আসসালামু আলাই কুম আশা করি আপনারা সকলেই ভালো আছেন।
করলার তেতো স্বাদের কথা আমরা সকলেই জানি এবং এর জন্য অনকের কাছেই এটা একটি অপ্রিয় খাবার। তবে আমরা হয়ত অনকেই জানি না যে করলার তিতকুটে স্বাদের পাশাপাশি এর একটি মিষ্টি গুণও আছে যা মানবদেহের জন্য খুবই উপকারি। মেদ ঝরানোর, ক্যানসার, ডায়াবিটিস, হাঁপানির ইত্যাদি অনেক ছোট বড় রোগ নিরাময়ে করলার জুস ব্যাপক কাজে আসে।
আজকে আপনাদের সাথে শেয়ার করবো করলা কি? করলার জুসের উপকারিতা কি? করলার জুসের কিছু বিশেষ গুণ? ডায়াবেটিস রোগীর জন্য করলার জুস কি কাজে লাগে? ইত্যাদি বিষয়ে।চলুন শুরু করা যাকঃ
করলা কী?
করলা হলো একটি সবজি যেটাতে যথাক্রমে ডিটামিনএ,বি,সি পাওয়া গেছে। এছাড়া করলাতে বিটা-ক্যারোটি,মিনারেল,জিঙ্ক,পটাশিয়াম,আয়রন,ম্যাঙ্গানিজ ও ম্যাগনেসিয়ামে ভরপুর। এছাড়া করলায় প্রতি ১০০ গ্রাম করলায় রয়েছে খাদ্যশক্তি ১৭ কিলোক্যালরি, কার্বোহাইড্রেটস ৩.৭০ গ্রাম, প্রোটিন ১ গ্রাম, ভিটামিন এ ৪৭১ আইইউ, ভিটামিন সি ৮৪ মিলিগ্রাম, পটাসিয়াম ২৯৬ মিলিগ্রাম, ম্যাগনেসিয়াম ১৭ মিলিগ্রাম সহ আরো বিশেষ কিছু উপাপান পাওয়া গেছে।
করলার জুসের উপকারিতা কি?
করলা
বা করলার রস খুব দ্রুত দেহের ওজন কমাতে সাহায্য করে। প্রতিদিনের ডায়েটে
করলার জুস রাখলে উচ্চরক্তচাপ কমে। রক্তে শর্করার পরিমাণও নিয়ন্ত্রণে থাকে।
করলার জুস অগ্নাশয়ের ক্যান্সার রোধ করে। করলা এই ধরনের ক্যান্সার সৃষ্টিকারী কোষগুলোকে ধ্বংশ করে দেয়।
বিজ্ঞান বিষয়ক পত্রিকা ‘পাবমেড’-এর রিপোর্ট অনুযায়ী স্তন ক্যান্সার রোধেও করলার জুসের গুরুত্ব রয়েছে।
হাঁপানি
এবং ফুসফুসের যেকোনো রোগ প্রতিরোধ করে করলার জুস গুরুত্বপূর্ণ। এমনকি
প্রতিদিন করলার জুস খেলে ত্বকেরও উপকার হয়। করলার জুসের সাথে মধু মিশিয়ে
খেলে হজম শক্তি বাড়ে। এছাড়া করলার রসের আরো অনেক উপকারিতা রয়েছে।
করলার জুসের বিশেষ কিছু গুণ?
