স্বাধীনতা তুমি কবিতা টি শামসুর রহমানের একটি অসাধারণ কবিতা। এই কবিতাতে বাংলাদেশের যুদ্ধকালীন বিভিন্ন বিষয় তুলে ধরা হয়েছে। তাছাড়া এই কবিতায় কবি খুবই আত্মবিশ্বাসের সাথে বলেছেন যে বাংলার দামাল ছেলেরা বা মুক্তিযোদ্ধারা খুব সহজেই বাংলাদেশ স্বাধীন করবে। শামসুর রহমান তার জীবনে যত কবিতা লিখেছেন সেই সকল কবিতাগুলোর মধ্যে স্বাধীনতা তুমি কবিতা টি উল্লেখযোগ্য একটি কবিতা। তিনি মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে ধারণ করেই মূলত এই কবিতাটি লিখেছিলেন।
স্বাধীনতা তুমি
লিখেছেন শামসুর রহমান
স্বাধীনতা তুমি,
রবি ঠাকুরের অজর কবিতা,অভিনাশি গান
স্বাধীনতা তুমি
কাজী নজরুল ঝাঁকড়া চুলের বাবরি দোলানো
মহান পুরুষ সৃষ্টিসুখের উল্লাসে কাঁপা
স্বাধীনতা তুমি
শহীদ মিনারে অমর একুশে ফেব্রুয়ারির উজ্জ্বল সভা
স্বাধীনতা তুমি
পতাকা-শোভিত স্লোগানমুখর ঝাঁঝালো মিছিল
স্বাধীনতা তুমি
ফসলের মাঠে কৃষকের হাসি
স্বাধীনতা তুমি
অন্ধকারের খাঁ খাঁ সীমান্তে মুক্তিসেনার চোখের ঝিলিক।
স্বাধীনতা তুমি
বটের ছায়ায় তরুণ মেধাবী শিক্ষার্থীর
শানিত কথার ঝলসানি-লাগা সতেজ ভাষণ।
স্বাধীনতা তুমি
চা-খানায় আর মাঠে-ময়দানে ঝোড়ো সংলাপ।
স্বাধীনতা তুমি
কালবোশেখীর দিগন্তজোড়া মত্ত ঝাপটা।
স্বাধীনতা তুমি
শ্রাবণে অকূল মেঘনার বুক
স্বাধীনতা তুমি পিতার কোমল জায়নামাজের উদার জমিন।
স্বাধীনতা তুমি
উঠানে ছড়ানো মায়ের শুভ্র শাড়ির কাঁপন।
স্বাধীনতা তুমি
বোনের হাতের নম্র পাতায় মেহেদীর রঙ।
স্বাধীনতা তুমি বন্ধুর হাতে তারার মতন জ্বলজ্বলে এক রাঙা পোস্টার।
স্বাধীনতা তুমি
গৃহিণীর ঘন খোলা কালো চুল,
হাওয়ায় হাওয়ায় বুনো উদ্দাম।
স্বাধীনতা তুমি
খোকার গায়ের রঙিন কোর্তা,
খুকীর অমন তুলতুলে গালে
রৌদ্রের খেলা।
স্বাধীনতা তুমি
বাগানের ঘর, কোকিলের গান,
বয়েসী বটের ঝিলিমিলি পাতা,
যেমন ইচ্ছে লেখার আমার কবিতার খাতা।
স্বাধীনতা তুমি কবিতার মূলভাব/স্বাধীনতা তুমি কবিতা লিরিক্স
এই কবিতাটির মধ্যে হাজার ১৯৭১ সালের বাংলাদেশের চিত্র অনেকটাই ফুটে উঠেছে।কবি এখানে বলেছেন মহান স্বাধীনতা কে পাওয়ার জন্য রক্তগঙ্গায় ভাসতে হচ্ছে, খাণ্ডবদাহন এর শিকার হতে হচ্ছে একজন ছকিনা বিবি কে। তেমনি একজন হরিদাসীর মত লক্ষ লক্ষ নারীর জীবন দুর্বিষহ হয়েছে, বিপর্যয় নেমে এসেছে সবখানে যে শহর ও নগর ছিল শান্ত এবং সিদ্ধ, প্রকৃতি ঘেরা সাধারণ মানুষের আবাস এবং কর্মমুখর স্থল , সেই শহরে কবির ভাষায় দানবের মত চিৎকার করে জলপাইয়ের রঙের ট্যাঙ্ক এসে যেন নিমিষের মধ্যে সবকিছু ধ্বংস করে দিচ্ছে। নানান ধরনের অস্ত্রশস্ত্র সব ভরে যাচ্ছে শহরজুড়ে মানুষের বুক চিরে রক্ত বাহির করার জন্য, দেবার জন্য নয় পরে চরণগুলো তেই আছে,মা-বাবার লাশের উপরে হামাগুড়ি খাচ্ছে অবুঝ শিশুরা।
