হার্টের রোগীর খাবার তালিকাঃএকটা মানুষের খাদ্যাভ্যাসের উপর নির্ভর করে তার সুস্থ থাকা। যে যেমন খাবার খাবে তেমন জীবন উপভোগ করবে। সচরাচর আমাদের শরীরে যে সকল রোগের আবির্ভাব ঘটে এর মূলে শুধুমাত্র একটাই কারণ থেকে থাকে, সেটা হল বাজে খাদ্যাভ্যাস। একজন মানুষ যদি পরিণত খাবার খায় এবং তার খাবারের তালিকায় নিয়মিত পুষ্টি সমৃদ্ধ খাবার রাখে, তাহলে সে অবশ্যই সুস্থ সুন্দর জীবন যাপন করতে পারবে। আর এটা অবাস্তব কিছুই না।
হ্যাঁ, একটা মানুষের শরীরে অবশ্যই রোগ দেখা দিতে পারে। কিন্তু সেটা থেকে বাঁচার উপায় শুধুমাত্র ঔষধ সেবন তা কিন্তু নয়। একটা মানুষ মূলত তার খাদ্যাভ্যাসের পরিবর্তন করে কোনরকম ঝামেলার সম্মুখীন না হয়েও নিজেকে সুস্থ করে গড়ে তুলতে পারে।
আর এটা আমাদের সবারই জানা স্বাস্থ্যই সম্পদ আর মানুষের সবচেয়ে বড় সম্পদ হলো তার হৃদয়। কিন্তু এই হৃদয় যদি থাকে অসুস্থ, তাহলে একটা মানুষ হাজার চেষ্টা করেও কখনো শান্তিতে জীবন যাপন করতে পারবে না।
আমরা জানি যে, রক্তে কোলেস্টেরলের পরিমাণ বেড়ে গেলে হৃদরোগ ও স্টোকের আশঙ্কা বেড়ে যায়। আর এই সমস্যাটা বর্তমানে অধিকারের মাথাচাড়া দিয়ে জেঁকে বসেছে। কিন্তু আপনি কি জানেন? শুধুমাত্র সঠিক খাবার একজন মানুষের হার্টের এই চিরতরে নির্মূল করতে পারে।
দর্শক, যদি আপনারা না জেনে থাকেন তাহলে আমাদের এই কনটেন্টটি স্কিপ না করে শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত দেখুন। কারণ আজ আমরা আমাদের এই কনটেন্টে আলোচনা করব হার্টের রোগীর খাবার তালিকা সম্পর্কে। সেই সাথে আরো জানাবো, হার্টের সমস্যা থেকে পরিত্রান পাওয়ার উপায়, এর লক্ষণ এবং হার্ড অ্যাটাক থেকে মুক্তি পাওয়ার বাছাইকৃত কিছু কলাকৌশল। তাহলে চলুন কথা না বাড়িয়ে মূল আলোচনা শুরু করি।
অন্য পোস্টঃগোলাপ জল দিয়ে ফর্সা হওয়ার উপায়
হার্টের অসুখ কেন হয়?