তেতো
স্বাদযুক্ত হওয়ার ফলে আমরা প্রায় অনকেই করলা খেতে চাই না কিন্তু আমরা হয়ত
জানি না যে করলার ভিতরে কি কি বিশেষ গুণ রয়েছে যার জন্য ডাক্তাররা বিভিন্ন
রোগীদের বেশি বেশি করলা খেতে বলেন। চলুন আজকে করলার কিছু বিশেষ গুণাগুণ দেখে নেইঃ
১.ব্লাড সুগার নিয়ন্ত্রণ
করলাতে
রয়েছে কয়ারেটিন নামক একটি বিশেষ উপাদান যা রক্তের সুগারের মাত্রা কমাতে
গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। ফলে রক্তে উপস্থিত শর্করার মাত্রা
নিয়ন্ত্রণে থাকে। তাই সকল ডাক্তারগণ ডায়াবেটিস রোগীদের ব্লাড সুগার
নিয়ন্ত্রণে করলার জুস খাওয়ার পরামর্শ দেন। সকাল বেলায় করলার জুস খাওয়া
স্বাস্থ্যের জন্য অনেক উপকারি
২.রক্ত পরিশুদ্ধ রাখা
করলাতে থাকা "ব্লাড পিউরিফাইং এজেন্ট" নামক উপাদান রক্ত পরিশুদ্ধ রাখতে সাহায্য করে।
৩.দেহের ওজন কমানো
আপনি
যদি অতিরিক্ত ওজন সমস্যায় ভুগেন তাহলে আজই করলার জুস খাওয়া শুরু করে দিন
কারণ আপনি যদি প্রতিদিন করলার জুস খেয়ে যান এবং আপনার শরীরে তা সঠিক ভাবে
হজম হয় তাহলে আপনার ওজন অতি তাড়াতাড়িই স্বাভাবিক হয়ে যাবে।
৪.পাইলসের কষ্ট দূর করতে
আমাদের
চারপাশে অনেকেই পাইলসের সমস্যায় ভুগেন আমি তাদের বলবো তারা যেনও এখন থেকেই
করলার জুস খাওয়া শুরু করে দেয়। কারণ নিয়ম অনুযায়ী করলার জুস খেয়ে গেলে
আপনি খুব তাড়াতাড়িই এই সমস্যার হাত থেকে বাঁচতে পারেন। এমনকি করলা গাছের
মূল বেটে নিয়ে সেই পেস্ট পাইলসের উপর লাগালেও অনেক উপকারে আসে।
৫. রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে
প্রতিদনি
সকালে খালি পেটে করলার জুস পান করলে আপনার শরীরের রোগ প্রতিরোধ শক্তি আগের
তুলনায় অনেক বেড়ে যাবে। যার ফলে আপনি সহজেই কোনো রোগে আক্রান্ত হয়ে পড়বেন
না।
৬.দৃষ্টিশক্তি উন্নত করতে
চোখ আমাদের একটি মূল্যবান সম্পদ। করলার রসে থাকস প্রচুর পরিমানে বিটা-ক্যারোটিন আমাদের মূল্যবান চোখ ভালো রাখতে সাহায্য করে।
৭.ক্যান্সার প্রতিরোধ করতে
করলায়
থাকা বিশেষ কিছু উপাদান আমাদের শরীরে ক্যান্সারের কোষ গুলোকে নষ্ট করে
দেয়। এছাড়া অ্যানিমিয়া এবং উচ্চ রক্তচাপের মতো রোগ প্রতিরোধেও করলার জুস
ব্যাপক কাজে আসে।
৮.বাতের ব্যাথা নিরাময় করতে
দেহ
থেকে বাতেরর ব্যাথা দূর করতে ৪ চা-চামচ করলা বা করলার পাতার রস একটু গরম
করে ১.৫ চা চামচ বিশুদ্ধ গাওয়া ঘি মিশিয়ে ভাতের সঙ্গে খেলে আপনার শরীর থেকে
বাতের ব্যাথা দূর হয়ে যাবে খুল অল্প দিনেই।
৯.খাবারে রুচি আনতে
আপনার
যদি খাবারে অরুচি দেখা দেয় বা অপুষ্টিজনিত সমস্যায় ভোগেন তাহলে প্রতিদিন ১
চা চামচ করে করলার রস সকাল ও বিকালে খেলে খাবারে রুচি বাড়বে।
১০.ম্যালেরিয়া রোগ সারাতে
ম্যালেরিয়া
রোগীকে দিনে তিনটে করে করলার পাতা ও সাড়ে তিনটি আস্ত গোলমরিচ এক সঙ্গে
মিশ্রণ করে নিয়ম অনুযায়ী ৭ দিন খাওয়ালে দ্রুত সুস্থ হয়ে ওঠে। করলার পাতার
রস খেলে খুব তাড়াতাড়ি জ্বর সেরে যায়। আমাদের শরীর থেকে কৃমি দূর করতেও
করলার রস কাজ করে।
করলার পাতার রসের উপকারিতা?
