যেকোনো সময় আমাদের শরীরে অস্বাভাবিক প্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে। যার ফলে অনেক কষ্ট ভোগ করতে হয়। শারীরিক অসুস্থতা মানুষকে এক নিমিষে দুর্বল করে ফেলতে পারে। তবে আমাদের শরীরে যে সকল রোগের আবির্ভাব ঘটে তার সবই খুব অল্প সময়ের মধ্যে বিতাড়িত করা সম্ভব। আর এর জন্য প্রয়োজন শুধুমাত্র খাদ্যভাসের পরিবর্তন।
আমাদের মাঝে এমন অনেক মানুষ রয়েছেন, যারা প্রতিনিয়ত হজমের সমস্যায় ভুগছেন। কারো পেট ফেপে আছে, কারো বা কোষ্ঠকাঠিন্য হয়েছে, আবার কেউ কেউ পেটের ব্যথায় অতিষ্ট। আর তাদের জন্যই নিয়ে এসেছি আমাদের আজকের আর্টিকেল।
দর্শক, আপনি কি প্যানক্রিয়াটাইটিস রোগে আক্রান্ত? যদি তাই হয়ে থাকে তাহলে আমাদের এই আর্টিকেলটি স্কিপ না করে শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত একবারের জন্য হলেও পড়ুন। কারণ আজ আমরা আলোচনা করব এমন কিছু খাদ্য নিয়ে যেগুলো খেলে আপনি খুব সহজেই এই রোগ থেকে মুক্তি পাবেন।
তাহলে চলুন প্যানক্রিয়াটাইটিস রোগীর খাদ্য তালিকা সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক। সেই সাথে আরো জেনে নেওয়া যাক, প্যানক্রিয়াটাইটিস রোগ টি আসলে কি? এটি হলে আমাদের শরীরে কি কি উপসর্গ দেখা দেয় এবং প্যানক্রিয়াটাইটিস রোগকে ভালো করার জন্য কি কি উপায় অবলম্বন করা অতি আবশ্যক।
প্যানক্রিয়াটাইটিস কি?.
প্যানক্রিয়াস একটি গ্রিক শব্দ, যার অর্থ হলো অল ফ্লেস। শরীরের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি অংশ এটি, বাংলায় যার নাম অগ্নাশয়। প্যানক্রিয়াটাইটিস বলতে স্বাভাবিকভাবে সেই রোগগুলোকে বোঝানো হয়ে থাকে, যা আমাদের শারীরবৃত্তীয় সমস্যায় বাঁধা হয়ে দাঁড়ায় এবং পেটের গন্ডগোল করে। যেগুলোর জন্য নির্দিষ্ট পুষ্টির নিয়ম গুলির সম্মতি প্রয়োজন।
আজকাল আমাদের মাঝে এমন একজন মানুষকে খুঁজে পাওয়া বড্ড কঠিন, যার কিনা প্যানক্রিয়াটাইটিস রোগের সমস্যায় একদিনের জন্য ভুগতে হয়নি। আসলে আমাদের মাঝে প্রায় সকলের মধ্যেই এ রোগের প্রাদুর্ভাব ঘটে।
প্যানক্রিয়াটাইটিস বা অগ্নাশয় প্রদাহ সচরাচর আমাদের শরীরে গুরুত্বপূর্ণ পুষ্টি উৎপন্ন করে থাকে।
কিন্তু যখন এই অংশ অসুস্থ হয়ে পড়ে, বিভিন্ন কারণে সংক্রমিত হয়, ঠিক তখন আমাদের শরীরে দেখা দেয় অগ্নাশয় জনিত সমস্যা। সেগুলো হতে পারে বদহজম থেকে শুরু করে কোষ্ঠকাঠিন্য পর্যন্ত।
