চিয়া বীজ খাওয়ার নিয়ম।চিয়া বীজ কোথায় পাওয়া যায়

 

চিয়া বীজ খাওয়ার নিয়ম

স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত পুষ্টি উপাদান সমৃদ্ধ একটি বীজ চিয়া সিড, যা সুপার ফুড হিসেবে পরিচিত। এটি আমাদের কাছে অনেকটাই অপরিচিত একটি বীজ। তবে সম্প্রতি বিশ্বব্যাপী এটি সর্বাধিক পুষ্টি সমৃদ্ধ ও স্বাস্থ্যকর খাবারের মধ্যে স্থান পেয়েছে। চিয়া বীজের পুষ্টি গুনাগুন মস্তিষ্ক এবং দেহে প্রচুর সুবিধা দেয়। এক গবেষণায়, চিয়া বীজের দৈনন্দিন ব্যবহার থেকে প্রাপ্ত স্বাস্থ্যগত সুবিধার বিস্তৃত পরিসর দেখা গেছে। তাই শারীরিক সুস্থতার জন্য এবং শরীরকে ফিট রাখতে নিয়মিত সুপার ফুড চিয়া সীড/চিয়া বীজ খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলুন। 


চিয়া বীজ কি?


"চিয়া বীজ" চিয়া সিড নামে পরিচিত, যা অত্যন্ত পুষ্টি সমৃদ্ধ একটি খাবার। কালো রঙের ছোট আকৃতির এই বিজগুলোতে এমন কিছু পুষ্টি উপাদান রয়েছে, যেগুলো আমাদের মস্তিষ্ক ও দেহকে চাঙ্গা রাখতে সহায়তা করে। আমরা অনেকেই চিয়া বীজ সম্পর্কে জানিনা। এগুলো দেখতে অনেকটাই সরিষার দানার মত। আর গায়ের রং কালো। 


চিয়া বীজের পুষ্টি উপাদান কি কি?


স্বাস্থ্যকর ব্রেকফাস্ট এর তালিকায় নতুন যোগ হওয়া চিয়া সিডস এ রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ওমেগা৩ ফ্যাটি অ্যাসিড এবং ফাইবার। সাথে আরো রয়েছে শর্করা, ম্যাঙ্গানিজ, ফসফরাস, ক্যালসিয়াম, দস্তা, তামা, পটাশিয়াম, আলফা, লিনোলিক এসিড, আলফা লিনোলেনিক, ভিটামিন এ, ভিটামিন বি, ভিটামিন ই, ভিটামিন ডি, সালফার, আইরন, আয়োডিন, ম্যাগনেসিয়াম, নিয়াসিন, থায়ামিনসহ বিভিন্ন খনিজ উপাদান ও এন্টিঅক্সিডেন্ট। যেগুলো স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত কার্যকরী। 


বিশেষজ্ঞদের মতে– ২৮ গ্রাম চিয়া বীজ এ থাকে, ১১ গ্রাম ফাইবার, ৪ গ্রাম প্রোটিন,৯ গ্রাম ফ্যাট। সেই সাথে ক্যালসিয়ামের পরিমাণ থাকে ১৮ শতাংশ, ম্যাগনেসিয়াম থাকে ৩০ শতাংশ, ম্যাঙ্গানিজ ৩০ শতাংশ, ফসফরাস ২৭ শতাংশ, কার্বোহাইড্রেট প্রায় ০৩ গ্রাম, জিংক ০১ মিলিগ্রাম, তামা ০১ মিলিগ্রাম, পটাশিয়াম ৮ মিলিগ্রাম, নায়াসিন, থায়ামিন ও ভিটামিন বি২ এনার্জি প্রায় ১৩৭ ক্যালোরি। যা ব্যক্তির শরীরে প্রচুর পরিমাণে শক্তি সরবরাহ করে এবং পানির অভাব পূরণে সহায়তা করে।