আর এই সকল দৃশ্য দেখে বেদনা এবং আর্তনাতে কেঁদে উঠেছে পথের কুকুর। জীবনের শেষ মুহূর্তে এসে বৃদ্ধ পড়ন্ত বিকেল শেষে বিকেলের কোনও তেজ নেই,আলো নেই এক কথায় যেন অন্ধকার নেমে এসেছে। কবি এখানে স্পষ্টভাবেই বলেছেন মোল্লা বাড়ির বউ যার সুখের স্বপ্ন তছনছ হয়ে যাচ্ছে। বউটি যে খুঁটি ধরে আছে সেটুকু নড়বড়ে এবং পুড়ে যাচ্ছে।
ঘরের পাশেই ধূলিমাখা সেই চির চেনা পথ। হয়তো প্রিয় কোন স্বজনের জন্য ঘর থেকে বেরিয়ে বাজার কোন ঘরই নেই সেই অনাথ অবহেলিত কি শরীরটা আহারের জন্য প্রহর গুনছে। তারপরে কবি পূর্ব বাংলার সাধারন খেটে খাওয়া মানুষের কথা তুলে ধরেছেন। যারা বাস করে শাহবাজপুরে মেঘনা নদীর পাড়ে এবং ঢাকায়। এরা হলেন সগীর আলী, রুস্তম মিয়া এবং মতলব শেখ।কবি তাদের পাশাপাশি আরও একজন তরুণ যুবকের কথা বলেছে যে হয়তো কোন কলেজের ছাত্র ছিল সে কলম ফেলে দিয়ে রাইফেল হাতে নিয়েছে এবং দেশমাতৃকার জন্য যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ছে। কবি ভাষায় বিশ্বমানচিত্রে একটি নতুন স্বাধীন দেশের জন্ম হবে যে দেশটি মুক্তিযোদ্ধারা যুদ্ধ করে করবে।
কবি কবিতার কবিতার শেষ অংশে বলেছেন খুবই আত্মবিশ্বাসের সাথে আমরা পৃথিবীতে গর্জন করে বলতে চাই খুব দ্রুতই বিশ্বমানচিত্রে একটি নতুন স্বাধীন দেশের আবির্ভাব ঘটবে। লাল সবুজের পতাকা নিয়ে খুব শীঘ্রই বিজয় মুক্তিযোদ্ধারা আসবে। এবং তিনি শেষ চরণে বলেছেন তোমাকে আসতেই হবে হে স্বাধীনতা।
স্বাধীনতা তুমি কবিতা নিয়ে কিছু কথা
স্বাধীনতা তুমি কবিতাটি কার লেখা ইতিমধ্যেই সে সম্পর্কে জেনে গিয়েছেন। এই কবিতাটি লিখেছেন শামসুর রহমান। স্বাধীনতা তুমি কবিতার রচয়িতা কে সেটাও বলে দিয়েছি। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে সেই সকল দৃশ্যগুলোকে নিয়ে স্বাধীনতা তুমি কবিতা টি লেখা হয়েছে।এই কবিতায় মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন বিভিন্ন বিষয়ে খুব সুন্দর ভাবে তুলে ধরেছেন কবি শামসুর রহমান।পরিশেষে বলাই চলে স্বাধীনতা তুমি কবিতাটি দারুন একটি কবিতা।