১।
করলার পাতার রস খুবই উপকারী। আমাদের শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা গড়ে তোলে
এবং নানা ধরনের রোগের আক্রমণ থেকে সুরক্ষা প্রদান করে। শরীরে শক্তি আনতেও
করলার পাতার রস কাজ করে।
২। অতিরিক্ত এলকোহল খাওয়ার মাধ্যমে থেকে লিভারে সমস্যা হয়। সে সমস্যার সমাধানে করলার পাতার রস কাজে দেয়।
৩।
কলেরা বা ডায়রিয়ার প্রথম ধাপে করলার পাতার রস খেতে শুরু করলে ভালো হয়।
করলার পাতার রস, লেবুর রস ও পেঁয়াজের রস মিশিয়ে খেলে অনেক উপকার হয়।
এছাড়া করলার জুস আরো অসংখ্যা রোগ প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে।
ডায়াবেটিস রোগীর জন্য করলার জুস কি কাজে লাগে
স্বাভাবিক মাত্রার চেয়ে রক্তে বেশি শর্করা বা সুগার থাকলে তাকে ডায়াবেটিস বলা হয় । বাংলায় এই রোগকেই মধুমেহ বলে উল্লেখ করা হয়।
করলায়
প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন এ, বি ও সি রয়েছে। একই সঙ্গে এতে বিটা-ক্যারোটিন,
আয়রন, জিঙ্ক, পটাশিয়াম, ম্যাঙ্গানিজ ও ম্যাগনেসিয়াম রয়েছে যা এখন ডায়াবেটিস
রোগীর রোগ নিয়ন্ত্রনে রাখতে সাহায্য করে।
করলার জুস কিভাবে তৈরি করব
প্রথমেই
করলা ভালো করে ধুয়ে নিয়ে ছোট ছোট পিস করে কাটুন। তেতো খেতে খুব সমস্যা হলে
ব্লেন্ডারে করলার সঙ্গে অন্যান্য সবজি দিয়ে মিশ্রণ তৈরি করুন। স্বাদ
বাড়ানোর জন্য বানানো ঐ মিশ্রণে কয়েক ফোঁটা মধু বা চিনি মিশিয়ে নিয়ম করে
প্রতিদিন সকালে খেয়ে যান।
শেষ কথাঃআমাদের
চারপাশে অনেক বিষয় আছে যেগুলো আমাদের জন্য অনেক উপকারী হওয়া সত্ত্বেও আমরা
সেগুলো থেকে দূরে থাকি যা আমাদের জন্য দুঃখ জনক ব্যাপার। করলার জুসও তেমন
একটি বিষয়। শুধু মাত্র তেতো স্বাদ যুক্ত হওয়ার ফলে আমরা অনেকেই করলার জুস
খেতে চাই না বা খাই না কিন্তু আমরা কেউ ভাবতেও পারি না যে আমরা একটি ঔষুধি
গাছকে ছোট একটি কারণে অবহেলা করে যাচ্ছি। তাই আজ থেকেই নিয়ম অনুযায়ী করলার
জুস খাওয়া শুরু করুন। দেখবেন কিছু দিনের মাঝেই আপনার শরীরের অনেক উন্নতি
হবে।
আশা করি আমার এই লেখাটি পড়ে আপনি অনেক কিছুই শিখতে পেরেছেন। আমার এই লেখাটি যদি আপনার ভালো লেগে থাকে তাহলে আপনার বন্ধুদের সাথে শেয়ার করতে পারেন এবং আপনি অবশ্যই কমেন্ট করে জানবেন লেখাটি আপনার কেমন লেগেছে।
আমাদের সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ।