বনলতা সেন কবিতা

বনলতা সেন কবিতা

বাংলায় জনপ্রিয় যত কবিতা রয়েছে তাদের মধ্যে বনলতা সেন কবিতা খুবই জনপ্রিয়। জীবনানন্দ দাশের এই কবিতাটি অনেকে তাদের পছন্দের তালিকায় রেখেছেন। এই কবিতাটি এতোটাই সুন্দর যে একবার পড়লে বার বার পড়তে মন চায়।বনলতা সেন এই কবিতাটি আমরা সাধারণত রোমান্টিক কবিতা হিসেবে আমরা চিনে থাকি।


বনলতা সেন কবিতা পরিচিতি/বনলতা সেন কবিতা বিশ্লেষণ/বনলতা সেন প্রেমের কবিতা


বনলতা সেন কবিতাটির রচয়িতা হচ্ছে জীবনানন্দ দাশ। সর্বপ্রথম এই কবিতাটি প্রকাশিত হয়েছিল ১৯৩৫ খ্রিস্টাব্দে।ভারত এবং বাংলাদেশ এই কবিতাটি সর্বপ্রথম বাংলা ভাষায় প্রকাশিত হয়েছিল। ১৯৩৫ খ্রিস্টাব্দের ডিসেম্বর মাসে এই কবিতাটি প্রথম পাঠকের হাতে এসে পৌঁছায়।কবি জীবনানন্দ দাশ ১৯৪২ সালে তৃতীয় কাব্যগ্রন্থে কবিতাটি অন্তর্ভুক্ত করেন।


পরবর্তীতে কবি জীবনানন্দ দাশ তার চতুর্থ কাব্য মহা পৃথিবীতে বনলতা সেন কবিতাটি অন্তর্ভুক্ত করে থাকেন। আর এই মহাপৃথিবী কাব্য গ্রন্থের প্রথম কবিতাটি ছিল বনলতা সেন কবিতা


এই কবিতাটি জীবনানন্দ দাশ যখন প্রকাশিত করেছিল তখন তিনি সবেমাত্র কলেজের চাকরি হারিয়ে ছিলেন। অর্থাৎ তিনি যখন বেকার ছিলেন সেই অবস্থায় এই কবিতাটি প্রকাশিত হয়েছিল। যারা বাংলা কবিতা প্রেমী রয়েছেন তাদের কাছে বনলতা সেন কবিতাটি দারুন একটি কবিতা। 



বনলতা সেন কবিতা/বনলতা সেন কবিতার লিরিক্স


হাজার বছর ধরে আমি পথ হাটিতেছি পৃথিবীর পথে,


সিংহল-সমুদ্র থেকে নিশীথের অন্ধকারে মালয় সাগরে অনেক ঘুরেছি যে আমি,বিম্বিসার অশোকের ধূসর জগতে 


সেখানে ছিলাম যে আমি, আরো দূর অন্ধকারে বিদর্ভ নগরে,


আমি ক্লান্ত এক প্রাণ,চারিদিকে জীবনের সমুদ্র সফেন,


আমারে দু-দন্ড শান্তি দিয়েছিল নাটোরের বনলতা সেন 


চুল তার কবেকার অন্ধকার বিদিশার নিশা, মুখ তার শ্রাবন্তীর মতো কারুকার্য,


অতিদূর সমুদ্রের পর হাল ভেঙে যে নাবিক হারায়েছে দিশা সবুজ ঘাসের দেশ যখন সে চোখে চোখে দারুচিনি-দ্বীপের ভিতর,


তেমনি দেখেছি তারে অন্ধকারে বলেছে সে, এতদিন কোথায় ছিলেন? 


