আমরা কম বেশি সবাই জাফরান সম্পর্কে জানি। কেউ কেউ আমরাই জাফরান ব্যবহারও করেছি। কিন্তু একটি বিষয় এটি এতটাই ব্যয়বহুল যে সবাই এর পক্ষে এটা ব্যবহার করা সম্ভব নয়। কিন্তু আপনি যদি অল্প পরিমাণ জাফরান ব্যবহার করতে পারেন তাহলে ওর মাধ্যমে আপনি উপকার পাবেন যার মাধ্যমে একদিকে জাফরান সাশ্রয়ীও।জনপ্রিয় এই উপাদানটির উপকারিতার কথা বলে শেষ করা যাবেনা। আজকের আর্টিকেলে থাকছে জাফরানের উপকারিতা ও কার্যকারিতার কথা। তাহলে চলুন দেরী জেনে নেয়া যাক জাফরানের উপকারিতা ও কার্যকারিতা সম্পর্কেঃ
জাফরান কি
জাফরান হলো সাধারণত ক্রোকাস স্যাটিভা নামের একটি এক্সোটিক বা বহিরাগত ফুল থেকে আহরিত হয়। এই উপাদানটি সাধারণত ইরান, ভারত এবং গ্রীসের কিছু এলাকাতে হয়ে থাকে। সাধারণত এই উপাদানটি বাংলাদেশে না জন্মানোর কারণে আমাদের দেশে এর দাম টা অনেক বেশি।
এই উপাদান থাকে ফুড কালারিং এজেন্ট হিসেবে বিভিন্ন খাবারের দেয়া হয়ে থাকে। এই ফলটি চাষ আজ থেকে ৩৫০০ বছর আগে থেকে চাষ হয়ে আসছে এবং এই ফলটি ৯০ টি রোগের ওষুধ হিসেবে কাজ করে থাকে।এই উপাদানটি যেসব রোগের ক্ষেত্রে সমাধান দিয়ে থাকে-ঠান্ডা, কাশি, ঘুম না হওয়া এসব রোগ ছাড়াও আরো নানা ধরনের রোগে কার্যকারী।
জাফরানের রয়েছে ম্যাঙ্গানিজ, এন্টি ইনফ্লামেটরি এবং এন্টি ফাংগাল এজেন্ট যা সাধারণত ব্লাড সুগার নিয়ন্ত্রণ করে শরীরের প্রয়োজনীয় হরমোনের বিকাশে সহায়তা করে থাকে। তাছাড়া এতে রয়েছে শরীরের জন্য প্রয়োজনীয় ভিটামিন সি যা আপনার শরীর ও ফেইস কে ইনফেকশন হওয়ার সংক্রমণ থেকে রক্ষা করে।
আর এর স্পেশাল সুগন্ধযুক্ত স্বাদ খাবারে নিয়ে আসে আলাদা এক টেস্ট। তাছাড়া এতে রয়েছে এন্টিমুটাজেনিক এবং অ্যান্টিসেপটিফ এজেন্ট যা টক্সিকেশন সরিয়ে স্ক্রিনের সেনসিটিভিটি দূর করে থাকে। তাছাড়া এতে থাকা অ্যান্টি সোলার এজেন্ট রোদে পোড়া কালচে দাগ দূর করে সানবার্ন থেকে রক্ষা করে।
ত্বকে খুবই ভালো ময়েশ্চারাইজার হিসেবে কাজ করে থাকে এটি। শুধু তাই নয়, এটিই স্কিনের ইরিটেশন দূর করে স্কিনকে হাইড্রেট রাখে। এতে ত্বক ভেতর থেকে অনেকগুলো করে এবং আপনার ত্বকের উজ্জ্বলতা এর মাধ্যমে অনেক বৃদ্ধি পেয়ে থাকে।
জাফরান কি স্বাস্থ্যের জন্য ভালো
জাপানের মধ্যে রয়েছে সাধারণত প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট। তাছাড়া এর স্বাস্থ্য গুণের কথা বলে শেষ করা যাবে না। জাফরান সাধারণ সর্দি-কাশির পাশাপাশি হার্টের সমস্যা, ব্লাড সুগার,পেটের সমস্যা, মানসিক স্ট্রেস, অনিদ্রা মশা থেকে মুক্তি দিয়ে থাকে। তাছাড়া জাফরানের আরেকটি কার্যকারী গুণ হলো জাফরান ওজন কমাতে সাহায্য করে থাকে।
জাফরান ছোট-বড় সবার জন্য নিরাপদ একটি খাদ্য এবং আপনারা অনায়াসেই কোনরকম সংশয় না করেই এটি ডায়েটে যুক্ত করতে পারেন। মিষ্টি সুগন্ধযুক্ত এই মসলা আপনার খাবারের যেমন অন্য একটি স্বাদ এনে দেবে,তেমনি এর সাহায্যে আপনারা মুক্তি পাবেন নানান ধরনের শারীরিক সমস্যা থেকেও। নিচে অসাধারণ এই মসলার জাফরানের অসাধারন কয়েকটি উপকারিতা সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাকঃ
জাফরানের স্বাস্থ্য উপকারিতা
১.জাফরানের রয়েছে বিস্ময়কর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা। আপনি যদি এক চিমটে জাফরান ব্যবহার করতে পারেন তাহলে এই এক চিমটে জাফরান আপনাকে ১৫ টি শারীরিক সমস্যা থেকে নির্বিঘ্নে মুক্তি দিবে। জাফরানের রয়েছে পটাশিয়াম যা সাধারণত উচ্চরক্তচাপ ও হার্টের বিভিন্ন সমস্যা থেকে আপনার শরীরকে রক্ষা করে থাকে।
২.জাফরানের আরেকটি অসাধারণ গুণ হলো এটি হজম শক্তি বাড়াতে সাহায্য করে এবং আপনার যদি হজমে কোন সমস্যা হয়ে থাকে আপনি যদি নিয়মিত জাফরান সেবন করেন তাহলে আপনার হজমের সমস্যা দূর করতে সাহায্য করে।
৩.জাফরানের থাকা পটাশিয়াম আমাদের শরীরের নতুন কোষ সৃষ্টি করতে সহায়তা করে থাকে। শুধু তাই নয় এই উপাদানটি ক্ষতিগ্রস্ত কোষ মেরামত করতেও কার্যকারী ভূমিকা পালন করে থাকে।
৪.জাফরান অবস্থিত নানান ধরনের প্রাকৃতিক উপাদান মস্তিষ্ককে রিলাক্স করতে সহায়তা করে থাকে, এতে করে মানসিক চাপ এবং বিষন্নতা জনিত বিভিন্ন ধরনের সমস্যা থেকে খুব সহজেই মুক্তি পাওয়া যায়।
৫.জ্বর কমাতে কার্যকরী ভূমিকা পালন করে থাকে জাফরান। এতে থাকা ক্রসিন নামক উপাদান টি জ্বর কমাতে সাহায্য করে থাকে।
৬. আপনি যদি নিয়মিত জাফরান সেবন করতে পারেন তাহলে শ্বাস-প্রশ্বাসের বিভিন্ন সমস্যা থেকে যেমন -অ্যাজমা, পারটুসিস, কাশি এবং বসে যাওয়া কফ দূর করতে এটি দারুন ভূমিকা পালন করে।
৭.মেয়েদের মাসিকের অস্বস্তিকর ব্যথা এবং মাসিক শুরু হওয়ার আগে যে অস্বস্তি হয় সেটা দূর করতে জাফরান খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে।
৮.জাফরানে রয়েছে অনিদ্রা বা ঘুম না হওয়ার সমস্যা দূর করার জাদুকরি ক্ষমতা। আপনার যদি অনিদ্রার সমস্যা থেকে থাকে তাহলে আপনি ঘুমাতে যাওয়ার আগে এক গ্লাস দুধে এক চিমটে জাফরান মিশিয়ে রাত্রে শোয়ার আগে খাবেন। এতে করে অনিদ্রা সমস্যা দূর হয়ে থাকে।
৯.যদি সামান্য একটু জাফরান নিয়ে মাড়িতে ম্যাসাজ করা যায় তাহলে দাঁত ও জিহ্বার নানা সমস্যা থেকে পরিত্রান পাওয়া যায়।
১০.জাফরান দৃষ্টিশক্তি উন্নত করার পাশাপাশি চোখের ছানি পড়ার সমস্যা থেকে মুক্তি দিয়ে থাকে।
১১.জাফরানে উপস্থিত অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি উপাদান দাঁতের ব্যথা, জয়েন্ট ব্যথা, মাংসপেশির ব্যথা ও দুর্বলতা দূর করতে কার্যকরী ভূমিকা পালন করে থাকে।
১২.যাদের গ্যাসের সমস্যা রয়েছে তাদের জন্য জাফরান হল একটি কার্যকরী ওষুধ। জাফরান অ্যাসিডিটি ও গ্যাসের মতো সমস্যা থেকে খুব সহজেই মুক্তি দিয়ে থাকে।
১৩.মস্তিষ্কের সুষ্ঠু গঠন বা উন্নতি করতে জাফরানের ভূমিকা অনস্বীকার্য। স্মৃতিশক্তি এবং চিন্তা ক্ষমতা উন্নত করতে জাফরান কার্যকারী ভূমিকা পালন করে থাকে।
১৪.এই ফলটি আলজাইমার এবং পারকিনসন রোগ থেকে দূরে রেখে অক্সিডেটিভ স্ট্রেস থেকে কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্র কে রক্ষা করে থাকে।
১৫.কিডনী, যকৃত এবং মূত্রনালীর কঠিন রোগ গুলো থেকে খুব সহজেই মুক্তি দিয়ে থাকে জাফরান। তাছাড়া ক্যান্সার ও টিউমার নিরাময় করার জন্যও জাফরানের উপকারিতা অনসিকার্য। তাছাড়া এর মডেল এটি নিয়মিত খাওয়ার ফলে আপনি লিভারের বিভিন্ন সমস্যা থেকে মুক্তি পাবেন খুব সহজেই।
তাছাড়া আপনি প্রতিদিন যদি এক গ্লাস দুধের সাথে মিশিয়ে জাফরান খেতে পারেন তাহলে আপনার শরীরকে নিয়ে আপনারা চিন্তা করা লাগবে না। এতে করে আপনার শরীরের অজানা অনেক সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে।সাধারণত এক গ্লাস জাফরান মিল্ক বাচ্চার মস্তিষ্ক সক্রিয় করতে কার্যকরী ভূমিকা পালন করে থাকে।
আর আপনার তৈলাক্ত ত্বক নিয়ে যদি আপনি সমস্যায় থাকেন আপনার ত্বক যদি আপনি ভেতর থেকে উজ্জ্বল করতে চান তাহলে অবশ্যই আপনি এক গ্লাস দুধের সাথে জাফরান মিশিয়ে নিয়মিত সেবন করতে থাকুন। কেননা আমরা ত্বকের বাহিরে যাক কিছু মাখি না কেন ভেতর থেকে ত্বককে পরিপূর্ণ পুষ্টি না দিতে পারলে তো কোন সময় উজ্জ্বল হবে না। তাছাড়া ত্বকের আর একটি মারাত্মক সমস্যা বলিরেখা দূর করতে সাহায্য করে থাকে এই জাদুকরী ফলটি।