পর্তুগাল ভিসা পাওয়ার উপায় | পর্তুগাল যেতে কত টাকা লাগে
ইউরোপ মহাদেশের সুন্দর একটি দেশ পর্তুগাল।সারা বিশ্ব থেকে অসংখ্য লোক প্রতি বছর পর্তুগালে বিভিন্ন কাজের উদ্দেশ্যে এসে থাকেন। পর্তুগাল দেশটির প্রাকৃতিক সৌন্দর্য এবং এর ইতিহাস ঐতিহ্য বরাবরই সকলকে মুগ্ধ করে। পর্তুগালে যদি বৈধভাবে ভ্রমণ করতে হয় তাহলে অবশ্যই পর্তুগাল ভিসার প্রয়োজন হবে।
পর্তুগাল |
পর্তুগাল ভিসা ব্যতীত কোন ব্যক্তি বৈধভাবে পর্তুগাল ভ্রমণ করতে পারবেন না। তবে অনেকেই বলে থাকেন পর্তুগাল ভিসা পাওয়ার প্রক্রিয়া অনেকটা জটিল অর্থাৎ পর্তুগাল ভিসা কিভাবে করতে হয় সহজ প্রসেস সম্পর্কে অনেকেই জানেন না। তাই আজকের পোস্টটি পড়ার মাধ্যমে পর্তুগাল যাওয়ার সহজ উপায় বা কিভাবে পর্তুগাল ভিসা পাওয়া যায় সুস্পষ্ট ধারণা পেয়ে যাবেন।
পর্তুগাল ভিসা পাওয়ার উপায়?
পর্তুগালে কাজের বেতন অনেক বেশি হওয়ায় এবং সেখানে কাজ করার অনেক সুযোগ-সুবিধা থাকায় পর্তুগালে ওয়ার্ক পারমিট ভিসায় লোক নিয়োগ দিলেই পর্তুগাল যাওয়ার জন্য অনেকেই ভিসা আবেদন করে থাকেন।বাংলাদেশ থেকে পর্তুগালে যাওয়া অনেকটা জটিল একটি প্রক্রিয়া।কেননা ইউরোপের দেশগুলোতে যাওয়ার জন্য সবথেকে নিরাপদ উপায় হচ্ছে এম্বাসির মাধ্যমে ভিসা নেওয়া। কিন্তু বাংলাদেশে পর্তুগালের কোন ভিসা এম্বাসি নেই।
অর্থাৎ বাংলাদেশ থেকে যদি কেউ পর্তুগাল ওয়ার্ক পারমিট ভিসায় আবেদন করতে চান তাহলে তাকে সরাসরি অনলাইনের মাধ্যমে আবেদন করতে হবে। তবে অনলাইনের মাধ্যমে ভিসা আবেদন করে ভিসা হাতে পাওয়াটা অনেকটা জটিল একটি প্রক্রিয়া।
তাছাড়া কেউ চাইলে সরাসরি ভারতীয় এম্বাসি থেকে আবেদন করতে পারেন। নিচে কিভাবে এম্বাসি থেকে আবেদন করবেন তা তুলে ধরা হলোঃ
ধাপ ১ঃপর্তুগাল ভিসার জন্য আবেদন করতে হলে নিকটস্থ vfs global center এ চলে যেতে হবে। তারপরে প্রয়োজনীয় ডকুমেন্ট প্রদান করে নির্দিষ্ট ক্যাটাগরির কাজের ভিসার জন্য সরাসরি আবেদন করতে হবে। আবেদন করার পর আপনার সকল ডকুমেন্ট সেখানে স্ক্যান করে জমা রাখা হবে। তাছাড়া সেখানে ফিঙ্গারপ্রিন্ট, ছবি গ্রহণ ও সাক্ষাৎকার নেওয়া হবে।
ধাপ ২ঃআবেদন করা হয়ে গেলে ভিসা প্রসেসিং করার জন্য ৪৫ দিন থেকে সর্বোচ্চ ৯০ দিন পর্যন্ত সময় নেওয়া হবে।তবে এই সময়টাতে যদি কেউ বাংলাদেশে ফিরে আসতে চাই তাহলে তাকে পাসপোর্ট দিয়ে দেওয়া হবে তখন সে চাইলে দেশে ফিরে আসতে পারবে। কেননা আপনি ভারতীয় ভিজিট ভিসার মাধ্যমে ভারতে অবস্থান করছেন তাই সেখানে ৯০ দিনের বেশি কখনোই থাকতে পারবেন না।
ধাপ ৩ঃভিসা প্রসেসিং সম্পূর্ণ হয়ে গেলে ইমেইলের মাধ্যমে জানিয়ে দেওয়া হবে। পরবর্তীতে নব্বই দিন পর কেউ চাইলে পুনরায় ভারতে গিয়ে এম্বাসি থেকে ভিসা সংগ্রহ করতে পারবেন। এভাবে যারা এম্বাসি থেকে নিরাপদে ভিসা পেতে চান তারা এই পদ্ধতিটি অনুসরণ করতে পারেন।নিচে অনলাইনের মাধ্যমে কিভাবে পর্তুগাল ভিসার জন্য আবেদন করা যায় তা নিয়ে আলোচনা করা হলোঃ
অনলাইনে পর্তুগাল ভিসা আবেদন?