ইতিমধ্যে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের পরীক্ষা দ্বারা প্রমাণিত হয়েছে, অস্বাস্থ্যকর খাদ্যভাস যেমন ধরুন: খাবারে অত্যধিক মসলা যোগ কর, অত্যধিক লবণ খাওয়া, খাবারের পরে মিষ্টি খাওয়া ইত্যাদি কিছু অভ্যাস কার্ডিওভাসকুলার অর্থাৎ হৃদরোগের অন্যতম প্রধান কারণ।
আর এটা আমাদের সবারই কম বেশি জানা রয়েছেঃ কোলেস্টেরলের পরিমাণ বেড়ে গেলে হার্টের সমস্যা হয়ে থাকে। আর দেহের রক্তে কোলেস্টেরলের পরিমাণ কমানো সম্ভব হয় শুধুমাত্র খাদ্য ভাসের পরিবর্তন করে। কারণ একটা মানুষ যদি কোলেস্টেরল সমৃদ্ধ খাবার কম খায় তাহলে তার দেহের রক্তে এর পরিমাণ ধীরে ধীরে কমে যায়। আর বেশি খেলে অধিক হারে বৃদ্ধি পায়। ফলে রক্ত সঞ্চালনকে ব্যাহত করে এবং শরীরের নানা জটিল সমস্যা সৃষ্টি করে।
যেমন ধরুন: ডিমের কুসুম ও মাংস। এই দুটি খাবারে উচ্চমাত্রায় কোলেস্টেরল রয়েছে। হার্ট অ্যাটাক হলে হার্টের কোন একটি রক্তনালীতে রক্ত চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। আর রক্তনালীর গায়ে চর্বি জমার কারণে হার্টের রক্তনালী শুরু হয়ে যায়। ঠিক তখন রক্তনালীতে রক্ত জমাট বাঁধার কারণে হার্ট এটাক হয়ে থাকে। আর এজন্যই হৃদরোগের ঝুঁকি এড়াতে খাদ্যাভাসের দিকে নজর দেওয়াটা অধিক বেশি জরুরী।
যদি কেউ প্রশ্ন করে হার্টের অসুখ কেন হয়? তাহলে তার একটাই উত্তর সবার আগে বেরিয়ে আসবে সেটা হলো, অস্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়া এবং খাবারের তালিকায় পরিমিত পুষ্টি সমৃদ্ধ খাবার না থাকা। অর্থাৎ
➡️খাবারের তালিকায় আঁশযুক্ত খাবার না থাকা।
➡️স্যাচুরেটেড ফ্যাট বা জমাট বাধা চর্বি জাতীয় খাবার অধিক হারে খাওয়া।
➡️ভিটামিন ও মিনারেল সমৃদ্ধ খাবারের পরিমাণ খাদ্য তালিকায় অত্যন্ত কম থাকা। ও
➡️অতিরিক্ত মোটা হয়ে যাওয়া।
তবে হ্যাঁ, কিছু সাধারন অভ্যাস রয়েছে যা বিশ্বব্যাপী হার্টের সমস্যার কারণ হিসেবে পরিগণিত হয়ে থাকে। সেগুলো হলো:
➡️ধূমপান
➡️অতিরিক্ত অ্যালকোহল গ্রহণ
➡️অতিরিক্ত ওজন
➡️ব্যায়াম না করা
➡️অনুপযুক্ত ডায়েট।
➡️স্বাস্থ্যবিধি মেনে না চলা
➡️অস্বাস্থ্যকর জীবনধারা
➡️মানসিক চাপ
➡️নিদ্রাহীনতা
এবং হৃদরোগের সতর্কতা লক্ষণ গুলোকে স্বাভাবিক মনে করে উপেক্ষা করা।
আর তাই আমাদের প্রত্যেকের উচিত এই বিষয়গুলোকে মাথায় রেখে নিজেদেরকে সুস্থ রাখার জন্য আগে থেকেই এলার্ট থাকা। এখন কথা হল আপনি না হয় জানলেন, হার্টের রোগ কেন হয়? কিন্তু আপনি যে একজন হার্টের রোগী সেটা কি কি লক্ষণ দেখে বুঝতে পারবেন? চলুন এবার আমরা সেইটাই জেনে নেই।
হার্টের সমস্যার লক্ষণ কি কি?
