দাদ রোগের ঘরোয়া চিকিৎসাঃনারী-পুরুষ-শিশু-যুবক-বৃদ্ধ সবার ক্ষেত্রেই একটি অতি পরিচিত সংক্রমণ রোগ দাদ। যা শরীরের বিভিন্ন স্থানে যেমন— হাত, পা, পিঠ, হাতের আঙ্গুল, পায়ের আঙ্গুল বা মাথার তালু থেকে শুরু করে প্রায় সর্বাঙ্গে হতে পারে।
আঞ্চলিক ভাষায় এটিকে বলা হয়ে থাকে দাউদ, যা একপ্রকার ফাঙ্গাল ইনফেকশন। যারা এই সমস্যায় জর্জরিত তারাই একমাত্র জানেন এটি সহ্য করা কতটা কঠিন। তবে অনেকেই রয়েছে দাদ রোগটাকে তেমন গায়ে মাখায় না।
কিন্তু এটা কিন্তু সত্যি যে, কোন ছোট ছোট রোগ থেকে পরবর্তীতে সৃষ্টি হতে পারে অনেক বড় ভয়াবহ রোগের। আর তাই দাদ রোগ থেকে মুক্তি পেতে অবশ্যই সঠিক পরামর্শ গ্রহণ করা উচিত। তাছাড়াও ইতোমধ্যে অতি সাধারণ কিছু চিকিৎসা পদ্ধতি বের হয়েছে যেগুলো খুব সহজেই দাঁদ নিরাময়ে ভূমিকা রাখে।
আপনি যদি আপনার দাদের সমস্যা দূর করতে চান তাহলে, সাধারণ কিছু ঘরোয়া পদ্ধতি অবলম্বন করতে পারেন, যা আপনার শরীর থেকে চিরতরে দাউদ অর্থাৎ দাঁদ নামক সংক্রমণ রোগটিকে বিদায় দিবে। তাহলে চলুন, আজকের আলোচনা পর্বে জেনে নেই দাদ রোগের ঘরোয়া চিকিৎসা, দাঁত রোগ কি, এর লক্ষণ কি কি এবং এটি কেন হয়ে থাকে?
দাদ রোগ কি?
ছোঁয়াচে রোগ গুলোর মধ্যে অন্যতম একটি রোগ দাদ। যাকে ইংরেজিতে বলা হয়ে থাকে রিং ওয়ার্ম। সহজ ভাষায় বলতে গেলে বলা যায়, যে সংক্রমণ রোগ ত্বকে দেখা দিলে চাকার মত গোল খতের সৃষ্টি হয় এবং সংক্রমনের মাধ্যমে তা শরীরের আরো জায়গায় ছড়িয়ে পড়ে তাই হল দাদ।
এটি মূলত খুবই সাধারণ সংক্রমণ, যা খুব সহজেই মানুষের শরীরে ছড়িয়ে পরতে পারে।
অন্য পোস্টঃহার্ট রোগীর জন্য খাবার তালিকা
দাদ রোগের লক্ষণ কি?
ইতোমধ্যে আমরা জেনেছি দাঁত রোগ বলতে কী বোঝানো হয়ে থাকে। কিন্তু এখন কথা হল যেহেতু এটি খুবই সাধারণ একটি সংক্রমণ রোগ, তাই হঠাৎ করে যদি আপনার শরীরে এর আবির্ভাব ঘটে তাহলে আপনি কি কি উপসর্গ দেখে বুঝতে পারবেন যে আপনার শরীরে দাউদ হয়েছে!
এমন প্রশ্ন নিশ্চয়ই আপনাদের মাথায় ইতোমধ্যে এসেছে। তাই তো? তাহলে চলুন এই পয়েন্টে জেনে নেই দাদ এর উপসর্গ কি কি? আমাদের শরীরে কি কি লক্ষণ প্রকাশ পাবে দাদ রোগ হলে!
#####
রিং আকৃতির ক্ষত
চুলকানি
আঁশযুক্ত বা ফাটা ত্বক
চুল পড়া এবং
বিভিন্ন প্রকারের ঘা এর সৃষ্টি হওয়া।
আপনার শরীরে যদি কখনো এইসব উপসর্গ দেখা দেয় তাহলে নিঃসন্দেহে ধরে নেবেন যে আপনার দাদ রোগ হয়েছে। কি কারনে দাদ হয়? অনেকেই জানার জন্য আগ্রহ প্রকাশ করেন। তাদেরকে বলছি এটি মূলত টিনিয়া নামক ছত্রাকের কারণে হয়ে থাকে। পরবর্তীতে সংক্রমণ আকারে শরীরে ছড়িয়ে পড়ে ধীরে ধীরে।
দাঁত রোগ হলে করণীয় কি?
