আশা করি সকলেই ভালো আছেন। আজকে আমি আপনাদের সাথে কথা বলবো ঘি কি? ঘি খাওয়ার উপকারিতা? ইত্যাদি বিষয়ে।কথা না বাড়িয়ে চলুন শুরু করা যাকঃ-
ঘি কি?
ঘি হলো ভারতীয় উপমহাদেশে তৈরা করা একধরনের মাখন। খাবারের স্বাদ বৃদ্ধিতে ঘি ব্যবহার করা হয়। ঘি এই নাম শুনলেই যেন মনটা ভরে যায়। প্রাচীনকাল থেকের ঘি এর ব্যবহার হয়ে আসছে। অনেকেই ঘরম ভাতের সাথে একটু খানি খি হলেই সম্পূর্ণ ভাত নিমিষেই খেয়ে ফেলেন। সর্দি-কাশি ভালো করতে, দুর্বলতা কাটাতে, ত্বকের সমস্যা দূর করতে ঘি ব্যবহৃত হয়। এ ছাড়া ঘি দিয়ে পেঁয়াজ ভেজে খেলে গলার ব্যথা সারে।
আমাদের চারপাশে অনকেই আছেন যারা ঘি খেতে পছন্দ করেন আবার অনকেই অপছন্দ করেন আবার অনেকেই আছেন যারা ভালো ভাবেি জানেনই না ঘি খাওয়ার উপকারিতা কি? ভাতের সাথে ঘি মিশিয়ে খেলে শরীরে শক্তিবাড়ে এবং দীর্ঘক্ষণ আপনি কাজ করতে পারবেন। যদি কেউ পরিমাণ মতো প্রতিদিন ঘি খেয়ে যান তাহলে তার শরীরের অনেক পরিবর্তন চলে আসবে। মনে রাখবেন আমি এখানে পরিমাণ মতো কথাটি উল্লেখ করেছি কারণ কোনো কিছুই অতিরিক্ত ভালো না।
ঘি খাওয়ার উপকারিতা
১.হাড়ের জন্যঃ ঘি এ থাকা ভিটামিন "কে" আমাদের শরীরের ক্যালসিয়ামের সাথে মিলে হাড়ের স্বাস্থ্য ও গঠন বজায় ঠিক রাখে। ঘি-তে যেসব ভিটামিন রয়েছে এ, ডি, ই এবং কে, যা আমাদের হৃৎপিন্ড এবং হাড়ের জন্য অনেক উপকারী। এই ঘি-এর মধ্যে রয়েছে প্রাকৃতিক লুব্রিকেন্ট যা গিঁটে ব্যথা সমস্যা সমাধানে কাজ করে।
২.চুল পড়া প্রতিরোধ করেঃ- কেউ যদি খালি পেটে ঘি খায় তাহলে তার চুলের স্বাস্থ্য ভালো থাকে। ঘি আমাদেস চুল পড়া প্রতিরোধে সাহায্য করে। ঘি চুল নরম,উজ্বল করতে সাহায্য করে।
৩. উপকারি কোলস্টেরলঃ আমরা জানি কোলস্টেরল দু ধরনের- উপকারি ও ক্ষতিকর। ঘি-তে উপকারি কোলস্টেরল রয়েছে। ঘিতে রয়েছে কনজুগেটেড লিনোলেক অ্যাসিড। এই অ্যান্টিঅক্সিড্যান্টের অ্যান্টি-ভাইরাল গুণ রয়েছে। আমাদের শরীরেরর কোনো ক্ষত সারাতে সাহায্য করে। এই জন্য প্রসবের পর নতুন মায়েদের ঘি খাওয়ানো হয়।
অন্য পোস্টঃঘুম আসার কয়েকটি অসাধারণ খাবার
৪. ওজন কমায় ও এনার্জি বাড়ায়ঃ ঘি-এর মধ্যে থাকা মিডিয়াম চেন ফ্যাটি অ্যাসিড খুব দ্রুত শরীরে শক্তি বাড়াতে সাহায্য করে থাকে। অধিকাংশ দৌড়বিদ দৌড়নোর আগে ঘি খান। এর ফলে শক্তি বাড়ে এবং ওজনও কমে।
৫.হজম ক্ষমতা বাড়ায়ঃ ঘি-তে রয়েছে প্রচুর বাটাইরিক অ্যাসিড, যা আমাদের খাবার তাড়াতাড়ি হজম করতে সাহায্য করে। যারা কোষ্ঠকাঠিন্যে রোগে ভোগছেন,তাদের জন্য ঘি খুবই কার্যকরী ঔষুধ হিসেবে কাজ করে।
৬.রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়ঃ-প্রচুর অ্যান্টি-অক্সিডেন্টস থাকায় ঘি আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে। ঘি এর এক বিশেষ বৈশিষ্ঠ্য হলো যে এটি নষ্ট হয় না।
