ব্লগ কি অনেকের কাছে এ প্রশ্নটা হয়তো সাধারণ আবার অনেকে হয়তো ব্লগ কি সেই সম্পর্কে জানেন না।অনেক ক্ষেত্রে এই প্রশ্নটা অনেকেই করে থাকেন যে ব্লগ মানে কি অথবা ব্লগ কাকে বলে।
বর্তমান সময়ে ব্লগে এই সম্পর্কে জানা টা খুবই জরুরী। কেননা ব্লগ কে কাজে লাগিয়ে এখন অনেক ব্লগার আছে যারা অনলাইন থেকে হাজার হাজার ডলার আয় করে নিচ্ছে।
আপনি যদি মনে করে থাকেন যে ব্লগিং শুরু করবেন তাহলে অবশ্যই আপনাকে আগে জানতে হবে ব্লগ কি, ব্লগ কিভাবে বানাতে হয়, ব্লগ বানানোর সুবিধা, এবং ব্লগ থেকে কিভাবে আয় করা যায় সেই সম্পর্কে।
আজকের এই আর্টিকেলের মাধ্যমে আমি আপনাদেরকে ব্লগ কি এই সম্পর্কে সম্পূর্ণ ধারণা দিব এবং ব্লগ সম্পর্কিত আরো অনেক প্রশ্নের উত্তর পাবেন আপনারা আজকের এই পোস্টটি সম্পূর্ণ করার মাধ্যমে।তাহলে চলুন প্রথমে জেনে নেওয়া যাক ব্লগ কি সে সম্পর্কেঃ
ব্লগ কি(What is a blog)
ব্লগ হলো এক ধরনের অনলাইন ব্যক্তিগত দিনলিপি বা ব্যক্তিকেন্দ্রিক পত্রিকা। আর ব্লগ শব্দটি হচ্ছে ওয়েব ব্লগ এর সংক্ষিপ্ত একটি রুপ।
ব্লগকে অনেকে অনেক ভাবে চিনে থাকেন। অনেকে ব্লগ মানে বুঝেন অনলাইন থেকে লেখালেখির মাধ্যমে আয় করাকে।
বর্তমানে অনেকেই ব্লগ লেখার মাধ্যমে অনলাইন থেকে হাজার হাজার টাকা ইনকাম করে চলছে। ব্লগ করার দারুন কিছু সুবিধা রয়েছে তার মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ একটি সুবিধা হচ্ছে ব্লগিং পার্ট টাইম করা যায়।
ব্লগ বা ব্লগিং হচ্ছে এক ধরনের লেখালেখি করার পেশা। আর এখন ব্লগিং থেকে আয় এর অসংখ্য উপায় সৃষ্টি হয়েছে। তাই আপনাদের বর্তমান সময়ে অবশ্যই ব্লগ কি এবং ব্লগ কিভাবে খুলবেন এই সম্পর্কিত বিষয়গুলো জানা উচিত।
ব্লগ কি এতক্ষণ তো জানলেন তাহলে চলুন এবার জেনে নেওয়া যাক কিভাবে একটি ব্লগ সাইট তৈরি করবেন বা একটি ব্লগ তৈরি করবেন সে সম্পর্কে।
ব্লগ কত প্রকার
ব্লগিং যখন শুরু হয়েছিল বা ব্লগ যখন শুরু হয়েছিল তখন এটাকে অনলাইন ডায়েরী এর মত ধরা হতো।কিন্তু ধীরে ধীরে ব্লগের জনপ্রিয়তা এতটাই বৃদ্ধি পেয়েছে যে এটা এখন আর শুধুমাত্র অনলাইন ডায়েরী নেই।
এক একজন এক এক রকম ভাবে এই ব্লগটা কে ব্যবহার করে চলেছে। যার কারনে এর জনপ্রিয়তা আরো অনেক অংশে বেড়েছে।