দাদ রোগ একটি সাধারণ রোগ হলেও এটি অনেক যন্ত্রণাদায়ক। তাই নিজেকে সেই যন্ত্রণা থেকে মুক্ত করার জন্য আপনাকে সর্বপ্রথম লক্ষণ প্রকাশের সাথে সাথে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে সাক্ষাৎ করতে হবে আপনার কাছের বা আপনার পরিচিত চিকিৎসকের সাথে।
কারণ এটি যেহেতু একটি ছোঁয়াচে রোগ তাই আপনার যদি হয় তাহলে অবিলম্বে আপনার পরিবারের অন্যান্য সদস্যেরও হবে এটাই স্বাভাবিক। তাই দেরি করবেন না ডাক্তারের পরামর্শ নিতে সাক্ষাৎ করুন। আর যদি ঔষধের মাধ্যমে এটি নিরাময় করতে না চান তাহলে আমাদের দেওয়া কিছু ঘরোয়া পদ্ধতি অবলম্বন করুন। কারণ দাদ নিরাময়ের জন্য এমন কিছু কার্যকরী ঘরোয়া প্রতিকার রয়েছে যা খুবই সাশ্রয়ী এবং কার্যকরী।
দাদ রোগের ঘরোয়া চিকিৎসা
আমরা সবাই জানি যে, যেকোনো ঔষধ সে বনের ফলে বিভিন্ন সাইড ইফেক্ট এর ঝামেলা পোহাতে হয়। কিন্তু কোন রোগ নিরাময়ের ক্ষেত্রে যদি আমরা প্রাকৃতিক উপায় অবলম্বন করি তাহলে এটি চিরতরে নির্মূল হয়ে যায় সে সাথে কোন পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া থাকে না।
বিশেষ করে, সংক্রমণ টাইপের রোগ গুলো মূলত ঘরোয়া ভাবেই নিরমূল করা যায়। সেই সাথে মেনে চলতে হয় দৈনন্দিন জীবনে কিছু নিয়মকানুন। সেগুলো হতে পারে,
আলাদা আলাদা তোয়ালে ব্যবহার করা
আলাদা চিরুনি ব্যবহার করা
আক্রান্ত ব্যক্তির জামা কাপড় পরিধান না করা
লোকমুখে শুনে হুটহাট ওষুধ সেবন না করা।
এবার চলুন দাদ রোগের মত ভয়াবহ চর্মরোগ কে চিরতরে নির্মূলের উপায়।
অন্য পোস্ট:মাত্র ৭ দিনে লম্বা হয়ে ওঠার উপায়
নাম্বার ১. দাদ রোগের ঘরোয়া চিকিৎসায় মধুর ব্যবহার
আমাদের সবারই কম বেশি জানা রয়েছে মধুর উপকারিতা সম্পর্কে। কারণ মধুকে বলা হয় মহঔষধ। মধুতে থাকা হাইড্রোজেন পার অক্সাইড এবং ছত্রাকনাশক উপাদান দাদ জীবাণুকে ছড়িয়ে পড়তে বাধা প্রদান করে। আর তাই আপনি যদি একটি কটন বাড়ে অথবা তোলার সঙ্গে মধু লাগিয়ে আক্রান্ত স্থানে ব্যবহার করেন তাহলে খুব তাড়াতাড়ি এই সমস্যা থেকে মুক্তি পাবেন। তাই যারা আপনারা দীর্ঘদিন ধরে দাদ রোগের সমস্যায় জর্জরিত তারা আজকেই দাদ রোগের ঘরোয়া চিকিৎসায় মধুর এই ব্যবহার প্রক্রিয়াটি মেনে নিয়মিত আক্রান্ত স্থানে ব্যবহার করুন।
নাম্বার ২. দাদ রোগের ঘরোয়া চিকিৎসায় নিম পাতা ব্যবহার
এটা আমাদের কারোরই অজানা নয় নিমপাতা একটি অত্যন্ত উপকারী ঔষধি পাতা। যার মধ্যে উপস্থিত অ্যান্টি সেপটিক এবং এন্টি মাইক্রোবিয়াল প্রপার্টিজ দাউদের মতো ত্বকের রোগের সমস্যা নিরাময়ে বিশেষ ভূমিকা পালন করে। তাই দাগ রোগের সমস্যা থেকে নিজেকে বাঁচাতে আপনি প্রতিদিন নিম পাতার তেল আক্রান্ত স্থানে লাগাতে পারেন। আশা করি এতে আপনি খুব তাড়াতাড়ি ভালো ফল পাবেন।