পাখির নীড়ের মত চোখ তুলে নাটোরের বনলতা সেন।


সমস্ত দিনের শেষে শিশিরের শব্দের মতন সন্ধ্যা আসে, ডানায় রৌদ্রের গন্ধ মুছে ফেলে চিল,


পৃথিবীর সব রঙ নিভে গেলে পান্ডুলিপি করে আয়োজন, তখন গল্পের তরে জোনাকির রঙে ঝিলমিল,


সব পাখি ঘরে আসে -সব নদী ফুরায় -এ জীবনের সব লেনদেন,


থাকে শুধু অন্ধকার মুখোমুখি, বসিবার বনলতা সেন। 



বনলতা সেন কবিতার মূলভাব/বনলতা সেন কবিতার মূলভাব pdf


জীবনানন্দ দাশের বনলতা সেন কবিতা টি মূলত এক ধরনের রোমান্টিক কবিতা। এই কবিতায় জীবনানন্দ দাশের ভালোবাসার অভিব্যক্তি ফুটে উঠেছে।কবিতার প্রথমদিকে কবি হাজার বছরের ক্লান্তিকর আক্রমণের কথা বলেছেন। অর্থাৎ তিনি হাজার বছর ধরে পৃথিবীর পথে পথে ঘুরে ফিরেছেন। আর এই ভ্রমণ তাকে দিয়েছে শুধুই ক্লান্তি।


আর এই ক্লান্তিময় অস্তিত্বের মধ্যে ক্ষনিকের সময়ের জন্য শান্তি নিয়ে উপস্থিত হয়েছিলেন বনলতা সেন নামের এক রমণী। কবি জানাচ্ছেন সে হচ্ছে নাটোরের বনলতা সেন। 


কবিতা দ্বিতীয় পার্টে তিনি বনলতা সেনের আশ্চর্য নান্দনিক সৌন্দর্যের কথা উল্লেখ করেছেন। আর বনলতা সেনকে কবি প্রত্যক্ষ করেছেন অন্ধকারে।আর কেশরাজি সম্পর্কে কবি জীবনানন্দ দাশ লিখেছেন চুল তার কবেকার অন্ধকার বিদিশার নিশা। 


তৃতীয় স্তবকটি স্তগতোক্তির মতো মৃদু উচ্চারণে একটি স্বপ্ন কথা এখানে শোনা যায়। কবি জানাচ্ছেন দিন শেষ হয়ে গেলে সন্ধ্যা আসে ধীরে, ধীরলয়ে শিশিরপাতের টুপটাপ শব্দের মতো।তখন সাধারণত চিলের ডানা থেকে রোদের গন্ধ মুছে যায়। আর এই সময় পাখিদের ঘরে ফিরে আশার তারা এবং সব নদীদের ঘরে ফেরার ব্যাকুলতা।


আর এই সময় পৃথিবীর সব আলো মুছে যাই অন্ধকারে শুধু কয়েকটা জোনাকি জলে। সারাদিনের জাগতিক সব লেনদেন সম্পন্ন হয়েছে 

গল্পের পাণ্ডুলিপি তৈরি; তখন (কেবল) অন্ধকারে বনলতা সেনের মুখোমুখি বসে গল্প করার অবসর।আর এই হচ্ছে বনলতা সেন কবিতার ব্যাখ্যা



উপসংহারঃজীবনানন্দ দাশের বনলতা সেন কবিতা টি একটি রোমান্টিক কবিতা।পোস্টে বনলতা সেন কবিতার মূলভাব এবং সম্পূর্ণ বিশ্লেষণ করা হয়েছে আপনাদের সুবিধার জন্য। তাছাড়া বনলতা সেন কবিতা সম্পর্কিত কোন প্রশ্ন থাকলে কমেন্ট করে জানাতে পারেন। 



Akash

প্রযুক্তির খবর, শিক্ষা ও ইন্সুরেন্স, ভিসার খবর, স্বাস্থ্য টিপস ও অনলাইনে আয় সম্পর্কিত তথ্যের বিরাট একটি প্ল্যাটফর্ম।

Post a Comment (0)
Previous Post Next Post