সত্যি বলতে সতর্কতা একটি মানুষকে খুব সহজেই যে কোন প্রকারের বিপদ থেকে বাঁচিয়ে নিতে পারে। কিন্তু সমস্যা এখানেই, আমরা প্রায় ৯৯% মানুষ যেকোনো সমস্যাকে সঙ্গে সঙ্গে গ্রহণ করি না বরং রেখে দেই পরবর্তী সময়ের জন্য, যতক্ষণ না পর্যন্ত শারীরিকভাবে সম্পূর্ণ ভেঙে পড়ছি। আর এজন্যই মূলত অকালেই মৃত্যুবরণ করাটা একটি স্বাভাবিক ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে।
তাই ভুলেও যে কয়েকটি লক্ষণ আপনার মাঝে দেখা দিলে বা আপনার নিকটস্থ মানুষের মাঝে দেখা দিলে অবহেলা করবেন না।
১. বুকে ব্যথা
হ্যাঁ যদি হঠাৎ করে বুকের মাঝখানে প্রচন্ড ব্যথা অনুভব হয় এবং সেই ব্যথা আসতে আসতে চলে অথবা বাম কাজ ও হাতে ছড়িয়ে পড়ে তাহলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। কারণ বুকে ব্যথা হওয়া হার্টের প্রধান লক্ষণ।
২. শ্বাসকষ্ট
যদি আপনার শ্বাসকষ্ট বা অন্য কোন সমস্যা না থাকে আর হঠাৎ করেই আপনার দম ফুরিয়ে যাওয়ার সমস্যার আবির্ভাব ঘটে তাহলে বুঝে নেবেন আপনার হার্ট অ্যাটাকের সম্ভাবনা রয়েছে। তাই এক সেকেন্ড ও দেরি নয় চিকিৎসকের শরণাপন্ন হন। কারণ শ্বাসকষ্ট হওয়াটাও হার্ট এটাকের লক্ষণ।
৩. অতিরিক্ত ঘাম
অতিরিক্ত গরমে সবাই ঘামবে এটা স্বাভাবিক। কিন্তু তারপরেও একটা মাত্রা রয়েছে। তাই আপনার কাছে যদি কখনো মনে হয় আপনি অস্বাভাবিকভাবে ঘামছেন তাহলে মনে করবেন আপনার নিশ্চয় কোন সমস্যা রয়েছে, হয়তো হার্ট এটাক করতে পারেন। তাই এটাকেও অবহেলা না করে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
শুধু তাই নয় এর পাশাপাশি আপনি যদি হুটহাট অজ্ঞান হয়ে যান, অস্বাভাবিক কাশি হয়, মাথা ব্যথা করে, খুব তাড়াতাড়ি ক্লান্ত হয়ে পড়েন, এবং অনিয়মিত পালস রেট হয়ে থাকে তাহলে বুঝবেন আপনার হার্টের সমস্যা রয়েছে এবং আপনি বা আপনার নিকটস্থ সেই ব্যক্তির হার্ট করার নাইন্টি পার্সেন্ট সম্ভাবনা রয়েছে।
অন্য পোস্টঃশসা দিয়ে ফর্সা হয়ে ওঠার উপায়
হার্টের রোগীর খাবার তালিকা
হৃদরোগে আক্রান্ত ব্যক্তিদের জন্য সবসময় পরিণত খাবার থাকতে হবে ডায়েট চার্ট—এ।
নাম্বার ১. শাকসবজি
হার্টের সমস্যা থেকে বাঁচার জন্য শাক সবজির কোন জুড়ি নেই। সবুজ পাতাযুক্ত সবজি, লাউ, ফেডিফিঙ্গার, বাঁধাকপি, ফুলকপি, বিটরুট ইত্যাদি অ্যান্ড অক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ খাবার হার্টের সমস্যা নিরাময়ে ভূমিকা রাখে।
নাম্বার ২. বাদাম ও বীজ
গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে, আখরোট, বাদাম, সনের বীজ, চিনাবাদাম, কুমড়ার বীজ, তিলের বীজ, সিমের বীজ ইত্যাদি সবই হার্ট সুস্থ রাখার জন্য পুষ্টি সমৃদ্ধ খাদ্য। যাতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে পুষ্টি উপাদান, যা হার্টের রোগীদের সুস্থ রাখতে সাহায্য করে।
নাম্বার ৩. মাংস ও মাছ
চর্বি হীন মাংস, মাছ হার্টের রোগীদের আদর্শ খাবার। সেই সাথে রয়েছে ডিম। যেগুলো খুব সহজেই একজন মানুষের শরীরের রক্তের কোলেস্টেরলের মাত্রা কমাতে সাহায্য করে। তাই হার্টের সমস্যা থাকলে আপনি আপনার ডায়েট চার্ট এ এটিকে অবশ্যই রাখবেন।
নাম্বার ৪. দুগ্ধজাত পণ্য
স্কিমড মিল্ক, ঘরে তৈরি পনির এবং কম চর্বিযুক্ত দই হার্টের রোগীদের জন্য ভাল খাবার। কারণ এতে থেকে প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন পায় শরীর, যে কারণে খুব সহজেই হার্টের সমস্যা নিরাময় হওয়ার সম্ভাবনা বাড়ে।
নাম্বার ৫. অন্যান্য খাবার
হার্টের রোগীদের জন্য আরও যেসব খাবার খাওয়াটা জরুরী সেগুলো হল
➡️রসুন
➡️সূর্যমুখী তেল
➡️বাদাম তেল
➡️ঘি
➡️সরিষার তেল
➡️অলিভ অয়েল
➡️তিলের তেল
➡️রাইস ব্রান অয়েল
➡️ওটস
➡️ডালিয়া
➡️সুজি
➡️বাদামি চাল
➡️লাল চাল
➡️রাজগিরা
➡️গ্রিন টি
➡️ভেষজ চা
➡️বাটার মিল্ক
➡️দারুচিনির জল
➡️আদা চা
➡️ পরিমাণ মতো চিনি।
কারণ এই প্রত্যেকটি খাবারের রয়েছে ফাইবার প্রোটিন এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট উপাদান যেগুলো রক্তে কোলেস্টেরলের মাত্রা কমাতে ভূমিকা রাখে এবং হার্টের রোগীদের সমস্যা নিরাময়ের সাহায্য করে।
হার্টের রোগীদের জন্য আদর্শ ফল
হার্টের রোগীদের জন্য সবচেয়ে আদর্শ ফল রয়েছে। আর তার সংখ্যা হাতে গোনা কয়েকটি মাত্র। শুধুমাত্র এগারটি ফল যে ফলগুলো খেলে হার্টের রোগীদের কোনরকম সমস্যা হবে না, বরং ধীরে ধীরে সে সমস্যা থেকে পরিত্রাণ পাবে। সেই ফলগুলো হল
➡️পেয়ারা
➡️পেঁপে
➡️কমলা
➡️ডালিম
➡️আপেল
➡️নাশপাতি
➡️মোসাম্বি
➡️অ্যাভোকাডো
➡️বেরি
➡️আঙ্গুর
শেষকথা,তো সুপ্রিয় দর্শক এই ছিল আমাদের আজকের হার্টের রোগীর খাবার তালিকা আর্টিকেলটির আলোচিত পর্ব। তো যদি কোন মতামত থেকে থাকে আমাদের কমেন্ট করে জানান সেই সাথে নিয়মিত এমন গুরুত্বপূর্ণ টপিক সম্পর্কে জানতে আমাদের সাথে থাকুন। সবাই ভাল থাকবেন সুস্থ থাকবেন খুব তাড়াতাড়ি আবারো নতুন টপিকে নতুন কোন আলোচনা পর্বে আপনাদের সাথে আপনাদের দেখা হবে। সবাইকে খোদা হাফেজ।
More Tag
হার্টের জন্য উপকারী সবজি, হার্টের সমস্যা গুলো কি কি, হার্টের পরীক্ষা কি কি, হার্টের রোগীর জন্য দুধ, হার্টের জন্য উপকারী ফল, হার্টের জন্য ক্ষতিকর খাবার