ডায়াবেটিস রোগীর খাদ্য তালিকাঃ বিশ্বে প্রতি সাত সেকেন্ডে একজন মানুষ ডায়াবেটিস রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। আর ইতোমধ্যে ডায়াবেটিসের কারণে বিশ্বে প্রতি বছর ১০ লাখেরও বেশি মানুষের মৃত্যু ঘটে চলেছে। সচরাচর পরিচিত রোগ গুলোর মধ্যে অন্যতম কমন একটি রোগ ডায়াবেটিস। যে রোগে যে কেউ যেকোনো সময় আক্রান্ত হতে পারে।
আমাদের শরীরে যখন গ্লুকোজের মাত্রা বেড়ে যায় অর্থাৎ শরীর যখন রক্তের সব চিনিকে ভাঙতে ব্যর্থ হয় আর অধিক হারে বেড়ে যায় চীনের মাত্রা তখনই ডায়াবেটিস হয়।। যার উপলক্ষ হিসেবে দেখা দেয় হার্ট অ্যাটাক স্ট্রোক এর মত ভয়াবহ সমস্যার। আমরা ইতোমধ্যে অনেকেই এই রোগে আক্রান্ত, আবার অনেকেই সুস্থ রয়েছি।
কিন্তু ডায়াবেটিস যেহেতু এমন একটা রোগ যে, কখন কার হবে সেটা একদমই বলার অপেক্ষা রাখে না, তাই আমাদের প্রত্যেকেরই উচিত এই সম্পর্কে প্রাথমিক ধারণা থাকা। সেই সাথে জেনে রাখা উত্তম ডায়াবেটিস রোগীর খাদ্য তালিকা সম্পর্কে।
দর্শক, আজ আমরা আপনাদেরকে বলবো আপনি যদি কখনও ডায়াবেটিস রোগে আক্রান্ত হয়ে থাকেন তাহলে কি কি খাদ্য আপনার খাদ্য তালিকায় রাখবেন। তাই যদি এই বিষয়টি সম্পর্কে জানার প্রয়োজন মনে করেন তাহলে, আমাদের এই আর্টিকেলটি সম্পূর্ণ মনোযোগ সহকারে পড়তে থাকুন।
আজ আমরা এখানে এমন কিছু খাবারের নাম উল্লেখ করব যেগুলো খেলে আপনার ডায়াবেটিস একদমই হবে না। সেই সাথে উল্লেখ করবো ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হয়ে থাকলে আপনি কি কি খাবার খেয়ে সেটা নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারবেন। তাহলে চলুন, স্টেপ বাই স্টেপ জেনে নেই ডায়াবেটিস রোগীর খাদ্য তালিকা প্লাস আরো কিছু বিস্তারিত জানা অজানা তথ্য।
ডায়াবেটিস কি
ডায়াবেটিস হলো একটি শারীরবৃত্তীয় প্রক্রিয়া, যা কার্বোহাইড্রেট এবং গ্লুকোজ, গ্লুকোজ অক্সিডেশন সম্পূর্ণরূপে সনাক্ত করা হয় না।।
সহজ ভাবে বলতে গেলে, ডায়াবেটিস এক ধরনের মেটাবলিক ডিজঅর্ডার বা শারীরবৃত্তীয় কার্যক্রমের সমস্যা তৈরি করে এমন একটি রোগ।
মূলত এই ক্ষেত্রে শরীর অগ্ন্যাশয় এর মাধ্যমে পর্যাপ্ত ইনসুলিন উৎপাদন ও তা ব্যবহার করতে পারেনা। আবার কখনো কখনো অনেকের ক্ষেত্রে ইনসুলিন একেবারেই নষ্ট হয়ে যায়। যেকোনো খাবার খাওয়া পর আমাদের শরীর সেই খাদ্যের শর্করাকে ভেঙে চিনিতে রূপান্তরিত করে।
কিন্তু শরীর যখন ইনসুলিন এর উৎপাদন করতে পারে না অথবা ঠিকমতো কাজ করতে পারে না তখন চিনির পরিমাণ অতিরিক্ত বেড়ে যায়। আর তখনই এই ডায়াবেটিস রোগটির আবির্ভাব ঘটে।
জানলে অবাক হবেন জাতীয় জনসংখ্যা গবেষণা ও প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠানের একটা জরিপ থেকে জানা গেছে যে, বাংলাদেশে নাকি মোট ডায়াবেটিস আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা এক কোটি দশ লাখ। এদের মধ্যে ১৮ থেকে ৩৪ বছর বয়সিদের সংখ্যা ২৬ লাখ আর ৩৫ বছরের বেশি বয়সীদের সংখ্যা ৮৪ লাখ। ধরতে গেলে ডায়াবেটিসে আক্রান্ত নেই এমন পরিবারের সংখ্যা খুব কমই রয়েছে পুরো বিশ্বতে।
ডায়বেটিস কেন হয়?