কেউ কেউ ব্লগে অনলাইন ডায়েরির মতো করে ব্যবহার করেছেন আবার কেউ বা ব্লগ অন্যভাবে ব্যবহার করেছেন। অর্থাৎ যে যার মত প্রয়োজনে নিজের মত করে এই ব্লগটা কে অন্যভাবে ব্যবহার করেছেন।
বর্তমানে আমরা অনলাইনে অনেক ধরনের ব্লগ দেখতে পাই।আর সেই কারণেই ব্লগের প্রকারভেদ সম্পর্কে এবার আলোচনা করা হবেঃ-
ব্যক্তিগত ব্লগ (Personal Blog)
আপনি যখন একটি ব্লগ তৈরি করবেন এবং এই ব্লগ দিয়ে শুধুমাত্র পার্সোনাল কাজের জন্য ব্যবহার করবেন অর্থাৎ নিজের জন্য তখন এটিকে ব্যক্তিগত ব্লগ হিসেবে ধরা হয়ে থাকে।
ব্লক যখন সর্বপ্রথম শুরু হয়েছিল বা সৃষ্টি হয়েছিল সেসময় কিন্তু সবাই ব্লগে ব্যক্তিগত কাজের জন্যই এটি বেশী ব্যবহার করত।
তারপরে আস্তে আস্তে ব্লগের জনপ্রিয়তা যখন অনেকাংশে বেড়ে যায় তখন এটিকে একেক জন একেক ভাবে ব্যবহার করতে শুরু করে।বর্তমানে এই ব্লগকে অনেকে আয়ের একটি অন্যতম মাধ্যম হিসেবে তৈরি করে ফেলেছে।যা এখন আর শুধু ব্যক্তিগত ব্লগ এর মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই।
সামাজিক ব্লগ
শুধুমাত্র সমাজের জন্য বা সমাজ সম্পর্কিত সব ধরনের বিষয়গুলো নিয়ে ব্লগ তৈরি করা হয়ে থাকে তাকে বলা হয় সামাজিক ব্লগ।
অর্থাৎ এখানে শুধুমাত্র ব্যক্তির স্বার্থ সিদ্ধির জন্য কাজ করা হয় না এখানে সমাজের জন্য কাজ করা হয়ে থাকে এমন ব্লগ।
সমাজের বিভিন্ন জিনিসের ভালো -খারাপ দিক এই সম্পর্কিত বিষয় গুলো সাধারণত এসব ব্লগে প্রকাশ করা হয়ে থাকে। তাই অনেকে সামাজিক ব্লগে উন্নয়নমূলক ব্লগ হিসেবে আখ্যায়িত করে থাকেন।
ব্লগ কেন বানাবেন
ব্লগ কি আপনারা তো জেনে গিয়েছেন তাহলে এবার আপনাদের মনে প্রশ্ন আসতে পারে আমি ব্লক কেন বানাবো। ব্লগ বানিয়ে আমার কি লাভ হবে। প্রশ্নটা আসতে পারে আর অনেকেরই কিন্তু এই প্রশ্নটা ব্লগিং করার আগে প্রথমে আসে।
যারা এই প্রশ্নটা নিয়ে ভেবে থাকেন তাঁদের জন্য আমি বলছি ব্লগিং আপনারা বিভিন্ন কারণে করতে পারেন। ব্লগিং আপনারা চাইলে নিজেকে আত্মপ্রকাশের জন্য করতে পারেন। অর্থাৎ এই ব্লগিংয়ের মাধ্যমে অনেকে আপনাকে অনেকে চিনবে অথবা কারো উপকারের জন্য আপনি ব্লগিং টা করতে পারেন।
আর একটা কথা বলতে হয় সেটি হচ্ছে ব্লগিং আপনি টাকা ইনকামের জন্য করতে পারেন। তবে প্রথম পর্যায়ে আপনাকে টাকা ইনকামের কথা বাদ দিয়ে শুধুমাত্র কিভাবে ভাল ভাল কনটেন্ট লেখা যায় সেই দিকটাতে মনোযোগ দিতে হবে।