অনলাইনের মাধ্যমে পর্তুগাল ভিসার জন্য আবেদন করা যায়। যোগ্যতা ও দক্ষতা ভেদে যেকোনো ব্যক্তি চাইলে অনলাইনের মাধ্যমে আবেদন করতে পারবেন।- অনলাইনের মাধ্যমে আবেদন করতে হলে প্রথমে https://pt.indeed.com/m/ লিংকটি ব্যবহার করে উক্ত ওয়েবসাইটে চলে যেতে হবে।
- তারপরে আপনার দক্ষতা ও পছন্দের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ কাজের নাম লিখে সার্চ করতে হবে। তাহলে সেখানে বেশ কিছু কাজের তালিকা দেখতে পারবেন।
- আপনার পছন্দের চাকরিতে আবেদনের জন্য আপনার তথ্যবহুল সিভিটি সাবমিট করতে হবে। পরবর্তীতে যদি আপনার আবেদনটি গ্রহণযোগ্য হয়ে থাকে তাহলে ইমেইলের মাধ্যমে ম্যানপাওয়ার ও ভিসা সংক্রান্ত তথ্য প্রেরণ করা হবে।
- তারপরে ভারতের সরাসরি গিয়ে পর্তুগাল এমবাসির মাধ্যমে ভিসা প্রসেসিং সম্পূর্ণ করতে হবে।
পর্তুগাল টুরিস্ট ভিসা পাওয়ার উপায়?
পর্তুগাল ভিজিট ভিসা পেতে হলে ভারতের এম্বাসি থেকে সরাসরি আবেদন করতে হবে। বাংলাদেশ থেকে কোনভাবেই বৈধভাবে পর্তুগাল টুরিস্ট ভিসা পাওয়া যাবে না। তাছাড়া আপনি যদি অন্য কোন দেশের প্রবাসী হয়ে থাকেন সৌদি আরব, কাতার, দুবাই তাহলে সেখানে পর্তুগাল এম্বাসি থেকে ভিসা সংগ্রহ করতে পারবেন।সেখানে পর্তুগাল ভিজিট ভিসা পাওয়ার জন্য কিছু গুরুত্বপূর্ণ ডকুমেন্ট লাগবে। নিচে পর্তুগাল ভিজিট ভিসার জন্য যে সকল কাগজপত্র লাগবে তা উল্লেখ করা হলোঃ
- সর্বনিম্ন ৬ মাস মেয়াদী একটি ভ্যালিড পাসপোর্ট লাগবে।
- আবেদনপত্রের ফটোকপি লাগবে।
- ব্যাংক স্টেটমেন্ট লাগবে এবং ব্যাংকে সর্বনিম্ন তিন থেকে চার লক্ষ টাকা থাকা লাগবে।
- ট্রাভেল মেডিকেল ইন্সুরেন্স লাগবে।
- ব্যাংক সলভেন্সি সার্টিফিকেট লাগবে।
- আয়ের উৎসের বর্ণনা দিতে হবে।
- পর্তুগাল যাওয়ার কারণ ব্যাখ্যা করে একটি কভার লেটার দিতে হবে ও এয়ার টিকিটের কপি দিতে হবে।
- হোটেল বুকিং কপি দিতে হবে।
- ব্যবসার জন্য যেতে চাইলে ট্রেড লাইসেন্স ও ভিজিটিং কার্ড দিতে হবে।
পর্তুগাল ভিসা পেতে কি কি লাগে?