অন্য পোস্টঃভিটামিন ই ক্যাপসুল দিয়ে মুখের দাড়ি গজানোর উপায় 

চিয়া সিডের পুষ্টি গুনাগুন


চিয়া বীজ নামক এই খাদ্যটি এতটাই পুষ্টি সমৃদ্ধ যে এটি পরীক্ষায় এটা প্রমাণিত হয়েছে, দুধের চাইতে পাঁচ গুণ বেশি ক্যালসিয়াম রয়েছে এতে। শুধু ক্যালসিয়াম নয় পাশাপাশি কমলার চেয়ে ৭ গুণ বেশি ভিটামিন সি রয়েছে, কলার চেয়ে দ্বিগুণ পটাশিয়াম রয়েছে, পালং শাকের চেয়ে তিনগুণ বেশি আয়রন রয়েছে, সেই সাথে শ্যামন মাছের থেকে আট গুণ বেশি ওমেগা-৩ রয়েছে। আর এজন্যই এটি বর্তমানে সুপার ফুড হওয়ার যোগ্যতা রাখে। 


চিয়া বীজের উপকারিতা



চিয়া বীজের উপকার বলে শেষ করার মত নয়। কারণ বছরের পর বছর ধরে, ফ্লেক্সসিড বা শন বীজের বিপরীতে চিয়া বীজ ধীরে ধীরে তাদের স্বাস্থ্য এবং পুষ্টির মূল্যের উপর ভিত্তি করে জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে। বিভিন্ন গবেষণার প্রমাণিত— এতে থাকা পুষ্টি উপাদান গুলো শরীরের নানা সমস্যার সমাধান দিয়ে থাকে। চলুন জেনে নেই চিয়া বীজের সুবিধা কি কি।

  • ওজন কমাতে ভূমিকা রাখে

  • শরীরের হার শক্তিশালী করে

  • কর্ম ক্ষমতা এবং শক্তি বৃদ্ধি হয়

  • প্রোটিনের চাহিদা সম্পূর্ণরূপে পূরণ করে

  • হাঁটুর ব্যথা ও অন্যান্য জয়েন্টের ব্যথা দূর করে

  • শরীর থেকে বিষাক্ত পদার্থ বের করে দিতে পারে

  • নখ, ত্বক ও চুল ভালো রাখে

  • হজম শক্তি বৃদ্ধিতে সহায়তা করে

  • মলাশয় পরিষ্কার রাখে

  • ভালো ঘুমে সহায়ক ভূমিকা পালন করে

  • ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখে

  • শরীরে এলার্জির পাশাপাশি স্ট্যামিনা বৃদ্ধি করে

  • ব্লাড প্রেসার ও কোলেস্টেরল কমায়

  • ইমিউন সিস্টেমকে স্ট্রং রাখে

  • ব্লাড সুগার লেভেল নরমাল রাখে

  • শরীর এবং মস্তিষ্ককে সুস্থ রাখতে সহায়তা করে। 



চিয়া বীজের অপকারিতা


প্রত্যেকটি জিনিসের উপকারিতার পাশাপাশি অপকারিতাও থেকে থাকে। তাই চিয়া সিডের বেশ কিছু ক্ষতিকর দিকগুলো সম্পর্কে জানা জরুরী। সেগুলো হলো:

  • চিয়া সিডস প্রস্টেট ক্যান্সার ও স্তন ক্যান্সারকে বাড়িয়ে তুলতে পারে

  • এটি অতিরিক্ত খাওয়ার ফলে পেটের সমস্যা হয়।

  • চিয়া বিজ অতিরিক্ত খেলে রক্তচাপ বেশি কমে যায়, ডায়াবেটিসও নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে আসে

  • আবার এলার্জিজনিত সমস্যা দেখা দেয়

  • মাঝে মাঝে শরীর ফুলে যায় আবার বাতের ব্যথা দেখা দেয়।

  • পরিমাণের চাইতে অতিরিক্ত চিয়া বীজ খেলে শরীরের ওজন প্রয়োজনের তুলনায় অনেক বেশি কমে যায়। 

