর্থা ব্যবসা বাণিজ্যের ভবিষ্যৎ অবস্থার মূল্যায়নে ব্যবসায়িক কাজকর্ম সম্পর্কে নীতি যেমন ক্রয় বিক্রয় নীতি আহরণ নীতি শ্রম নীতি মূলধন বিনিয়োগ ইত্যাদি নীতি প্রণয়নে সংশ্লিষ্ট তথ্য সংগ্রহ ও যথাযথ বিশ্লেষণে পরিসংখ্যান পদ্ধতি প্রয়োগ করা হয়৷ব্যবসায়ীগণ তাদের পণ্যদ্রব্যের বর্তমান ও ভবিষ্যৎ চাহিদা সম্পর্কে ধারণা নেয়ার জন্য ঋতুজ ভেদ বাণিজ্যিচক্র রুচির পরিবর্তন ভোক্তার ক্রয়ক্ষমতা ইত্যাদি সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ ও বিশ্লেষণের কাজে পরিসংখ্যানের সাহায্য নিয়ে থাকেন ব্যবসার গতি ও অর্থনৈতিক কাঠামো যেমনঃ বাণিজ্যচক্র ও মুদ্রাস্ফীতিজনিত পরিস্থিতি সম্বন্ধে সঠিক ধারণা রাখার জন্য দৈনিক বাজারদর শেয়ার মূল্য ইত্যাদি তথ্য সংগ্রহ ও বিশ্লেষণ করতে হয়৷
পরিসংখ্যান এ সমস্ত তথ্যের বিশ্লেষণ ও ব্যাখ্যাদানের মাধ্যমে ব্যবসার ঝুঁকিগুলো নির্দেশ করে ব্যবসায়ীকে সতর্ক করে দেয়৷ সবচেয়ে কম খরচে সর্বাধিক উৎপাদন অপচয় রোধ ও কর্মদক্ষতা বৃদ্ধির জন্য উৎপাদনে নিয়োজিত বিভিন্ন উপাদানের কর্মক্ষতা হতি নিরীক্ষা সময় নিরীক্ষা কাজের মূল্যায়ন উৎকর্ষতা বিচার প্রভৃতির পর্যালোচনাগুলো পরিসংখ্যানের সাহায্যে সম্পন্ন করা হয়৷ এছাড়া পণ্য উন্নয়ন বাজার গবেষণা ও বিশ্লেষণ প্রভৃতি ক্ষেত্রে পরিসংখ্যান পদ্ধতি প্রয়োগ করা হয়৷
টেক্সটাইল শিল্পে পরিসংখ্যান?
পরিসংখ্যান আধুনিক টেক্সটাইল শিল্প প্রতিষ্ঠানের এক অবিচ্ছেদ্য অংশ৷ টেক্সটাইল শিল্প প্রতিষ্ঠানের ব্যবসায়িক সফলতা নির্ভর করে সঠিক ব্যবস্থাপনা গ্রহণের উপর৷ আর এ ব্যবস্থাপনার উন্নতিকল্পে পরিসংখ্যান গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে৷কোন শিল্প প্রতিষ্ঠানের ব্যবসা সংক্রান্ত নীতি যেমন ক্রয় বিক্রয় নীতি শ্রমনীতি আহরণ নীতি ইত্যাদি নীতি প্রণয়নে সংশ্লিষ্ট পণ্যের চাহিদা বাজার দর উৎপাদন খরচ ও সর্বোপরি সম্ভব্য মুনাফা ইত্যাদি যাচাই করার কাজে পরিসংখ্যানিক নীতি ও পদ্ধতি তথা কলাকৌশল প্রয়োগ করা হয়ে থাকে৷
এছাড়া টেক্সটাইল শিল্পে প্রতিষ্ঠানের পণ্য সামগ্রীর গুণগতমান বজায় রাখার জন্য এবং গুণগতমান উন্নয়নের জন্য পরিসংখ্যান গুণগতমান নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে৷ সুনাম উভয়ই নির্ভর করে উক্ত প্রতিষ্ঠানের উৎপাদিতন পণ্য সামগ্রীর গুণগত মানের উৎকর্ষতার উপর৷
বর্তমানের এ প্রতিযোগিতা যুগে টিকে থাকতে হলে অবশ্যই পণ্যের গুণগত মান সঠিক হতে হবে৷ যে জন্য কাঁচামাল সংগ্রহ থেকে শুরু করে সর্বশেষ পণ্য উৎপাদন পর্যন্ত প্রতিটি পর্যায়ে পণ্যে মা৷ নিশ্চিত হওয়ার জন্য পরিসংখ্যানের প্রয়োজন৷
সুতরাং নিঃসন্দেহে বলা যায় যে একটি টেক্সটাইল শিল্প প্রতিষ্ঠানের জন্য পরিসংখ্যান এক গুরুত্বপূর্ণ হাতিয়ার (tool) হিসেবে কাজ করে৷
পরিসংখ্যানের সীমাবদ্ধতা?
পরিসংখ্যান বহুল ব্যবহার ও প্রয়োগ সত্ত্বেও এর নানাবিধ সীমাবদ্ধতা আছে৷ নিচে পরিসংখ্যানের সীমাবদ্ধতাগুলো আলোচনা করা হলঃ- পরিসংখ্যান উপাত্তকে সংখ্যায় প্রকাশ করতে হয়
- পরিসংখ্যান সমষ্টি নিয়ে আলোচনা করে
- পরিসংখ্যান সূত্রগুলো গড়ে উপযোগী ও দীর্ঘমেয়াদি সুত্রে সত্য
- পরিসংখ্যানের অপব্যবহার হতে পারে
- পরিসংখ্যান সিদ্ধান্তে পৌঁছার একটি হাতিয়ার মাত্র
- পরিসংখ্যানের ফলাফল সম্পূর্ণ নির্ভুল নয়
পরিসংখ্যান উপাত্তকে সংখ্যায় প্রকাশ করতে হয়
সংখ্যা বিশ্লেষণ করে তত্ত্ব উদঘাটন করাই হচ্ছে যে কোন পরিসংখ্যিক প্রধান কাজ৷ সুতরাং পরিসাংখ্যিক তথ্যকে অবশ্যই সংখ্যায় প্রকাশ করতে হবে৷যদিও পরিসংখ্যান গুণবাচক তথ্য নিয়ে কাজ করে না তথাপিও ঐসব তথ্যকে সংখ্যায় প্রকাশ করে নিয়ে তাতে পরিসাংখ্যিক পদ্ধতি প্রয়োগ করা যেতে পারে৷
পরিসংখ্যান সমষ্টি নিয়ে আলোচনা করে
এটি কোন বিশেষ একক সম্পর্কে আলোচনা বা তথ্য প্রদা৷ করতে পারে না৷ এটি সমষ্টি নিয়ে আলোচনা করে৷ কোন বৈশিষ্ট্য পরিমাপক এক বা একাধিক সংখ্যাকে পরিসংখ্যান হিসেবে গন্য করা হলেও কোন বিচ্ছিন্ন সংখ্যাকে পরিসংখ্যান বলা যায় না৷
যেমনঃ যদি বলা হয় যে একজন ছাত্রের উচ্চতা ৫ ফুট তবে তা কোন পরিসংখ্যান হবে না কিন্তু যদি বলা হয় যে কোন শ্রণির ছাত্রের উচ্চতা গড়ে ৫ ফুট তা একটি পরিসংখ্যান হবে৷ কারণ গড় উচ্চতা ৫ ফুট দ্বারা ঐ শ্রেণির সকল ছাত্রের উচ্চতা বুঝানো হয়েছে৷ সুতরাং পরিসংখ্যান একটি মাত্র সংখ্যা নিয়ে আলোচনা করে না সমগ্র বিষয় নিয়ে আলোচনা করে৷
পরিসংখ্যান সূত্রগুলো গড়ে উপযোগী ও দীর্ঘমেয়াদি সুত্রে সত্য
পরিসংখ্যান সূত্রগুলো দীর্ঘ পরিসরের ও অনেক তথ্যের উপর প্রয়োগ করলে ভালো ফল প্রদান করে কিন্তু ক্ষুদ্র পরিসরের অল্প সংখ্যক তথ্যের উপর সূত্রগুলো প্রয়োগ করলে তা সঠিক ফল প্রদান করতে পারে না৷পরিসংখ্যানের অপব্যবহার হতে পারে
পরিসাংখ্যিক উপাত্তের ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও পরিকল্পনা প্রণয়ন করা হয়ে থাকে৷ সুতরাং ভুল তথ্য সংগ্রহীত হলেও ফলাফল বিশ্লেষণ ও ব্যাখ্যা প্রদানের কোন ভুল হলে মারাত্মক ক্ষতির সম্ভাবনা থাকে৷ পরিসংখ্যানে উপযুক্ত জ্ঞান নেই এমন লোক দ্বারা কোন পরিসাংখ্যিক গবেষণার কাজ যেমনঃ তথ্য সংগ্রহ ও ব্যাখ্যা বিশ্লেষণের কাজ করালে ভুল ফল পাওয়ার সম্ভবনা থাকে৷এছাড়াও উদ্দেশ্যমূলক অপব্যবহারের ফলেও এটি হতে ভুল সিদ্ধান্ত পাওয়ার সম্ভাবনা থাকে৷ সুতরাং পরিসংখ্যানে ভালো জ্ঞান ও অভিজ্ঞতা না থাকলে পরিসংখ্যান তথ্য নিয়ে কাজ করা উচিত নয়৷
পরিসংখ্যান সিদ্ধান্তে পৌঁছার একটি হাতিয়ার মাত্র
পরিসংখ্যান কোন বিষয়ের অতীত ও বর্তমান তথ্যের ভিত্তিতে একটি গ্রহণযোগ্য মাত্রার ফল প্রদান করে যার ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়ে থাকে৷ এটি কোন সমস্যার সমধান নয়৷ এটি কেবল অতীত ও বর্তমান তথ্যেন ভিত্তির ভবিষ্যৎ অবস্থা সম্পর্কে আলোকপাত করে৷পরিসংখ্যানের ফলাফল সম্পূর্ণ নির্ভুল নয়
বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই নমুনা জরিপের মাধ্যমে এবং সম্ভাবনা তত্ত্বের ভিত্তিতে অনুসন্ধান কাজ সম্পন্ন করা হয়৷ নমুনার ভিত্তিতে প্রাপ্ত ফলাফল সংশ্লিষ্ট সমগ্রকের কোন একটি বৈশিষ্ট্যের সঠিক পরিমাপ হয় না৷ সুতরাং নমুনার ভিত্তিতে সমগ্রক সম্পর্কে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হলে তা সম্পূর্ণভাবে সঠিক হবে না৷সুতরাং যথেষ্ট সতর্কতার সাথে পরিসংখ্যান তথ্য নিয়ে কাজ করতে হয়৷ উপযুক্ত জ্ঞান ও যথেষ্ট সতর্কতার অভাবে এটো হতে ভ্রান্তিকর ফলাফল পাওয়া যেতে পারে৷
পরিসংখ্যান পদ্ধতির আলোচনা?
বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন পরিসংখ্যানবিদ নানারকম সংজ্ঞার মাধ্যমে পরিসংখ্যানের ব্যাপ্তি নির্দেশ করার চেষ্টা করেছেন৷ কিন্তু জ্ঞান বিজ্ঞানের যে কোন শাখার ব্যাপ্তি কোন একটি নির্দিষ্ট সংজ্ঞার মাধ্যমে নির্ধারণ করা সম্ভব নয়৷ পরিসংখ্যানের ক্ষেত্রেও এ কথাটি প্রযোজ্য৷
পরিসংখ্যান কি তা তখনই উপলব্ধি করা সম্ভব হবে যখন আমরা এ বিজ্ঞান সম্বন্ধে সম্যক জ্ঞান লাভ করব৷ পরিসংখ্যানকে সাধারণত সংখ্যাত্মক তথ্য এবং সংখ্যা নিয়ে গবেষণার বিজ্ঞান বলা হয়ে থাকে৷ কোন কোন পরিসংখ্যানবিদ পরিসংখ্যানকে সংখ্যান্তক তথ্য আবার কেউ কেউ একে সংখ্যাত্মক পদ্ধতি হিসেবে সংজ্ঞায়িত করেছেন৷
স্যখ্যাত্মক তথ্য অর্থে পরিসংখ্যান বলতে কোন ঘটনা বা বিষয়ের সংখ্যান্মক পরিমাপ বা তথ্যকে বুঝয়৷ যেমনঃ জন্মমৃত্যু দ্রব্যমূল্য মজুরি ইত্যাদি বৈশিষ্ট্যের সংখ্যাত্মক তথ্য দ্বারা এদের পরিসংখ্যান বুঝানো হয়৷ এরূপ কোন নির্দিষ্ট বৈশিষ্ট্য বা বিষয়ের সংখ্যাসূচক উপাত্তকে ঐ ঘটনা৷ পরিসংখ্যান বলে৷
এক্ষেত্রে পরিসংখ্যান শব্দটি বহুবচন অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে৷ একবচন পরিসংখ্যান বলতে নমুনাজমানকে বুঝায়৷ সমগ্রকের কোর বৈশিষ্ট্য পরিমান করার জন্য সমগ্রক হতে অর্থাৎ তথ্যবিশ্ব হতে নিয়মতান্ত্রিক উপায় সংগ্রহীত প্রতিনিধিত্বমূলক নমুনার ভিত্তিতে কোন বৈশিষ্ট্য পরিমাপ করার জন্য যে নির্দিষ্ট সংখ্যা গণনা করা হয় তাকে পরিসংখ্যান বা নমুনাজমান বলে৷
সুতারাং একসেট সংখ্যাকে সংক্ষেপে প্রকাশ করার জন্য যে নির্দিষ্ট সংখ্যা গণনা করা হয় তাকে পরিসংখ্যান বলে৷ যেমন নমুনা গড় পরিমিত ব্যবধান সংশ্লেষাষ্ক এক একটি পরিসংখ্যান৷ এ ধরনের একাধিক পরিসংখ্যানকে বহুবচনে পরিসংখ্যান বলে৷
সংখ্যাত্মক পদ্ধতি অর্থে পরিসংখ্যানকে নিয়মতান্ত্রিক উপায়ে সংখ্যাত্মক তথ্য সংগ্রহ সংঘবদ্ধকরণ উপস্থাপন ব্যাখ্যা ও বিশ্লেষণের বিজ্ঞান বলা হয়৷ অর্থাৎ পরিসংখ্যান এমন একটি বিজ্ঞান যার সাহায্যে সংখ্যা বিশ্লেষণ করে তথ্য উদঘাটন করা হয়৷
যেকোন একটি সংখ্যা পরিসংখ্যান কিনা?
পরিসংখ্যানের তথ্যকে সংখ্যায় প্রকাশ করতে হবে৷ আবার কোন বিচ্ছিন্ন সংখ্যাকেও পরিসংখ্যান বলা যাবে না৷ কতকগুলা সংখ্যা যদি কোন ঘটনার পরিমাট যন কতকগুলা পরিবারের শিশুর সংখ্যা প্রকাশ করে তবে তাদেরকে পরিসংখ্যান বলা হবে৷আবার কোন একটি বিচ্ছিন্ন সংখ্যাকে পরিসংখ্যান বলা যায় না৷ যেমন একজন ছাত্রের উচ্চতা ৬ ফুট বলক হলে এটি কোন পরিসংখ্যান হবে না৷ কিন্তু যদি বলা হয় যে একদল ছাত্রের উচ্চতার গড় ৬ ফুট তা হলে এটা একটি পরিসংখ্যান হবে৷ কারণ এটি একটি নির্দষ্ট বৈশিষ্ট্যধারী একসেট সংখ্যাকে সংক্ষেপে প্রকাশ করছে৷
আবার একসেট সাধারণ সংখ্যা যেমন ২,৩,৫,৬ ইত্যাদি সংখ্যাকে পরিসংখ্যান বলা হবে না৷ কিন্তু এই সংখ্যাগুলো যদি কয়েকটি পরিবারের শিশুর সংখ্যা বা অন্য কোন বৈশিষ্ট্যের পরিমাণ নির্দেশ করে তবে ঐ সংখ্যাগুলোকে পরিসংখ্যান বলা হবে৷ সুতরাং দেখা যাচ্ছে যে যেকোন সংখ্যাই পরিসংখ্যান নয়৷
পরিসংখ্যানের ব্যবহার?
প্রাচীনকলে রাষ্ট্রের বিভিন্ন সম্পদ আয় ব্যয় জনশক্তি ইত্যাদির হিসাব নিকাশের কাজে পরিসংখ্যান ব্যবহার করা হত৷ কিন্তু বর্তমান কালে যে কোন সংখ্যাত্মক গবেষণার কাজে পরিসংখ্যান ব্যবহার করা হয়৷কোন বিষয়ে অতীত ও বর্তমান তথ্যের ভিত্তিতে ভবিষ্যৎ ঘটনা প্রবাহের উপর আলোকপাত করার জন্য সংগৃহীত তথ্য উপস্থাপন ব্যাখ্যা ও বিশ্লেষণের কাজে পরিসংখ্যান নীতি ও পদ্ধতি প্রয়োগ করা হয়ে থাকে৷ বিভিন্ন রকম সামাজিক ও অর্থনৈতিক সমস্যার ব্যাখ্যা ও বিশ্লেষণের কাজে পরিসংখ্যান ব্যবহার করা হয়৷
প্রাকৃতিক বিজ্ঞান যেমন পদার্থবিদ্যা, রসায়ন, ভূ-তত্ত্ববিদ্যা জীববিদ্যা, জ্যোতির্বিদ্যা ইত্যাদি বিষয়ের গবেষণার ফলাফলের সঠিকতা নিরূপণে পরিসংখ্যান পদ্ধতি প্রয়োগ করা হয়৷ প্রশাসনিক কার্য পরিচালনা নীতি প্রণয়ন পরিকল্পনা গ্রহণ ইত্যাদি কাজে ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়৷
জনসম্পদ কর্মসংস্থান উৎপাদন কর ধার্য আয় ব্যয় আমদানি রপ্তানি মুদ্রা ও রাজস্ব ইত্যাদি জাতীয় সম্পদসমূহ হিসাব নিকাশের কাজে পরিসংখ্যান ব্যবহার করা হয়ে থাকে৷
ব্যবসা বাণিজ্য ও শিল্প ক্ষেত্রে এর ব্যবহার ক্রমেই প্রসারতা লাভ করছে বাণিজ্যিক ও অর্থলগ্নী প্রতিষ্ঠানের কর্মতৎপরতা বিশ্লেষণ মূল্যায়ন ও পরিকল্পনা যাচাইয়ের কাজে পরিসংখ্যান নীতি ও পদ্ধতি প্রয়োগ করা হয়৷
বিভিন্ন দ্রব্যের উৎপাদন চাহিদা যোগান বিনিয়োগ আমদানি রফতানি আয় ব্যয় ক্রয় বিক্রয় ইত্যাদি অবস্থার বিশ্লেষণের কাজে পরিসংখ্যান ব্যবহার করা হয়৷ অর্থনীতিতে চাহিদার বিশ্লেষণ কালীন সারির বিশ্লেষণ সূচক সংখ্যা ও মুদ্রা সংক্রান্ত হিসাব নিকাশের কাজে পরিসংখ্যান পদ্ধতি প্রয়োগ করা হয়৷
কৃষি সংক্রান্ত তথ্যাদি যেমন পশু সম্পদ কৃষি ক্ষেত্রে বিনিয়োগ ও উৎপাদন ইত্যাদির বিশ্লেষণে পরিসংখ্যান ব্যবহার করা হয়৷ মোট কথা সংখ্যাভিত্তিক যে কোন গবেষণার কাজ পরিসংখ্যান ব্যাপভাবে ব্যবহার করা হয়ে থাকে৷
পরিসংখ্যান বিজ্ঞান না কলা?
পরিসংখ্যান বিজ্ঞান না কলা এটি একটি বিতর্কের বিষয়৷ বিজ্ঞান হচ্ছে কোন বিষয়ে প্রণালীবদ্ধ আলোচনা পরীক্ষা ও গবেষণালব্ধ জ্ঞান আর কলা হচ্ছে বিজ্ঞানের কর্মফল অর্থাৎ বৈজ্ঞানিক জ্ঞানের প্রয়োগ উপস্থাপনা এবং প্রকাশ৷ বিজ্ঞান কারণ ও ফলাফলের সম্পর্ক অনুসন্ধান করে এবং তার ভিত্তিতে সাধারণীকরণে পৌছে৷বিজ্ঞান বস্তুনিষ্ঠভাবে ফটনাকে বিশ্লেষণ ও ব্যাখ্যা করে৷ অন্যদিকে নির্দিষ্ট লক্ষ্য অর্জনের উদ্দেশ্যে ঘটনাসমূহকে ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ করার দক্ষতা বা কৌশল হচ্ছে কলা৷ পরিসংখ্যান বিষয়টি নিজস্ব মতবাদ ও কার্যপ্রণালির উপর প্রতিষ্ঠাত৷ এটি কোন ঘটনা বা বিষয় সম্পর্কে সংখ্যাত্মক তথ্য সংগ্রহ বিশ্লেষণ ও ব্যাখ্যা করে এবং মন্তব্য প্রকাশ করে৷
আর এ কাজে গণিত শাস্ত্রের সাহায্য নিয়ে পরিসংখ্যানিক পদ্ধতির সাথে তুলনা করা চলে না তাই এটাকে প্রাকৃতিক বিজ্ঞানও বলা চলে না৷ পরিসংখ্যানিক পদ্ধতি প্রয়োগ করে কোন সিদ্ধান্তে উপনীত হওয়া যায় এবং সিদ্ধান্তের উপস্থাপন প্রকাশ কৌশল শিল্পের পর্যায়ভুক্ত৷
সুতরাং পরিসংখ্যানকে বিজ্ঞান ও কলা দুই-ই বলা যেতে পারে৷ তব৷ পরিসংখ্যানের কার্যক্ষেত্র ও পদ্ধতি এবং স্বকীয়তার দিক থেকে এটাকে একটি সামাজিক বিজ্ঞান হিসেবেও আখ্যায়িত করা যেতে পারে৷