পর্তুগাল কাজের ভিসা বা পর্তুগাল ওয়ার্ক পারমিট ভিসা পেতে কিছু কাগজপত্র বা ডকুমেন্টের প্রয়োজন হয়ে থাকে।নিচে পর্তুগাল ওয়ার্ক পারমিট ভিসা করার জন্য প্রয়োজনীয় যে সকল ডকুমেন্ট লাগবে তা উল্লেখ করা হলোঃ- সর্বনিম্ন দুই বছর মেয়াদ সম্পূর্ণ একটি বৈধ পাসপোর্ট লাগবে।
- নিজের যোগ্যতা ও দক্ষতা অনুযায়ী সিভি লাগবে।
- শিক্ষাগত যোগ্যতা অবশ্যই থাকতে হবে এবং যারা ইংরেজি ও পর্তুগিজ ভাষায় পারদর্শি তাদেরকে বেশি অগ্রাধিকার দেওয়া হবে।
- ব্যাংক স্টেটমেন্ট দরকার হবে।
বাংলাদেশে পর্তুগাল ভিসা এজেন্সি |পর্তুগাল এম্বাসি বাংলাদেশ
অনেকেই বাংলাদেশ থেকে পর্তুগাল যাওয়ার জন্য এমব্যাসির সন্ধান করে থাকেন। অর্থাৎ পর্তুগাল এম্বাসি থেকে সরাসরি কাগজপত্র জমা দেওয়ার মাধ্যমে পর্তুগাল ভিসা আবেদন করতে চান। কিন্তু বাংলাদেশে পর্তুগালের কোন ভিসা এম্বাসি এখনো চালু হয়নি। তবে কেউ যদি চায় তাহলে ভারত থেকে পর্তুগালের ভিসা এম্বাসি vfs global থেকে পর্তুগাল ভিসার জন্য আবেদন করতে পারবেন।
পর্তুগাল যেতে কত টাকা লাগে | পর্তুগাল ভিসা কত টাকা
পর্তুগাল যাওয়ার জন্য যেহেতু অনেক ধরনের ভিসা পাওয়া যায় তাই ভিসার ধরণভেদে খরচের পরিমাণ কম বেশি হয়ে থাকে। তবে কোন এজেন্সির মাধ্যমে যদি কেউ পর্তুগাল ভিসা করে থাকেন তাহলে তার মোট খরচ হতে পারে ৮ থেকে ১০ লক্ষ টাকার মত।পর্তুগাল ভিসা |
তবে যদি কেউ সরকারিভাবে পর্তুগাল যেতে চান তাহলে তার খরচ আসতে পারে ছয় থেকে সাত লক্ষ টাকার মতো। তবে কখনোই কোন দালালের হাত দিয়ে ভিসা করবেন না তাহলে পরবর্তীতে ভোগান্তির কারণ হতে পারে।
পর্তুগালে কোন কাজের চাহিদা বেশি?
পর্তুগালে কোন কাজের চাহিদা বেশি বা কোন কাজগুলোর উপরে দক্ষতা থাকলে পর্তুগালে গিয়ে খুব সহজেই কাজ পাওয়া যাবে এই নিয়ে অনেকের জানার আগ্রহ রয়েছে। বর্তমানে পর্তুগালে কনস্ট্রাকশন কোম্পানি, ফুড প্যাকেজিং, ইলেকট্রিক্যাল, হোটেল কর্মী, সিকিউরিটি কর্মী, ক্লিনিং ম্যান, কেয়ারিং ম্যান, গবাদি পশুপালন, এই সকল কাজগুলোর প্রচুর পরিমাণে চাহিদা রয়েছে।এই কাজগুলোতে বেতন অনেক বেশি হয়ে থাকে তাই যদি কেউ পর্তুগাল যেতে চান তাহলে অবশ্যই এই কাজগুলোর মধ্য থেকে যেকোনো একটিকে টার্গেট করতে পারেন।
পর্তুগালে কাজের বেতন কত?
পর্তুগালে বর্তমানে কাজের সর্বনিম্ন বেতন হচ্ছে ৯০০ ইউরো। তবে পর্তুগালে যারা ইলেকট্রিক্যাল কাজ করে থাকেন ও ভালো রেস্টুরেন্টে কাজ পেয়ে থাকেন তাদের মাসিক সর্বনিম্ন বেতন হচ্ছে ১২০০ থেকে ১৪০০ ইউরো।যা সাধারণত বাংলাদেশি টাকায় ১ লাখ ৩০ হাজার থেকে ১ লাখ ৫০ হাজার টাকার মধ্যে। তাছাড়া এখানে মূল কাজের সাথে অন্যান্য কাজ ওভারটাইমে করার সুযোগ রয়েছে। যার ফলে পর্তুগালে কাজের বেতন অনেক বেশি হয়ে থাকে।
শেষ কথা, আশা করি পোস্টটি যারা মনোযোগ সহকারে পড়েছেন তারা পর্তুগাল যাওয়ার সহজ উপায়, পর্তুগাল ভিসার দাম কত ও পর্তুগালে কোন কাজের চাহিদা বেশি এই বিষয়ে মোটামুটি ধারণা পেয়েছেন। তারপরে যদি এই নিয়ে কোন ধরনের প্রশ্ন থেকে থাকে তাহলে অবশ্যই কমেন্ট করে জানাতে পারেন। ধন্যবাদ।