লাইলাতুল কদরের নামাজের নিয়ম।লাইলাতুল কদরের নামাজ কত রাকাত

লাইলাতুল কদর


আসসালামু আলাইকুম আশা করি সকলেই ভালো আছেন। আমরা সকলেই লাইলাতুল কদর নামাজ সম্পর্কে জানি। লাইলাতুল কদরের নামাজ রাতে পড়তে হয়।যে জন্য লাইলাতুল কদরের রাত হচ্ছে হাজার মাসের চেয়ে উত্তম রাত।আজকের পোস্টে  আমরা লাইলাতুল কদরের নামাজের নিয়ম সম্পর্কে আলোচনা করবো।তাহলে চলুন দেরি না করে জেনে নেওয়া যাকঃ- 


লাইলাতুল কদরের নামাজের নিয়ম

লাইলাতুল কদর নামাজের বিশেষ কোনো নিয়ম নেই। লাইলাতুল কদরের নামাজ মাগরিবের পর থেকে শুরু করতে হয়,ছেলেদের জামায়াতের সাথে এবং মেয়েদের বাসায়। লাইলাতুল কদর নামাজের রাতে দুই রাকাত দুই রাকাত করে নফল নামাজ সুন্দরভাবে যতক্ষন পড়া যায়। কদরের নামাজটি যত ধীর স্থিরে পরবে তত ভালো। লাইলাতুল কদরের নামাজ রোজার সময় পরতে হয়।। শেষের বিজোড় রাতে নামাজ আদায় করতে হয়।লাইলাতুল কদরের নামাজ সারারাত জেগে পরতে হয়।  নিচে নিয়ম অনুসারে দেওয়া হলঃ

১.প্রথমে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন কাপড় পরে ওজু করে নিতে হবে।

২.এরপর কিবলামুখি হয়ে জায়নামাজে দাড়িয়ে লাইলাতুল কদর নফল নামাজের নিয়ত করতে হবে মনে মনে। এরপর সানা পরে নামাজ শুরু করতে হবে।

৩.এরপর সুরা ফাতিহা পরে যেকোনো সূরা পড়া যাবে।কদরের নামাজে নির্দিষ্ট করে সূরা পড়ার কোনো বাধ্যবাধকতা নেই। আপনারা যত ইচ্ছা সূরা পড়তে পারবেন। সূরা পরতে হবে সময় নিয়ে। যত সময় নিয়ে সূরা পড়া যাবে তত ভালো।

৪.এরপর রুকু ও  সিজদাহর সময় অনেক আস্তে ধীরে রুকু সিজদাহ করতে হবে।                                                                                                                                                                 

৫.দুই রাকাত নামাজের মাঝে তাশাহুদ,দুরদ শরীফ,এবং দোয়া মাসুরা পড়ে সালাম ফিরিয়ে মোনাজাত ধরে বেশি বেশি করে দোয়া পরতে হবে। 


কদরের নামাজের রাকাতের কোন বাধ্যবাধকতা নেই। দুই রাকাত দুই রাকাত করে নামাজ পড়া যাবে।যতক্ষন সম্ভব দুই রাকাত দুই রাকাত করে সময় নিয়ে ফজরের নামাজ পর্যন্ত নামাজ পড়া ভালো।প্রত্যেক রাকাত ধীর স্থিরে পরতে হবে। প্রতি সূরার আয়াতের মাঝে সময় নিতে হবে। একই সূরা কয়েকবার পড়া যাবে। 


এই নিয়ম অনুসারে লাইলাতুল কদরের নামাজ আদায় করলে মহান আল্লাহ তা’আলা অনেক সন্তুষ্ট হবে এবং সাওয়াব দিবে। 


লাইলাতুল কদরের ফজিলত



মহান আল্লাহ্‌ তা’আলা নবীজির উম্মতদের জন্য এই লাইলাতুল কদর নামাজ নাযিল করেছেন।এই জন্য লাইলাতুল কদরের রাত হচ্ছে হাজার মাসের চেয়ে উত্তম রাত। পবিত্র কোরআনে নাযিলের মাধ্যমে আল্লাহ্‌ রাব্বুল আলামীন এই রাতকে হাজারের মাসের চেয়ে শ্রেষ্ঠ উত্তম এবং মহা সম্মানিত রাত হিসেবে আমাদের জন্য দান করেছেন। এই কদরের রাত হলো বরকতময় রাত। এই রাতে মহান আল্লাহ্‌ তা’আলা বান্দার সকল মনের আশা পূরণ করে। এই এক রাতে হাজার মাসের সাওয়াব আল্লাহ্‌ পাক দিয়ে থাকে। এই লাইলাতুল কদরের নামাজের অনেক ফজিলত রয়েছে।  