ডায়াবেটিস একটি ভয়াবহ সমস্যা, যে রোগটিতে আক্রান্ত হলে মানুষের জীবনের নিশ্চয়তা খুবই কম। সেই সাথে যতদিন বেঁচে রয়েছে ততদিন ভোগ করতে হয় নানা সমস্যা। আর এর এত এত সমস্যার কারণে সবার মনে হরহামেশাই একটা প্রশ্ন আসে, ডায়াবেটিস কেন হয়ে থাকে, কি তার কারণ?
জানা গেছে, মূলত ডায়াবেটিস হওয়ার অন্যতম কারণ হলো লাইফ স্টাইল। যাদের লাইফ স্টাইল অস্বাভাবিক তাদের অবশ্যই ডায়াবেটিস হবে। আর যারা স্বাভাবিক জীবন যাপন করে তারা ডায়াবেটিস নামক অসুখের হাত থেকে নিজেকে খুব সহজেই মুক্ত রাখতে পারবে। এই রোগের মূলত প্রধান কারণ হিসেবে ইতিমধ্যে বিবেচনা করা হয়েছে।
মানসিক চাপ
অনিয়মিত খাবার
ব্যায়ামের অভাব
আসলে আমরা সবাই জানি যে, ব্যায়াম না করলে আমাদের শরীরে যে কোন রোগ বাসা বাঁধতে পারবে। আর সেটা ডায়াবেটিস হোক বা অন্য কোন রোগ। আর তাই স্বাভাবিকভাবে আমরা যদি একটু গভীরভাবে চিন্তা করি তাহলে, এমনি বুঝতে পারব ডায়াবেটিস হওয়ার আসলে অন্যতম কারণগুলো কি কি? আর কেনই বা তাদেরকে বিবেচনা করা হয়েছে।
তাই আপনি যদি নিজের সুস্থতা কামনা করেন তাহলে অবশ্যই নিজেকে মানসিক চাপ থেকে মুক্ত রাখার চেষ্টা করুন। নিয়মিত পুষ্টি সমৃদ্ধ খাবার খান এবং নিয়মিত ব্যায়াম করার অভ্যাস গড়ে তুলুন।
ডায়াবেটিসের লক্ষণ কি কি?
ডায়াবেটিস কি.? কেন হয়? এ সম্পর্কে আমরা ইতোমধ্যে জেনেছি। এখন কথা হল আপনার যে ডায়াবেটিস হয়েছে সেটা আপনি কি উপসর্গ দেখে বুঝতে পারবেন বা কি কি লক্ষণ প্রকাশ পেলে আপনি চিকিৎসকের শরণাপন্ন হবেন?
