পাঠাগার স্থাপনের জন্য আবেদন করার নিয়ম
পাঠাগার স্থাপনের জন্য আবেদন করা একটি মানবহিতৈষী কাজ। পাঠাগার সবারই ব্যাক্তি জীবনে জ্ঞান অর্জনের এক পবিত্রতম স্থান। নির্দিষ্ট জায়গা এবং প্রেক্ষাপট বিবেচনায় পাঠাগার স্থাপনের জন্য আবেদন করতে হয়। যেমন স্কুলের জন্য পাঠাগার চাইলে প্রধান শিক্ষকের কাছে আবেদন করতে হবে, উপজেলায় চাইলে চেয়ারম্যানের নিকট অথবা যেকোনো ব্যাক্তি বা প্রতিষ্ঠানের কাছে চাইলে তার বরাবর আবেদন করতে হবে। এই লেখনীতে পাঠাগার স্থাপনের জন্য আবেদন কোথায় এবং কিভাবে করবেন তা বিশদভাবে আলোচনা করা হলো।
স্কুলে পাঠাগার স্থাপনের জন্য আবেদন
স্কুলে পাঠাগার থাকলে তা শিক্ষার্থীদের জ্ঞান সমৃদ্ধকরণে বেশ ভালো ভূমিকা রাখে। বিশেষভাবে দরিদ্র ও মেধাবী শিক্ষার্থীদের জন্য বিদ্যালয়ের নিজস্ব একটি পাঠাগার তাদের জ্ঞানার্জনের পথকে সহজ করে তোলে।
শিক্ষার গতি বাড়াতে স্কুলে পাঠাগার স্থাপনের জন্য আবেদন যেভাবে প্রধান শিক্ষকের কাছে লিখতে হবে তার একটি নমুনা নিচে দেওয়া হলো।
তারিখ: ১২/০২/২০২৩
বরারর,
প্রধান শিক্ষক
রওশনআরা মেমোরিয়াল হাই স্কুল, কলমাকান্দা, নেত্রকোনা
বিষয়ঃ স্কুলে পাঠাগার স্থাপনের জন্য আবেদন।
মহোদয়,
যথাবিহিত সম্মান প্রদর্শনপূর্বক নিবেদন এই যে, আমরা আপনার বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী। আমরা লক্ষ্য করেছি, আমাদের আশে-পাশের বিদ্যালয়গুলোর নিজস্ব পাঠাগার রয়েছে। সেই সমস্ত বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা গবেষণা ও জ্ঞান চর্চায় বেশ উন্নতির দিকে অগ্রসর হচ্ছে প্রতিনিয়ত। তাদের শিক্ষার বিকাশে পাঠাগার থেকে অনেক সুবিধা দিচ্ছে। আমাদের সুন্দর বিদ্যালয়ে যদি একটি পাঠাগার স্থাপন করা হয়, যেখানে শ্রেণি সিলেবাসের বইগুলোর পাশাপাশি বিষয়ভিত্তিক আলাদা জ্ঞান-বিজ্ঞানের বই থাকবে, তাহলে আমরাও গবেষণা ও জ্ঞানচর্চায় আপনার বিদ্যালয়ের সুনাম বৃদ্ধি ও মেধা তালিকায় অবদান রাখতে পারতাম।
অতএব, মহোদয়ের সমীপে দশম শ্রেণির সকল শাখার শিক্ষার্থীদের বিনীত নিবেদন এই যে, আমাদের শিক্ষার উন্নতি এবং প্রতিভা বিকাশের কথা বিবেচনা করে বিদ্যালয়ে একটি পাঠাগার স্থাপন করে আমাদেরকে বাধিত করবেন।
নিবেদক,
আপনার একান্ত অনুগত ছাত্রবৃন্দ
শ্রেণিঃ দশম
পাঠাগার স্থাপনের জন্য আবেদন উপজেলা চেয়ারম্যান
এলাকায় পাঠাগার স্থাপনের জন্য উপজেলা চেয়ারম্যানের নিকট একটি আবেদন পত্র লিখো।
তারিখঃ ১০ ই ফেব্রুয়ারি ২০২১
বরাবর
উপজেলা চেয়ারম্যান
ঘাটাইল উপজেলা পরিষদ
টাঙ্গাইল
বিষয়ঃ ঘাটাইল চানপাড়ায় একটি পাঠাগার স্থাপনের জন্য আবেদন।
মহোদয়,
যথাবিহীত সম্মানপূর্বক বিনীত নিবেদন এই যে, আমাদের ঘাটাইল চানপাড়া হাইস্কুল ও প্রাইমারি স্কুলের ছাত্র ছাত্রী সহ মোট জনসংখ্যা প্রায় দুই হাজারের ওপরে। কিন্তু দুর্ভাগ্যের বিষয় হচ্ছে, এখানে কোন পাঠাগারই নেই। ছাত্র-ছাত্রীদের জ্ঞানচর্চা, মানসগঠন ও সৃজনশীল চেতনা বিকাশে একটি পাঠাগার তাই খুবই প্রয়োজন। এ ছাড়া এলাকায় দৈনিক পত্রিকা ও সাময়িক পত্র-পত্রিকা পড়ারও বিশেষ কোনো ব্যবস্থা নেই। এখানে একটি পাঠাগার হলে তরুণরাও বই পড়ে তাদের অলস সময়কে জ্ঞানচর্চার মতো প্রয়োজনীয় কাজে ব্যয় করতে পারবে। গ্রামের জ্ঞান পিপাসু মানুষরা একটি পাঠাগার পেলে ভীষণ খুশি হবে।
অতএব, ঘাটাইল চানপাড়ার সব বয়সের মানুষের উপকারের কথা বিবেচনা করে অতিসত্বর এখানে একটি পাঠাগার স্থাপনের ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য বিশেষভাবে অনুরোধ জানাচ্ছি।
নিবেদক
ঘটাইল চানপাড়ার জনসাধারণের পক্ষে
আলম শাহীন
পাঠাগার স্থাপনের জন্য আবেদন প্রধান শিক্ষকের কাছে
কেউ যদি স্কুলে পাঠাগার স্থাপনের জন্য প্রধান শিক্ষকের নিকট সুন্দর মতো গুছিয়ে আবেদন করতে চাও তাহলে অবশ্যই তোমাকে মনযোগ সহকারে নিচের পাঠাগার স্থাপনের জন্য প্রধান শিক্ষকের কাছে আবেদনটি পড়তে হবে।
তারিখ: ১৫/০২/২০২৩
বরারর,
প্রধান শিক্ষক
রওশনআরা মেমোরিয়াল হাই স্কুল, কলমাকান্দা, নেত্রকোনা
বিষয়ঃ স্কুলে পাঠাগার স্থাপনের জন্য আবেদন।
মহোদয়,
যথাবিহিত সম্মান প্রদর্শনপূর্বক নিবেদন এই যে, আমরা আপনার বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী। আমরা লক্ষ্য করেছি, আমাদের আশে-পাশের বিদ্যালয়গুলোর নিজস্ব পাঠাগার রয়েছে। সেই সমস্ত বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা গবেষণা ও জ্ঞান চর্চায় বেশ উন্নতির দিকে অগ্রসর হচ্ছে প্রতিনিয়ত। তাদের শিক্ষার বিকাশে পাঠাগার থেকে অনেক সুবিধা দিচ্ছে। আমাদের সুন্দর বিদ্যালয়ে যদি একটি পাঠাগার স্থাপন করা হয়, যেখানে শ্রেণি সিলেবাসের বইগুলোর পাশাপাশি বিষয়ভিত্তিক আলাদা জ্ঞান-বিজ্ঞানের বই থাকবে, তাহলে আমরাও গবেষণা ও জ্ঞানচর্চায় আপনার বিদ্যালয়ের সুনাম বৃদ্ধি ও মেধা তালিকায় অবদান রাখতে পারতাম।
অতএব, মহোদয়ের সমীপে দশম শ্রেণির সকল শাখার শিক্ষার্থীদের বিনীত নিবেদন এই যে, আমাদের শিক্ষার উন্নতি এবং প্রতিভা বিকাশের কথা বিবেচনা করে বিদ্যালয়ে একটি পাঠাগার স্থাপন করে আমাদেরকে বাধিত করবেন।