লাইলাতুল কদরের দোয়া 


সুরা কদরঃইন্না আনযালনা-হু ফী লাইলাতিল কদর। অমা আদর-কা মা-লাইলাতুল কদর। লাইলাতুল কদরি খইরুম মিন আলফি শাহ্‌র। তানাযযালুল মালা-য়িকাতু অররুহু ফীহা-বিইযনি রব্বিহিম মিন কুল্লি আমরিন। সালা-মুন হিয়া হাত্তা-মাত লাই’ল ফাজর।

অর্থঃ নিশ্চয়ই আমি এটা (কোরআন) কদর-রাতে নাযিল করলাম। আর আপনি কি জানেন, মহিমান্বিত রাত কি? কদর(মহিমান্বিত) রাত,হাজার মাস অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ। সে রাতে প্রত্যেক বরকত পূর্ণ বিষয় নিয়ে ফেরেশতা ও রূহ(জিব্রাঈল) (দুনিয়াতে) অবতীর্ণ হয়, স্বীয় রবের নির্দেশে।সে রাতে সম্পূর্ণ শান্তি,ফজর পর্যন্ত বিরাজিত হয়। 


এছাড়াও আরেকটি লাইলাতুল কদরের দোয়া আছে

উচ্চারণঃ আল্লাহুম্মা ইন্নাকা আফুয়ুন তুহিব্বুল আফওয়া ফাফু আন্নি ইয়া গাফুরু,ইয়া গাফুরু,ইয়া গাফুরু।


অর্থঃ হে আল্লাহ! আপনি ক্ষমাশীল ক্ষমাকে আপনি ভালোবাসেন, তাই আমাকে মাফ করে দিন। আপনি ক্ষমাকারী,আপনি ক্ষমাকারী,আপনি ক্ষমাকারী। 



অন্য পোস্টঃতাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ম 


লাইলাতুল কদরের আমল


লাইলাতুল কদরের আমল হলোঃবেশি বেশি দুই রাকাত করে নফল নামাজ পড়া, মহান আল্লাহ্‌র কাছে মাফ চাওয়া,বেশি বেশি ইস্তেগফার করা।তাহাজ্জুত সালাত, সালাতুত তাসবিহ,সালাতুল হাজত নামাজ আদায় করা। মহান আল্লাহ্‌র কাছে বেশি করে শুকরিয়া আদায় করা। 


এছাড়াও কদরের দোয়া পাঠ করা, বেশি করে দুরদ শরিফ পড়া। নবীজির জন্য দুরদ পাঠ করা। সারারাত জেগে সালাত আদায় করা, আল্লাহ্‌র ইবাদত করা।এইভাবে লাইলাতুল কদরের নামাজের আমল করতে হবে। 




লাইলাতুল কদরের ফজিলত সম্পর্কে হাদিস


লাইলাতুল কদরের ফজিলতের হাদিস বর্ণিত আছে, একদিন আমাদের প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মহান আল্লাহ্‌র কাছে কেঁদে বললেন,হে আল্লাহ্‌! আপনি আগের নবীদের উম্মতের জন্য অনেক হায়াত দিতেন,তাহলে আমার উম্মতদের জন্য কেন এত কম হায়াত দিলেন। এই বলে নবী আবার কেঁদে দিলেন।


 তখন আল্লাহ্‌ তা’আলা জিব্রাঈল (আঃ) কে বললেন তুমি গিয়ে নবীকে কাঁদতে না করো। নবীর কান্না আমার সহ্য হয় না। তারপর নবীজি এই কথা বলে আবার কেঁদে দেওয়ার পর মহান আল্লাহ্‌ তা’আলা নবীকে বললেন,তুমি কেঁদো না। আগের নবীদের উম্মত হাজার বছরের হায়াত দিয়েছি কিন্তু কদরের রাত তাদের দেইনি। কিন্তু তোমাদের উম্মতদের কম হায়াত দিলেও তাদের লাইলাতুল কদরের রাত দিয়েছি, যে রাতে তোমার উম্মতেরা ইবাদত করলে হাজার মাসের সাওয়াব পাবে। এই হাদিস দ্বারাই লাইলাতুল কদরের ফজিলত জানা গিয়েছে। 