৭.ক্ষিদে কমায়ঃ ঘি-তে ওমেগা-ত্রি ফয়াটি অ্যাসিড থাকায় এটি আমাদের ক্ষিদে পাওয়ার প্রবণতা অনেকাংশ কমায়। ফলে ওজন হ্রাসের পথ সহজ হয়। আবার কেউ কেউ বলে হজম ক্ষমতা বাড়ানোর কারণে ঘি খিদে বাড়ায়।
৮.ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়ায়ঃকোষকে পুনর্গঠন করার ক্ষমতা ঘি-এর মাঝে রয়েছে। এটি ত্বকের প্রাকৃতিক উজ্বলতা বাড়ায় এবং আমাদের ত্বক ভালো রাখতে সাহায্য করে। ঘি খাওয়ার ফলে আমাদের ত্বককে ময়েশ্চার হয়ে ওঠে। প্রতিদিন খালি পেটে ঘি খাওয়া শুরু করলে ত্বকের ভেতরে কোলাজেনের উৎপাদন বেড়ে যায়। ফলে ত্বকের সৌন্দর্যও বাড়ে।
৯. চোখ ভালো রাখেঃঘি-তে রয়েছে ভিটামিন ই। তাই ঘি যদি কেউ নিয়মিত খায় তাহলে তার অবটিক নার্ভের উন্নতি ঘটে। ফলে তার দৃষ্টিশক্তি ভালো হয়।
অন্য পোস্টঃচুল ঘরোয়াভাবে ঘন করার উপায়
১০.রাগ প্রশমন করেঃ আমরা অনকেই আছি যারা বিনা কোনোনো কারণেই বা কোনো কারন ছাড়াই রেগে যায়। রাগের বশে হাতের মোবাইল ভেঙ্গে ফেলছেন তাতেও রাগ কমছে না তাহলে হাতে একটু ঘি নিয়ে নাকে লাগান। তারপর স্বাভাবিকভাবে নিশ্বাস নিন। দেখবেন ঘি-এর সুগন্ধটা আপনার মন আর মস্তিষ্ককে বশে এনে ফেলেছে। আর রাগের বিষয়টি আপনি ততক্ষণে ভুলে গেছেন।
১১.মারাত্মক রোগের ঝুঁকি কমায়ঃঘি-তে লিনলিয়েক এসিড থাকে। এটি এক প্রকার ফ্যাটি এসিড যা ক্যান্সার প্রতিরোধ করে,ডায়াবেটিস এবং হার্টের বিভিন্ন সমস্যার সমাধান করে।
১২.কোষ্ঠকাঠিন্যেঃ অনেকেই আছেন যাঁরা কোষ্ঠকাঠিন্যে ভোগেন তাঁদের জন্য ঘি খুবই উপকারে আসে।
রূপচর্চায় ঘি-য়ের ব্যবহার
১.ঠোঁটকে নরম ও গোলাপি রাখতে ঘি-য়ের বিকল্প নেই। অল্প ঘি নিয়ে ঠোঁটে লাগিয়ে হালকা হাতে ঘষুন আপনার ঠোঁট আগের তুলনায় নরম হয়ে যাবে।
২.ঘি আমাদের চোখের নিচের কালি দূর করতে সাহায্য করে। এক ফোঁটা ঘি নিয়ে চোখের চারপাশে ম্যাসাজ করুন। সারারাত রেখে সকালে পানি দিয়ে পরিষ্কার করে ফেলুন। আপনার চোখের নিচে যদি কোনো কালো দাগ থাকে তাহলে তা দূর হয়ে যাবে।
৩. প্রতিদিন আমাদের মাথায় ঘি দিয়ে ম্যাসাজ করলে মাথায় রক্ত চলাচলে কোনো সমস্যা থাকলে তা দূর হয় এবং চুল বৃদ্ধি হতে সাহায্য করে। চুলকে আরো চকচকে এবং নরম রাখতে ঘি কাজে আসে। এজন্য ১ চামচ নারকেল তেলের সঙ্গে ২ চামচ ঘি নিয়ে চুল এবং মাথার ত্বকে ভালো করে লাগিয়ে দিন। ৩০ মিনিট রেখে পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।
ঘি সম্পর্কে যা বলছেন পুষ্টিবিদ
পুষ্টিবিদ সুস্মিতা খান বলেন- ঘি-য়ের অনেক স্বাস্থ্যেরর অনেক উপকার করে থাকলেও তা পরিমাণ অনুযায়ী খাওয়া উচিৎ। একজন পূর্ণবয়স্ক মানুষ দিনে ২ চা চামচের বেশি ঘি খেতে পারবেন না। আর যেদিন কেউ ঘি খায় সেদিন অন্য কোন তেল জাতীয় খাবার খাওয়া যাবে না। আবার যাদের ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, হৃদরোগ, এবং কিডনির সমস্যা আছে তারাও ঘি খাওয়ার ব্যপারে অবশ্যই ডাক্তারদের পরামর্শ মেনে চলবেন।
কি পরিমাণ ঘি খাওয়া স্বাস্থ্যকর?