যেহেতু অতিরিক্ত চিয়া স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর তাই এটি পরিমিত খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে। 


চিয়া বীজ/চিয়া সিড খাওয়ার নিয়ম



স্থানভেদের এই বীজটি খাওয়ার নিয়ম ভিন্ন ভিন্ন হয়ে থাকে। তবে ছোট ও বড়দের খাবার জন্য আলাদা আলাদা নিয়ম আছে। 



বাচ্চাদের চিয়া সিড খাওয়ার নিয়ম

 


সময়: প্রতিদিন সকালে খালি পেটে অথবা রাতে ঘুমানোর পূর্বে। 

সেবন বিধি: কুসুম গরম পানিতে ২০ থেকে ৩০ মিনিট ভিজিয়ে রেখে পরবর্তীতে ফিল্টার করে অথবা ফিল্টার না করে সম্পূর্ণ পানি পান করুন। 



বড়দের চিয়া সিড খাওয়ার নিয়ম



সময়: সকাল এবং ঘুমানোর পূর্ব মুহূর্ত

সেবন বিধি: হালকা কুসুম গরম পানিতে দুই থেকে চার চামচ বীজ মিশিয়ে ফিল্টার করে অথবা ফিল্টার না করে খাওয়া। 


এর বাইরে আরো বেশকিছু নিয়ম রয়েছে যেগুলো বৃহত্তম স্বাস্থ্য সুবিধা পাওয়ার জন্য অত্যন্ত কার্যকরী। সেসব হলো: 

  • রাতে ঘুমানোর আগে এক গ্লাস পানির মধ্যে দুই চা চামচ চিয়া সীড ও দুই চামচ লেবুর রস মিশিয়ে খাওয়া। এতে করে দ্রুত ওজন কমবে এবং শরীর থাকবে ফিট। কিন্তু হ্যাঁ অবশ্যই খাবার তিরিস মিনিট আগে নরমাল পানিতে এটা ভিজিয়ে রাখতে হবে।

  • সকালবেলা এক গ্লাস পানিতে এক চা চামচ পরিমাণ সিয়া সীড মিশিয়ে আধা ঘন্টা সময় রেখে দিয়ে খালি পেটে পান করলেও বেশ ভালো ফল পাওয়া যায়। সাদ ও ঘ্রাণহীন তাই রুটি অথবা বিস্কুটের সাথেও সেবন করা যায়। 

  • যারা সুখ খেতে পছন্দ করেন তাদের জন্য এই চিয়া সিড অত্যন্ত কার্যকরী একটি শস্য উপাদান। কারণ এগুলো দিয়ে স্যুপ রান্না করা যায়।

  • চিয়া বীজের সাথে ওটমিল, দই এ জাতীয় জিনিস মিশিয়ে খেলে দারুণ ফল পাওয়া যায়। 

  • সেই সাথে ডাবের পানি অথবা পছন্দ কোন ফলের রসের সাথে দুই থেকে তিন টেবিল চামচ চা বীজ মিশ্রন করে দারুন একটা কোমল পানীয় তৈরি করে খাওয়া যায় তবে হ্যাঁ এর সাথে প্রয়োজন পড়লে সামান্য পানীয় যোগ করতে পারবেন।



অন্য পোস্টঃমুখের দাগ দূর করার জন্য সেরা চারটি ক্রিম 

চিয়া সীড সুপার ফুড হওয়ার কারণ



সুপার ফুড হিসেবে পরিচিত হওয়ার পেছনে একমাত্র কারণ হলো " পুষ্টিগুণ আগুন"। এটি এমন এক ধরনের ফুড যেটাতে রয়েছে শ্যামন মাছের থেকে আট গুণ বেশি ওমেগা-৩, আরো রয়েছে কলার চাইতে দ্বিগুণ পটাশিয়াম, কমলার চেয়ে ৭ গুণ বেশি ভিটামিন সি, পালং শাকের চাইতে তিনগুণ বেশি আয়রন এবং দুধের চেয়ে পাঁচ গুণ বেশি ক্যালশিয়াম। 