নিবেদক,
আপনার একান্ত অনুগত ছাত্রবৃন্দ
শ্রেণিঃ দশম
কলেজে পাঠাগার স্থাপনের জন্য আবেদন
তারিখ: ১২/০২/২০২৩
বরারর,
অধ্যক্ষ
রওশনআরা মেমোরিয়াল স্কুল এন্ড কলেজ, কলমাকান্দা, নেত্রকোনা
বিষয়ঃ কলেজে পাঠাগার স্থাপনের জন্য আবেদন।
মহোদয়,
যথাবিহিত সম্মান প্রদর্শনপূর্বক নিবেদন এই যে, আমরা আপনার কলেজের দ্বাদশ শ্রেণী ২য় বর্ষের বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী। আমরা লক্ষ্য করেছি, আমাদের আশে-পাশের কলেজগুলোর নিজস্ব পাঠাগার রয়েছে। সেই সমস্ত কলেজের শিক্ষার্থীরা গবেষণা ও জ্ঞান চর্চায় বেশ উন্নতির দিকে অগ্রসর হচ্ছে প্রতিনিয়ত। তাদের শিক্ষার বিকাশে পাঠাগার থেকে অনেক সুবিধা দিচ্ছে। আমাদের সুন্দর কলেজে যদি একটি পাঠাগার স্থাপন করা হয়, যেখানে শ্রেণি সিলেবাসের বইগুলোর পাশাপাশি বিষয়ভিত্তিক আলাদা জ্ঞান-বিজ্ঞানের বই থাকবে, তাহলে আমরাও গবেষণা ও জ্ঞানচর্চায় আপনার কলেজের সুনাম বৃদ্ধি ও মেধা তালিকায় অবদান রাখতে পারতাম।
অতএব, মহোদয়ের সমীপে ইন্ শ্রেণির সকল শাখার শিক্ষার্থীদের বিনীত নিবেদন এই যে, আমাদের শিক্ষার উন্নতি এবং প্রতিভা বিকাশের কথা বিবেচনা করে কলেজে একটি পাঠাগার স্থাপন করে আমাদেরকে বাধিত করবেন।
নিবেদক,
আপনার একান্ত অনুগত ছাত্রবৃন্দ
শ্রেণিঃ দ্বাদশ
বিভাগঃ বিজ্ঞান
পাঠাগার স্থাপনের জন্য আর্থিক সাহায্য চেয়ে আবেদন
১১ই জানুয়ারি ২০১৮
বরাবর
জেলা প্রশাসক
যশোর
বিষয় : পাঠাগার স্থাপনের জন্য আর্থিক সহায়তার আবেদন।
জনাব,
সবিনয় নিবেদন এই যে, যশোর জেলার ফুলপুর থানার একটি প্রান্তিক গ্রাম চানপুর। এ গ্রামে বই পড়ার মতো অনেক শিক্ষিত মানুষের বসবাস। এখানে ছেলে ও মেয়েদের শিক্ষার জন্যে আলাদা দুটি উচ্চ বিদ্যালয় রয়েছে। প্রতি বছরই দুটি বিদ্যালয় দুটো থেকে বহু ছেলে-মেয়ে পাশ করে বের হচ্ছে। একটি নৈশ বিদ্যালয় ও দু'টি প্রাথমিক বিদ্যালয় গ্রামটির শিক্ষার আলো বিতরণ করছে বলে এলাকায় মানুষের সাংস্কৃতিক উন্নয়ন ঘটেছে। তবে গ্রামটিতে বর্তমানে একটি সাধারণ পাঠাগারের অভাব ভীষণ প্রয়োজন হয়ে উঠেছে। তবে এলাকাবাসীর পক্ষে অর্থ খরচ করে পাঠাগার স্থাপন করা সম্ভব হচ্ছে না।
অতএব, জনাবের কাছে আকুল আবেদন এই যে, আমাদের গ্রামের জনসাধারণের স্বার্থে একটি সাধারণ পাঠাগার স্থাপনের ব্যবস্থা করে একটি উচ্চশিক্ষিত সমাজ গড়ার সুযোগদানে এগিয়ে আসবেন।
নিবেদক
চানপুর গ্রামবাসীর পক্ষে,
১. মাহবুবুর রহমান
২. ইসলাম উদ্দিন