তবে অগ্নাশয় বা প্যানক্রিয়াস কে ভালো রাখতে এমন কিছু খাবার চিকিৎসকরা ইতোমধ্যে গবেষণা করে পরামর্শ স্বরূপ খেতে বলেছেন। কারণ এটা আমরা সবাই জানি আমরা যে খাবারগুলো খাই, সেগুলো জ্বালানিতে রূপান্তরিত করে দেহের কোষগুলোর প্রয়োজন মেটায় অগ্নাশয়। আর সেই খাবারগুলো যদি ঠিকঠাক না হয় তাহলে অগ্নাশয়–--- এ বিভিন্ন সমস্যার আগমন ঘটবে এটাই স্বাভাবিক।
অন্য পোস্টঃ৭ দিনে লম্বা হওয়ার উপায়
প্যানক্রিয়েটাইটিস রোগীর খাদ্য তালিকা।
আপনি যদি একজন প্যানক্রিয়েটাইটিস রোগী হয়ে থাকেন তাহলে সবার প্রথমে আমরা আপনাদেরকে অবশ্যই যে খাদ্য উপাদানটি রাখার কথা সাজেস্ট করব আপনার খাদ্য তালিকায়, সেটা হলো মধু।
কারণ ইতোমধ্যে প্রমাণিত হয়েছে অগ্নাশয় সমস্যায় ভুগছে এমন ব্যক্তিরা যদি মধু খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তোলে, তাহলে তাদের শারীরিক দুর্বলতা কমবে। সেই সাথে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পাবে।
আর তাছাড়াও, চিনি আমাদের শরীরের জন্য একটি ক্ষতিকর খাদ্য উপাদান। আপনি হয়তো জেনে থাকবেন, চিনিকে বলা হয় হোয়াইট পয়জন। তবে আমাদের শরীরে যদি চিনির মাত্রা স্বাভাবিক না থাকে তাতেও সমস্যা। তাই সেই মাত্রাটাকে ঠিক রেখে অবশ্যই আপনি চিনি খাওয়ার অভ্যাস পরিত্যাগ করবেন।
আর অগ্নাশয় জনিত সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে চিনির পরিবর্তে মধু খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলবেন। তো আপনার খাদ্য তালিকায় যদি ইতোমধ্যে মধু না থেকে থাকে, তাহলে আজকেই যুক্ত করুন। কারণ, মধু একটি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকারী পুষ্টি উপাদান সমৃদ্ধ খাদ্য।
তবে অন্যান্য রোগে আক্রান্ত রোগীদের তুলনায় প্যানক্রিয়াটাইটিস রোগীর খাদ্য তালিকা বেশ বিস্তৃত। কিন্তু এর পাশাপাশি বেশ কিছু বিধি নিষেধ রয়েছে। আর তাই সেইসব খাদ্য গ্রহণের পাশাপাশি অবশ্যই আপনাকে নজর দিতে হবে সেসব নিষেধাজ্ঞার উপর।
তবে খাদ্য তালিকায় আপনি যে খাদ্যগুলো রাখবেন সেগুলো হলো
প্রোটিন যুক্ত খাবার
কার্বোহাইড্রেট সমৃদ্ধ খাবার
উদ্ভিদ লিপিড
ভিটামিন
খনিজ উপাদান সহ অন্যান্য সকল দরকারি পদার্থ সমৃদ্ধ খাবার।
যেগুলো দেহের জন্য অত্যন্ত উপযোগী এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে অনেক বেশি কার্যকরী।
তবে হ্যাঁ, এইসব পুষ্টি উপাদান সমৃদ্ধ খাবারের পাশাপাশি আপনি অবশ্যই যে খাবারগুলো খাবেন। মানে আপনার অগ্নাশয় বা প্যানক্রিয়াস কে ভালো রাখবে যে সকল খাদ্য।সেগুলো হলো:
লেবু