সূরা কদর বর্ণিত আরেকটি হাদিস রয়েছে কোরআন শরীফে 


শানেনুযূলঃইবনে আবী হাতেম (রাঃ)- বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ(সাঃ) একবার বনী ইসরাঈলের জনৈক মুজাহিদ সম্পর্কে আলোচনা করলেন। সে এক হাজার মাস পর্যন্ত অবিরাম জিহাদে মশগুল থাকে এবং কখনও অস্র সংবরণ করে নি। মুসলমানরা একথা শুনে বিস্মিত হলে এ সূরা নাযিল হয়। এতে এ উম্মতের জন্যে শুধু এক রাতের ইবাদতই সে মুজাহিদের এক হাজার মাসের ইবাদত অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ প্রতিপন্ন করা হয়েছে।


 ইবনে জবীর (রাঃ) অপর একটি ঘটনা এভাবে উল্লেখ করেছেন যে, বনী-ইসরাঈলের জনৈক ব্যাক্তি সারা রাত ইবাদতে মশগুল থাকতো ও সকাল হতেই জিহাদের জন্যে বের হতে যেত এবং সারাদিন জিহাদ লিপ্ত থাকতো। সে এক হাজার মাস এভাবে পার করে দেয়। এ প্রেক্ষিতে আল্লাহ্‌ তা’আলা এ সূরা নাযিল করে এ উম্মতের শ্রেষ্ঠত্ব প্রমান করেছেন।(মাযাহারী)। 


অন্য পোস্টঃফজরের নামাজের নিয়ম 


লাইলাতুল কদরের নামাজ কত রাকাত


লাইলাতুল কদরের নামাজ দুই রাকাত করে।এই দুই রাকাত নফল নামাজের নিয়ত করে পরতে হয়। কদরের নামাজের নামাজ দুই রাকাত দুই রাকাত করে পরতে হয় কিন্তু এই কদরের নামাজের কোনো বাধ্যবাধকতা নেই। দুই রাকাত দুই রাকাত করে যতক্ষন ইচ্ছা পড়া যাবে। 




লাইলাতুল কদরের নিয়ত


লাইলাতুল কদরের নামাজের নিয়ত শুরু করতে হবে অন্তর থেকে।কারন নিয়ত উচ্চারন করে পড়া যাবে না। এই জন্য নিয়ত অন্তরের মাধ্যমে এনে মনে মনে বলতে হবে হে আল্লাহ আমি কীবলামুখি হয়ে দুই রাকাত নফল কদরের নামাজের নিয়ত করলাম।এই নিয়ত অন্তরে এনে মনের মধ্যে নিয়ত করতে হবে। এই ইচ্ছা পোষণ করে অন্তরে লাইলাতুল কদরের নফল নামাজের নিয়ত করতে হবে। 



লাইলাতুল কদরের রাত চেনার উপায়


লাইলাতুল কদরের রাত চেনার কোনো উপায় নেই।কারন রোজার শেষের দশ দিনের ভাগ হলো নাযাত। এই নাযাতের শেষের দশ দিনের মধ্যে যে বিজোড় সংখ্যা গুলো আছে, যেমনঃ২১,২৩,২৫,২৭,২৯ এই বিজোড় সংখ্যা মধ্যে যেকোনো দিনে কদরের রাত হতে পারে। এই জন্য প্রত্যেক বিজোড় রাতে কদরের নামাজ পরতে হবে। এই জন্য লাইলাতুল কদরের রাত চেনার কোনো উপায় নেই।শুধু মাত্র মহান আল্লাহ্‌ তা’আলা জানে কদরের রাত কোনদিন হবে। 



অন্য পোস্টঃজানাজার নামাজের নিয়ম 


লাইলাতুল কদরের নামাজ সুন্নত না নফল


লাইলাতুল কদরের নামাজ নফল। কদরের নামাজকে আল্লাহ্‌ তা’আলা নফল ইবাদত বলেছেন। কারন কদরের নামাজ পড়া বাধ্যতামুলক নয় এবং নামাজের কোন নির্দিষ্ট রাকাত নেই সেহেতু এই নামাজ নফল হিসেবে গণ্য হয়েছে। কিন্তু আমাদের প্রিয় নবী এই নামাজ পরার জন্য সকলকে তাগিত দিয়েছে। কদরের নামাজ নফল নামাজের মধ্যে অনেক বরকতময় নামাজ। 



শেষ কথা,আশা করি আজকের পোস্টে যারা পড়েছেন তারা লাইলাতুল কদরের নামাজেরর সকল নিয়ম সম্পর্কে ধারণা পেয়েছেন। তারপরেও যদি এই বিষয় সম্পর্কে কোন কিছু জানার থাকে তাহলে অবশ্যই কমেন্ট করে জানাতে পারেন।

ধন্যবাদ। 

Post a Comment (0)
Previous Post Next Post