৩. আব্দুর রহমান
পাঠাগার স্থাপনের প্রয়োজনীয়তা
পাঠাগার শব্দের আরেক অর্থ গ্রন্থগার। এখানে নদীর স্রোতের মতো জ্ঞান থাকে, গ্রন্থ থাকে, বই থাকে। পাঠাগার স্থাপনের প্রয়োজনীয়তা বর্ণনা করে শেষ করা যাবে না তবুও কিছু পয়েন্ট নিচে আলোকপাত করা হলো,
★ স্কুল-কলেজ বা গ্রাম-উপজেলা পর্যায়ের পাঠাগারে যদি একাডেমিক বইগুলোর পাশাপাশি বিষয়ভিত্তিক নানা ধরণের জ্ঞান-বিজ্ঞানের বই থাকে, তবে শিক্ষার্থী ও এলাকাবাসী তাদের জ্ঞান চর্চায় বেশ আনন্দবোধ করবে। তাদের মধ্যে গবেষণা ও সৃজনশীলতা বৃদ্ধি পাবে।
★লাইব্রেরী/পাঠাগার হাসপাতালের চেয়ে কম উপকারী নয় কেননা আমাদের শিক্ষার বর্তমান অবস্থায় লাইব্রেরি হচ্ছে এক রকম মানসিক হাসপাতাল। সবাই জানি মানুষের মনে রয়েছে অনন্ত জিজ্ঞাসা, অসীম কৌতূহল। মানুষের এই অনন্ত জিজ্ঞাসা, অন্তহীন জ্ঞান ধরে রাখে বইয়ের পাতাগুলো আর বইতো সংগৃহীত থাকে পাঠাগারে।
★ প্রতিটা সমাজে যেমন ধর্মীয় উপাসনালয়, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, হাসপাতাল দরকার তেমনি পাঠাগারের প্রয়োজনীয়তাও রয়েছে। গ্রন্থাগার মানুষের বয়স, রুচি ও চাহিদা অনুযায়ী বই সরবরাহ করে থাকে। আর তাই সচেতন মানুষ মাত্রই তার আশে পাশে পাঠাগারের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেন।
★ পৃথিবীর যত শ্রেষ্ঠ মনীষী আছেন তাদের সবাই জীবনের একটা লম্বা সময় পাঠাগারে কাটিয়েছেন। সাহিত্য শিল্প, বিজ্ঞান, সংস্কৃতিসহ সব ধরনের জ্ঞানের আধার হতে পারে একটি গ্রন্থাগার।
★ পাঠাগার একটি জাতির সার্বিক বিকাশ ও উন্নতির মানদন্ড হিসেবে বিবেচিত হয়। বই পড়ার অভ্যাস গড়ে তোলা ছাড়া একজন মানুষের ভেতর জাতীয় চেতনার জাগরণ হয় না। পৃথিবীর বহুদেশ পাঠকের চাহিদা পূরণের জন্য গড়ে তুলেছে অগণিত গ্রন্থাগার।
★ শিক্ষার আলো বঞ্চিত কোনো জাতি কখনোই পৃথিবীর বুকে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পারেনি। তাই পাঠাগারকে শিক্ষার বাতিঘর বলা হয়। পাঠাগার ছাড়া কোনো সমাজ বা রাষ্ট্র তার নাগরিককে পরিপূর্ণ শিক্ষার অধিকার কখনোই সুনিশ্চিত করতে পারে না।
★ সবশেষে বলবো অনেকেরই বই পড়ার তীব্র ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও টাকার অভাবে বই কিনতে পারে না।তাই পাঠাগারের প্রয়োজনীয়তা প্রতিটি সমাজে অনিবার্য।
শেষকথা
পাঠাগার স্থাপনের জন্য আবেদন এর অনেকগুলো পদ্ধতি আপনারা এই লেখনীতে দেখতে পেয়েছেন। আশা করি এই অনুযায়ী আবেদন করলে আপনাদের আবেদনটি সঠিক হবে।