নাম্বার ৩. দাদ রোগের ঘরোয়া চিকিৎসায় এলোভেরা
আমরা সবাই জানি অ্যালোভেরা আমাদের ত্বকের জন্য ঠিক কতটা উপকারী একটি উপাদান। কারণ ত্বকের যে কোন সমস্যা নিরাময়ে ত্বকের সৌন্দর্য বৃদ্ধির জন্য অ্যালোভেরার প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম।
কিন্তু মজার ব্যাপার হল দাদ রোগের মত অস্বস্তিকর একটা রোগ কেও এটি নিরাময় করার ক্ষমতা রাখে। কারণ এতে মধ্যে প্রমাণিত হয়েছে ছত্রাকের সংক্রমণ ঠেকাতে এলোভেরাতে থাকে এলোভেরা রেজিন। আর সেটা দাদের চুলকানি, যন্ত্রণা ও প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে। তাই আপনারা নিয়মিত এলোভেরার জেল ব্যবহার করতে পারেন আক্রান্ত স্থানে এই সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে।
নাম্বার ৪. দাদ রোগের ঘরোয়া চিকিৎসায় রসুন
রসুনে রয়েছে এ্যাজুইনা নামের এক ধরনের প্রাকৃতিক এন্টিফাঙ্গাল উপাদান, যা যেকোনো ধরনের ফাঙ্গাল ইনফেকশন কমাতে ভূমিকা রাখে। আর এজন্য দাগ রোগের সমস্যা থেকে পরিত্রাণের জন্য রসুনের ভূমিকাও অনেক গুরুতর। এজন্য আপনাকে প্রথমত এক থেকে দুই কোয়া রসুন ভালো করে থেতলে নিতে হবে। পরবর্তীতে তাতে তিন টেবিল চামচ মধু এবং তিন টেবিল চামচ অলিভ অয়েল মেশিয়ে আক্রান্ত স্থানে লাগিয়ে রাখতে হবে ঘন্টাখানেক। পরবর্তীতে গরম পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলতে হবে সেই স্থান। আর আপনি যদি এভাবে কিছুদিন ব্যবহার করেন তাহলে অবশ্যই আপনার দাদ রোগের সমস্যা দূর হয়ে যাবে।
নাম্বার ৫. টিট্রি অয়েল
ছত্রাক জনিত ত্বকের ইনফেকশনের চিকিৎসার ক্ষেত্রে অত্যন্ত কার্যকরী একটি উপাদান টিট্রি ওয়েল। এতে এন্টিফাঙ্গাল এবং অ্যান্টি ব্যাকটেরিয়াল উপাদান রয়েছে যা দাঁদ রোগ নিরাময়ে বিশেষ ভূমিকা পালন করে। তাই আপনি এই সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে আক্রান্ত স্থানে একটি পরিষ্কার তুলোর মাধ্যমে কয়েক ফোঁটা টি ট্রি ওয়েল লাগিয়ে নিন। তবে হ্যাঁ, এক্ষেত্রে একটা কথা মাথায় রাখবেন। আপনার ত্বক যদি অতি সংবেদনশীল টক হয়ে থাকে তাহলে এই অয়েলটি নারকেল তেলের সঙ্গে মিশিয়ে ব্যবহার করবেন। তাহলে আপনার জন্য অনেক বেশি উপযুক্ত হবে আর সেই সাথে প্রক্রিয়াটি দিনের ২ থেকে ৩ বার করা অনেকটাই ভালো হবে। এক কথায় আপনি দ্রুত দাদের সমস্যা থেকে মুক্তি পাবেন।
শেষকথা,তো দর্শক বন্ধুরা, এই ছিল আমাদের আজকের আলোচনা পর্ব। আশা করি আমাদের দেওয়া এই কয়েকটি টিপস আপনাদের বেশ উপকারে আসবে। তো যদি আপনাদের এই কনটেন্টটি ভালো লেগে থাকে তাহলে বন্ধুদের সাথে শেয়ার করুন। সেই সাথে সবাই ভালো থাকুন সুস্থ থাকুন। আল্লাহ হাফেজ।