আমি পোস্টের আগেই আপনাদের বলেছি উপকারি খাবারও বেশি মাত্রায় খাওয়া উচিত নয় কারণ এতেও সমস্যা হতে পারে। এমনটা করলে শরীরের ভাল হওয়ার থেকে ক্ষতি হয় অনেক বেশি। যদি সেটা ঘি হয় তবুও তা অতিরিক্ত ভাবে ব্যবহার করা যাবে না। ঘি শরীরের এতটা উপকারে আসে কিন্তু কেউ যদি কোনো নিয়ম না মেনে ঘি খাওয়া শুরু করেন তাহলে শরীরে খারাপ কোলেস্টেরলের মাত্রা বৃদ্ধি পাবে যা মানবদেহের জন্য খুবই মারাত্মক এবং এর ফলে স্বাভাবিকভাবেই হার্টের স্বাস্থ্যের অবনতি ঘটে। তাহলে এখন প্রশ্ন করতে পারেন? দিনে কত পরিমাণ ঘি খাওয়া স্বাস্থ্যকর? অধিকাংশ চিকিৎসকের মতে শরীরকে সুস্থ রাখতে দৈনিক ২ চামচের বেশি ঘি খাওয়া কোনোভাবেই যাবে না। অর্থাৎ এ খাবার গ্রহণে পরিমিত হতে হবে। একবারে বেশি খাওয়া যাবে না। একজন মানুষ দিনে ১০ থেকে ১৫ গ্রাম ঘি খেতে পারবে।
কাদের ঘি খাওয়া উচিত না?
অনেকের মতে হার্টের রোগ,উচ্চ রক্তচাপ,ডায়াবেটিস অথবা অতিরিক্ত ওজনের সমস্যায় যারা ভুগছেন ঘি খাওয়া উচিত না যদি খায় তাহলে তার পরিমাণ হতে হবে অনেক কম।
ঘি কিভাবে তৈরি করবেন?
আমার এই লেখাতে ঘি সম্পর্কে এত তথ্য জেনে এবং এর উপকারিতা সম্পর্কে অবগত হয়ো এরই মধ্য অনকেই ঘি ব্যবহারের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
আপনি জেনে খুবই খুশি যে আপনি ঘরে বসেই ঘি তৈরি করতে পারবেন।
তবে এর জন্য প্রয়োজন ভালো মানের মাখন যা অবশ্যই লবণমুক্ত হতে হবে।
একটি পাত্রে মাঝারি আঁচে ঐ মাখনকে জাল দিন। কিছুক্ষণ তাপ দেওয়ার পর পপকর্নের গন্ধের মতো করে মিষ্টি একটি সুবাস ছড়িয়ে সোনালি রঙ ধারণ করবে গলে যাওয়া মাখন। তারপর ১৫ থেকে ২০ মিনিট পর দেখবেন মাখনের মধ্যে থাকা দুধ নিচে গিয়ে জমা হচ্ছে এবং বাদামি রঙ ধারণ করছে। এরপর একটি ছাঁকনি দিয়ে এটিকে ছেঁকে ফেলুন। ব্যস!
২০ মিনিটেই তৈরি হয়ে গেলো আপনার পছন্দের ঘি।
আশা করি আমার লেখাটি পড়ে আপনি নতুন অনেক কিছু শিখতে পেরেছেন। আমার এই লেখাটি যদি আপনার ভালো লেগে থাকে তাহলে আপনার বন্ধুদের সাথে শেয়ার করতে পারেন।
আমাদের সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ।