স্পিনিং কাকে বলে

স্পিনিং (Spinning) কি?

প্রাথমিকভাবে স্পিনিং এর কথা বলতেই আমরা কটন অর্থাৎ তুলা থেকে সুতা তৈরি করাকে বুঝে থাকি। তবে স্পিনিং কথাটি ব্যাপক অর্থে ব্যবহার করা হয়। 

আরবি ভাষার কুতুম শব্দ থেকে কটন শব্দের আবির্ভাব। ইংরেজিতে যাকে কটন বলে আর বাংলায় তুলা বলা হয়। সুতা প্রস্তুতকরণ মিলসমূহের মধ্যে কাঁচামাল হিসাবে তুলা সবচেয়ে বেশি ব্যবহার করা হয়। 

আর তুলা থেকে সুতা প্রস্তুতকরণ হল স্পিনিং এর সাধারণ প্রচলিত একটি প্রক্রিয়া ও পদ্ধতি। ইয়ার্ন ম্যানুফ্যাকচারিং এর বাংলা অর্থ হল সুতা প্রস্তুতকরণ। আর এই সুতা প্রস্তুতকরণকে স্পিনিং ও বলা হয়। 

স্পিনিংকে বাংলায় বয়নও বলা হয়। তাছাড়া কৃত্রিম আঁশের ক্ষেত্রে বয়ন অর্থাৎ স্পিনিং অন্য অর্থে অর্থাৎ স্পিনিং সিস্টেম বা পদ্ধতি নামে পরিচিত। 

বেশিভাগ কৃত্রিম ফাইবারই ঘন থকথকে জেলির মত গলিত পদার্থ থেকে অত্যাধিক চাপে খুব সূক্ষ্ম অসংখ্য ছিদ্র বিশিষ্ট নজেলের মধ্য দিয়ে বের করে ফিলামেন্ট আকারে সুতা বা ইয়ার্ণ তৈরি করে। 

পরবর্তীতে এই ফিলামেন্টসমূহ ভিন্ন ভিন্ন পদ্ধতির মাধ্যমে শক্ত করে সংগ্রহ করা হয়। আর প্রাকৃতিক আঁশ থেকে সুতা পাকানো বা টুইস্টের প্রক্রিয়াকে স্পিনিং হিসাবে আখ্যায়িত করা হয়। পাশাপাশি কৃত্রিম ফাইবার তৈরির ক্ষেত্রে স্পিনিং ভিন্ন অর্থে ব্যবহৃত হয়।

স্পিনিং (Spinning) কাকে বলে?

স্পিনিং ইন্ডাস্ট্রিতে বিভিন্ন প্রকার টেক্সটাইল ফাইবার দ্বারা বিভিন্ন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে আঁশসমূহকে টুইস্ট প্রদান করে ব্যবহার উপযোগী প্রান্তহীন ন্যুনতম শক্তিসম্পন্ন সুতা প্রস্তুত করার প্রক্রিয়াকে স্পিনিং (Spinning) বলে। 
স্পিনিং
স্পিনিং

যেসব ফাইবারের মধ্যে সুতা তৈরির গুণাবলি বিদ্যমান থাকে সেসব ফাইবারকে টেক্সটাইল ফাইবার বলে। পৃথিবীতে অনেক ধরনের আঁশ রয়েছে কিন্তু টেক্সটাইল সুতা বা বস্ত্র তৈরির গুণাগুণ খুব অল্প সংখ্যক ফাইবারের মধ্যে বিদ্যমান রয়েছে।

আর আঁশের মধ্যে যেসব গুণাগুণ বিদ্যমান তার প্রধান হল দৈর্ঘ্য ও শক্তি। তবে কৃত্রিম আঁশের ক্ষেত্রে দৈর্ঘ্য কোন গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নয়। এটা যেকোন দৈর্ঘ্যের হতে পারে। আর ফিলামেন্ট ফাইবার সাধারণত অবিচ্ছিন্ন হয়ে থাকে।

স্পিনিং প্রক্রিয়া?

আমাদের দৈনন্দিন জীবনের সাথে টেক্সটাইলস্ শব্দটি ওতপ্রোতভাবে জড়িত আছে। কাজেই খুব সামান্য হলেও টেক্সটাইল সম্বন্ধে আমাদের প্রত্যেকের কিছু না কিছু জানা প্রয়োজন।

তাতে ব্যবহারকারীগণ অর্থাৎ আমরা কিছুটা হলেও লাভবান হব। কাপড় তৈরির জন্য সুতার প্রয়োজন হয়। আর এই সুতা তৈরির কাঁচামাল হিসেবে ফাইবারকে ব্যবহার করা হয়।

আমরা প্রাকৃতিকভাবে অনেক রকমের আঁশ দেখতে পাই। কিন্তু সব আঁশই টেক্সটাইল ফাইবার নয়। টেক্সটাইল ফাইবার হতে হলে আঁশের ন্যূনতম দৈর্ঘ্য, শক্তি, সুক্ষতা, নমনীয়তা, আদ্রতা ধারণক্ষমতা ও সুতা তৈরি গুণাবলি থাকতে হবে। 

আধুনিককালে প্রযুক্তির বিকাশের সাথে সাথে টেক্সটাইল ফাইবারের ও টেক্সটাইল সামগ্রীর উন্নতি হচ্ছে। যার কারণে ব্যবহারকারীদের কাছে টেক্সটাইল দ্রব্যাদি সহজলভ্য হচ্ছে। 

সম্পূর্ণ স্পিনিং পদ্ধতিকে কয়েকটি ভাগে ভাগ করা হয়। এর মধ্যে প্রাকৃতিক আঁশসমূহকে স্পিনিং করার জন্য ছোট দৈর্ঘ্যের আঁশসমূহকে ও বড় দৈর্ঘ্যের আঁশসমূহকে প্রক্রিয়াকরণের দিক থেকে আলাদা করা হয়ে থাকে। 

এছাড়াও কৃত্রিম আঁশসমূহকে ফিলামেন্ট আকারে উৎপাদনের জন্যও আলাদা পদ্ধতিতে স্পিনিং করা প্রয়োজন হয়। প্রাথমিক অবস্থায় কৃত্রিম ফাইবার ফিলামেন্ট আকারে পাওয়া যায়। 

যা পরবর্তীতে বিভিন্নভাবে আলাদা করা হয়। দীর্ঘ অবিচ্ছিন্ন ফাইবারকে ফিলামেন্ট বলা হয়। ফিলামেন্ট আবার দুইভাবে ব্যবহার করা হয়। একটি হল মনোফিলামেন্ট অপরটি হল মাল্টিফিলামেন্ট। 

যদি একক ভাবে একটি ফিলামেন্ট সুতা হিসেবে ব্যবহার করা হয় তবে তাকে মনোফিলামেন্ট বলে। আবার একাধিক ফিলামেন্টকে একত্রিতভাবে টুইস্ট বা পাক দিয়ে সুতা তৈরির ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হয় তখন তাকে মাল্টিফিলামেন্ট বলে। 

প্রাকৃতিকভাবে শুধু রেশম ফাইবারকেই ফিলামেন্ট আকারে পাওয়া যায়। কিন্তু কৃত্রিম উপায়ে তৈরি সকল ফাইবার রাসায়নিক পদার্থ থেকে উৎপত্তি হয়। প্রতিটি ফাইবারই স্পিনারেটের ছিদ্র দ্বারা লম্বা অবিচ্ছিন্নভাবে তৈরি হয়। 

অর্থাৎ কৃত্রিমভাবে তৈরি স্পিনারেট থেকে টেনে বের করা ফাইবারগুলোকে ফিলামেন্ট বলা হয়। চাহিদার প্রতি দৃষ্টি রেখে কিছু কিছু ফিলামেন্ট হিসেবে ফাইবারকে প্রয়োজনমতো কেটে ছোট ছোট টুকরা অর্থাৎ স্ট্যাপল আকারে নিয়ে সুতা বা ইর্য়ান তৈরি করা হয়। 

টেক্সটাইল ফাইবারের স্ট্যাপল লেংথ সাধারণত ১ সেন্টিমিটারের কম হয় না। স্ট্যাপল ফাইবারগুলো সাধারণত প্রাকৃতিক, কৃত্রিম ও ফিলামেন্ট হিসেবে পাওয়া যায়। 

সুতা তৈরি বা সুতা পাকানোর জন্য ফাইবারের দৈর্ঘ্য একটা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। প্রাকৃতিক সব ফাইবারই স্ট্যাপল আকারে পাওয়া যায়। শুধু প্রাকৃতিক রেশম ফাইবার ফিলামেন্ট আকারে পাওয়া যায়। 

প্রাকৃতিক যেসব ফাইবার পাওয়া যায় তা বিভিন্ন দৈর্ঘ্যের হয়। সাধারণত ফাইবারের দৈর্ঘ্যের উপর আঁশের গুণাগুণ অনেকাংশে নির্ভর করে থাকে। দৈর্ঘ্যে বড় আঁশ অপেক্ষাকৃত মসৃণ ও শক্ত হয়ে থাকে। 

আবার ছোট দৈর্ঘ্যের আঁশের সুতা তৈরির ক্ষমতা কম থাকে। সব প্রাকৃতিক আঁশসমূহকে দৈর্ঘ্যের দিক থেকে দুই শ্রেণীতে ভাগ করা যায়। ছোট দৈর্ঘ্যের আঁশসমূহকে শর্ট স্ট্যাপল বলে ও বড় দৈর্ঘ্যের আঁশসমূহকে লং স্ট্যাপল বলে। 

স্পিনিং পদ্ধতির সুবিধার জন্য শর্ট স্ট্যাপল আঁশসমূহের স্পিনিং পদ্ধতি ও লং সর্ট্যাপল আঁশসমূহের স্পিনিং পদ্ধতি কিছুটা ভিন্ন। আর ঠিক এজন্যই পরবর্তীতে প্রাকৃতিক আঁশসমূহ স্পিনিং পদ্ধতির দিক থেকে দুই শ্রেণীতে বিভক্ত করে স্পিনিং সিস্টেমকে দুই মেরুতে নিয়ে স্পিনিং পদ্ধতির ব্যাখ্যা দেয়া হয়েছে।

আবার কৃত্রিম আঁশসমূহকে ফিলামেন্ট থেকে স্ট্যাপল আকারে নিয়ে শর্ট স্ট্যাপল স্পিনিং এর মতো সুতা তৈরির জন্য প্রক্রিয়াকরণ করা হয়।

পরিশেষে বলা যায় স্পিনিং প্রক্রিয়ার মাধ্যমে আঁশসমূহকে টুইস্ট প্রদান করে ব্যবহার উপযোগী প্রান্তহীন ন্যুনতম শক্তিসম্পন্ন সুতা প্রস্তুত করার জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
Akash

প্রযুক্তির খবর, শিক্ষা ও ইন্সুরেন্স, ভিসার খবর, স্বাস্থ্য টিপস ও অনলাইনে আয় সম্পর্কিত তথ্যের বিরাট একটি প্ল্যাটফর্ম।

Post a Comment (0)
Previous Post Next Post