তাদেরকে বলছি ডায়াবেটিস রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিদের মূলত পাঁচটি উপসর্গ দেখা দেয়। সেগুলো হলো
ক্লান্তি বা অবসাদগ্রস্ততা
দ্রুত ওজন কমে যাওয়া
ঘন ঘন মূত্র ত্যাগ
চরম ক্ষুধা এবং তৃষ্ণা
ও শুকনো ত্বক
তাই আপনার মধ্যে যদি এই কয়েকটি লক্ষণ প্রকাশ পায়, তাহলে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হন। কখনো লোকমুখে বা চটি ডাক্তারের কথা শুনে আনুমানিকের ওপর ঔষধ সেবন করবেন না। মনে রাখবেন, যে কোন ওষুধের কিছু না কিছু পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া থেকে থাকে। তাই আপনি একজন ভালো চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণ করুন এবং তারপর তাদের দেওয়া ইন্সট্রাকশন ফলো করে খুব সহজেই ডায়াবেটিস রোগ থেকে নিজেকে বের করে নিয়ে আসার চেষ্টা করুন।
ডায়াবেটিস রোগীর খাদ্য তালিকা
ডায়াবেটিস রোগ নিরাময়ের জন্য চিকিৎসকের কাছে ঔষধের পাশাপাশি খাবারের একটা পরামর্শ নিলে আপনি অনেক বেশি উপকৃত হবেন। আমরা মূলত এই পয়েন্টে আপনাদেরকে এমনই কিছু খাবারের নাম বলব যেগুলো খেলে আপনার ডায়াবেটিস রোগ নিয়ন্ত্রণে থাকবে। আর যারা এখনো পর্যন্ত সুস্থ রয়েছেন তাদের শরীরে ডাইবেটিস কাছেও ঘেঁষতে পারবে না।
তাহলে চলুন এবার জেনে নেই আপনি যদি একজন ডায়াবেটিস রোগী হয়ে থাকেন তাহলে আপনার খাদ্য তালিকায় কি কি খাবার রাখা অত্যন্ত আবশ্যক।
নাম্বার ১: ফলমূল ও শাকসবজি
নাম্বার ২: শ্বেতসার সমৃদ্ধ খাবার
নাম্বার ৩. প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার
নাম্বার ৪. দুগ্ধজাত খাবার ও দুধ
নাম্বার ৫: বিভিন্ন ধরনের তেল, মাখন, ঘি সমৃদ্ধ খাবার।
আর আপনারা নিশ্চয়ই এটা জানেন, আমাদের প্রত্যেকের শরীরে দৈনিক কতটুকু খাবার এবং পানির প্রয়োজন রয়েছে তার সম্পূর্ণভাবে নির্ভর করে আমাদের বয়স-লিঙ্গ-শারীরিক পরিশ্রম এবং আমরা আমাদের ওজন ও ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখতে কি ধরনের লক্ষণ নির্ধারণ করছি তার ওপর।
একটা কথা ভুলে গেলে চলবে না, সুষম খাদ্যভাসের অর্থ এই নয় যে, অধিক হারে পুষ্টি সমৃদ্ধ খাবার খাওয়া। সুষম খাদ্যভাসের অর্থ হলো, নির্দিষ্ট কিছু খাবার বেশি পরিমাণে এবং অন্যান্য খাবারগুলো কম পরিমাণে খাওয়া। যাতে শরীরের সকল প্রকারের পুষ্টি চাহিদা পূরণ হয়।