এটি মূলত ত্বক, চুল ও নখ কে সুন্দর রাখে, শক্তি এবং কর্মক্ষমতা বৃদ্ধি করে ক্যান্সার কে প্রতিরোধ করে, ভালো ঘুম হতে সাহায্য করে। পাশাপাশি আরও বেশ কিছু উপকারিতার জন্য চিয়া সীড সুপার ফুড হিসেবে পরিচিত।



চিয়া বীজের ব্যবহার



এপর্যন্ত আমরা চিয়া বীজের উপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত জেনেছি। এখন জানব এটি কিভাবে ব্যবহার করতে হয় সে সম্পর্কে। 


চিয়া বীজ যে কোন ফলের রস দিয়ে সরাসরি খাওয়া যায়। এটি পানির সাথে মিশ্রিত করা যায়। এটি এমন একটি ফল যার নিরপেক্ষ স্বাদের কারণে সব ধরনের খাবারের সাথে খুব সহজেই মিশিয়ে খাওয়া সম্ভব হয়। 


মূলত বিস্কুট, কেক, ছুপ, সালাত সহ ইত্যাদি খাবারের সাথে মিশিয়ে খাওয়া যায় চিয়া সীড। 



চিয়া বীজের উৎপত্তি


অনেকেই জানার আগ্রহ প্রকাশ করে, চিয়া সিড নামক এই বীজের উৎপত্তি কোথায়? তাদের উদ্দেশ্যে বলছি– চিয়া বীজ সালভিয়া হিসপানিকার একটি ভোজ্য বীজ, যা পুদিনা পরিবারের ( লামিয়াসেই ) মধ্য ও দক্ষিণ মেক্সিকো, বা দক্ষিণ-পশ্চিম আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্র এবং মেক্সিকো সম্পর্কিত সালভিয়া কলম্বিয়ারিয়া ফুলের একটি উদ্ভিদ। এই বীজ ডিম্বাকৃতি ও ধূসর বর্ণের সাথে কালো এবং সাদা দাগযুক্ত। যার ব্যাস প্রায় ২ মিলিমিটার (০.০৮ ইঞ্চি) মত। যা শরীরের জন্য উপকারী। আদিকাল থেকে প্রাচীন মানুষের খাদ্য তালিকার অন্তর্ভুক্ত থাকার প্রমাণ পাওয়া যায়।



অন্য পোস্টঃআক্কেল দাঁতের ব্যথা কমানোর উপায় 

চিয়া বীজ কোথায় পাওয়া যায়?


চিয়া বীজ বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থান থেকে সংগ্রহ করা সম্ভব হবে। এমনকি আপনি চাইলে অনলাইন এর মাধ্যমেও এই চিয়া বীজ কিনতে পারবেন। তবে অর্গানিক বিডি এবং নিওফারফার বিডি নামে দুটি ওয়েবসাইট থেকে আপনারা খুব সহজেই সর্বদামে চিয়া বীজ সংগ্রহ করতে পারবেন। সেই সাথে দারাজ তো রয়েছেই। 



পরিশেষে: তো সুপ্রিয় পাঠক বন্ধুরা, চিয়া বীজ সম্পর্কে আজকের আর্টিকেল এ পর্যন্তই। যদি কারো মনে যে সম্পর্কে কোন প্রশ্ন থেকে থাকে আমাদের কমেন্ট করে জানান এবং আর্টিকেলটি কেমন লেগেছে আপনাদের মূল্যবান মন্তব্য কমেন্ট সেকশনে জানিয়ে দিন। খুব শীঘ্রই আবার নতুন কোন আলোচনায় আপনাদের সাথে দেখা হবে কথা হবে আজ আল্লাহ হাফেজ।

Post a Comment (0)
Previous Post Next Post