লেবুর মধ্যে যে সকল উপাদান রয়েছে তার সাহায্যে অগ্ন্যাসয়ে এনজাইম তৈরি হয়। ইতিমধ্যে প্রমাণিত হয়েছে লেবুর কার্যকারিতা প্যানক্রিয়াটাইটিস রোগের জন্য অত্যন্ত সহায়ক। প্রয়োজনীয় এনজাইম তৈরি করতে পারে লেবু আর তাই প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় লেবু থাকা চাই চাই। এজন্য আপনি যদি আপনার অগ্নাশয় অর্থাৎ প্যানক্রিয়াস সুস্থ ও ভালো রাখতে চান তাহলে খাবারের তালিকায় অবশ্যই লেবু মাস্ট রাখুন।
শাকসবজি
শাকসবজি আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত উপকারী এটা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। তবুও বলবো আপনি যদি প্রশ্ন করে থাকেন প্যানক্রিয়েটাইটিস রোগীর খাদ্য তালিকা তে কি কি খাবার রাখা প্রয়োজন বা রাখতেই হবে তাদেরকে বলব, প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় শাকসবজি রাখা সত্যি বাধ্যতামূলক।
কারণ এটি শরীরের কোলেস্টেরলের মাত্রা কমায় এবং ফাইবারের মাত্রা বাড়ায়। সবুজ শাকসবজি পিত্তথলির পাথর হওয়ার ঝুঁকি রাজ করে যেটি অগ্ন্যাশয় এর মারাত্মক প্রদাহের অন্যতম প্রধান কারণ। শাকসবজিতে থাকা এন্টি অক্সিডেন্ট দেহের ফ্রী রেডিকেলগুলি দূর করে প্রদাহ গ্রাস করতেও অনেক বেশি সহায়তা করে। এজন্য প্যানক্রিয়েটাইটিস রোগীদের আদর্শ খাবার শাকসবজি।
রসুন
অগ্নাশয় সমস্যার সমাধানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে রসুন। অগ্নাশয় ইনসুলিন উৎপাদন বাড়িয়ে দেয় রসুনের পুষ্টি উপাদান। যার ফলে আপনার রক্তে চিনির পরিমাণ হ্রাস করতে সুবিধা করে এবং আপনার অগ্নাশয় কে সুস্থ ও ভালো রাখে। তাই যারা প্যানক্রিয়েটাইটিস রোগী তারা প্রতিদিন দুই কোয়া করে রসুন খাওয়ার চেষ্টা করুন। আর আজকে খাবারের তালিকায় রসুনকে লিখে রাখুন।
আর হ্যাঁ অগ্নাশয়ের সমস্যা হলে অবশ্যই আপনি যে খাবারগুলো খাবেন না। সেগুলো হলো
কিসমিস
ডাম্পলিং
জেল যুক্ত মাংস
শুয়োরের মাংস
তবে এগুলোর বাইরে আপনি আপেল, ডালিম এবং মৌসুমী ফল গুলো নিয়মিত খেতে পারেন। এতে করে আপনার শরীরে কোনরকম বিরূপ প্রভাব পড়বে না। আপনি থাকবেন সুস্থ উপভোগ করবেন সুন্দর জীবন।
অন্য পোস্টঃডায়াবেটিস রোগীর জন্য খাদ্য তালিকা
তো দর্শক বন্ধুরা, এই ছিল আমাদের আজকের প্যানক্রিয়াটাইটিস রোগীর খাদ্য তালিকা নিয়ে সংক্ষিপ্ত আলোচনা পর্ব। তো যদি আপনাদের মনে কোন প্রশ্ন থেকে থাকে তাহলে অবশ্যই আমাদের কমেন্ট করে জানান। সেই সাথে নিজে জানুন এবং অন্যকে জানার সুযোগ করে দিন। সবাই ভালো থাকুন সুস্থ থাকুন খুব তাড়াতাড়ি আবারও নতুন টপিকের নতুন কোন আলোচনায় আপনাদের সাথে আমাদের দেখা হবে। আজ এখানেই আল্লাহ হাফেজ।