কারণ যেকোনো একটি খাবার অধিক পরিমাণে খেলে কখনোই আমাদের দেহে পুষ্টি চাহিদা পূরণ করতে পারবে না। কারণ একেক খাবারে রয়েছে একেক পুষ্টি উপাদান, যা আমাদের শরীরের জন্য কার্যকরী। আর আমাদের শরীরে তো শুধুমাত্র একটি পুষ্টি উপাদান যথেষ্ট নয়। তাই প্রত্যেকটি পুষ্টি উপাদান পরিমাণ মত থাকা দরকার। এজন্য ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখতে বা আপনি যদি ডায়াবেটিস রোগে আক্রান্ত না হয়ে থাকেন পূর্বের সর্তকতা অবলম্বন করতে, পুষ্টি সমৃদ্ধ খাবার খান এবং সবুজ শাকসবজি, ডিম, মাছ, মাংস, সিম, লাল এবং বাদামি চালের ভাত, লাল আটার রুটি অথবা পাউরুটি, দই, ছানা, পনির ইত্যাদি নানা খাবার পরিমান মত খাওয়ার চেষ্টা করুন।
ডায়াবেটিসে খাদ্যের ভূমিকা
ডায়াবেটিস রোগীদের খাবার সম্পূর্ণটা নির্ভর করে ক্যালরির উপর। ইতোমধ্যে আমরা জেনেছি খাবারের অনিয়ম, মানসিক চাপ, অস্বাভাবিক জীবন যাপন এবং কোনরকম শরীরচর্চা না করার ফলে শরীরে আগমন ঘটে ডায়াবেটিস রোগের। তাই ডায়াবেটিস রোগীদের সঠিক পরিমাণ খাবার খাওয়া এবং সঠিক সময়ে খাবার খাওয়ার উপর বিশেষ নজর দেওয়াটা অতি আবশ্যক। আর এই রোগ থেকে মুক্তির জন্য খাদ্যের ভূমিকা সত্যিই অপরিসীম।
ডায়াবেটিস রোগীর খাদ্য চার্ট
আপনি যদি ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হয়ে থাকেন তাহলে আপনার নিচে উল্লেখিত এই চার্টটি অনুসরণ করা অতি আবশ্য।
সময় খাবার
সকাল ০৬ টা এক চামচ মেথি গুড়া
এবং পানি
সকাল ০৭ টা চিনি ছাড়া এক কাপ চা,
সাথে এক থেকে দুইটা বিস্কিট
সকাল ৮.৩০ এক প্লেট
ওটমিলস/উপপমা+অর্ধেক
বাতি শস্যযুক্ত খাবার+চিনি
ছাড়া ১০০ মিলি লিটার ক্রিম
মুক্ত দুধ।
সকাল ১০.৩০ একটি ফল, চিনি ছাড়া বাটার
মিল্ক বা লেবুর পানি
দুপুর বেলার খাদ্যে দুইটা আটার রুটি, এক
বাটি ভাত, এক বাটি ডাল,
এক বাটি দই অর্ধেক কাপ
সয়াবিন অথবা পনির,
সবজি,অর্ধেক বাটির সবুজ
সবজি, এক প্লেট সালাদ।
বিকাল চারটা এক কাপ চা, ১-২ টা কম
চিনি যুক্ত বিস্কুট বা টস।
সন্ধ্যা ছয়টা এক কাপ সুপ
সেই সাথে ৮:৩০ মিনিটে দুটি আটার রুটি, এক বাটি ভাত, এক বাটি ডাল, অর্ধেক বাটি সবুজ সবজি, এক প্লেট স্যালাত এবং ১০:৩০ মিনিটে চিনি ছাড়া এক কাপ ক্রিম খেতে পারেন।
শেষকথা,তো দর্শক বন্ধুরা এই ছিল আমাদের ডায়াবেটিস রোগীর খাদ্য তালিকা সম্পর্কিত আজকের আলোচনা পর্ব। তো যদি কোন মতামত থেকে থাকে তাহলে অবশ্যই কমেন্ট করে জানাবেন সেইসাথে, নতুন টপিকের নতুন কোন আলোচনাতে আমাদের সাথে সামিল হওয়ার জন্য আমাদের ওয়েবসাইটটি সাবস্ক্রাইব করে রাখবেন। আল্লাহ হাফেজ।
More tag
ডায়াবেটিস রোগীর বিস্কুট, ডায়াবেটিস রোগীর সবজি,হার্টের এবং ডায়াবেটিস রোগীর খাবার তালিকা, ডায়াবেটিস রোগীর নিষিদ্ধ খাবার তালিকা, ডায়াবেটিস রোগীর খাদ্য তালিকা ডাক্তার জাহাঙ্গীর কবির,খাবার ডায়াবেটিস রোগীর খাদ্য তালিকা, ডায়াবেটিস রোগীর খাদ্য তালিকা ফল, ডায়াবেটিস রোগীর খাদ্য তালিকা পিডিএফ, কিডনি এবং ডায়াবেটিস রোগীর খাদ্য তালিকা, ডায়াবেটিস রোগীর খাদ্য তালিকা ৫