তাহলে কিছুদিন পর আপনার ব্লগে নিয়মিত কিছু ভিজিটর আসবে এবং আপনি যত বেশি ভাল কনটেন্ট লিখতে থাকবেন ততো বেশি ভিজিটর আপনি নিয়মিত পেতে থাকবেন।
আর আপনি তখন আপনার ব্লগে বিভিন্নরকম উপায় অবলম্বন করে সেখান থেকে আয় করতে পারবেন। আশাকরি এতক্ষণে বুঝতে পেরেছেন যে কী জন্য ব্লগ বানাবেন এবং ব্লগিং কেন করবেন সে সম্পর্কে।
ব্লগ কিভাবে তৈরি করব
আপনারা চাইলে বর্তমানে দুটি পদ্ধতি অবলম্বন করে ব্লগ তৈরি করতে পারেন। এই দুইটি প্লাটফর্মে খুব জনপ্রিয় ব্লগ তৈরি করার জন্য। (১)ব্লগার (২)ওয়ার্ডপ্রেস।ব্লগার এর মাধ্যমে যদি আপনি ব্লগ তৈরী করেন তাহলে সম্পূর্ণ ফ্রীতে একটি ব্লগ সাইট আপনারা তৈরি করতে পারবেন।
আর আপনি যদি মনে করে থাকেন যে ওয়ার্ডপ্রেস এর মাধ্যমে ব্লগ তৈরি করবেন তাহলে অবশ্যই একটি ডোমেইন এবং হোস্টিং এর প্রয়োজন হবে। আপনার যেহেতু ব্লগিং সম্পর্কে ধারণা অনেক কম তাই আপনি প্রথম পর্যায়ে ব্লগার এর মাধ্যমে একটি ফ্রিতে ব্লগ সাইট তৈরি করতে পারেন।
তারপরে পরবর্তীতে যখন দেখবেন আপনার ব্লগের ভিজিটর এর পরিমাণ বাড়ছে তখন একটি প্রিমিয়াম ডোমেইন আপনার ব্লগের সাথে যুক্ত করে ব্লগিং করতে পারেন।তাহলে চলুন এবার জেনে নেওয়া যাক কিভাবে আপনারা ফ্রিতে ব্লগার একটি ব্লগ সাইট তৈরি করবেন সেই সম্পর্কেঃ-
Google Blogger এ ব্লগ তৈরি করার নিয়ম
প্রথমে আপনাদের এর জন্য সরাসরি ব্রাউজার এ গিয়ে blogger.com লিখে গুগলে সার্চ করতে হবে।
তারপরে আপনারা এরকম একটি ছবি দেখতে পারবেন। উপরের ওয়েবসাইটটি তে ক্লিক করার মাধ্যমে সরাসরি blogger এর ড্যাশবোর্ডে চলে যাবেন।যদি জিমেইল এড্রেস দিয়ে লগইন করা না থাকে তাহলে অবশ্যই প্রথমে লগইন করে নিতে হবে।
তারপরে Create a new blog এই অপশনটিতে ক্লিক করতে হবে এবং এরকম একটি ছবি দেখতে পারবেন।
আপনাকে এবার এখানে ব্লগের নামটি কি দিতে চান সেটি লিখতে হবে।নামটি দেওয়া হয়ে গেলে এরকম আরেকটি ছবি নিচে দেখতে পারবেন। এখানে আপনার ব্লগের এড্রেস দিতে হবে অর্থাৎ এটি হবে আপনার ব্লগের ইউআরএল।
আমি যেভাবে এড্রেস দিয়েছি আপনারা সেই ভাবে আপনার ব্লগের টাইটেলের সাথে মিল রেখে এড্রেসটা দেবেন। তার পরে আপনাদের নেক্সট এ ক্লিক করতে হবে।
এবার তৈরি হয়ে গেল আপনার ব্লগার এর মাধ্যমে একটি ফ্রি ব্লগ তৈরি করা।এভাবে আপনারা খুব সহজেই ফ্রি ব্লগ সাইট তৈরি করতে পারবেন।
কিভাবে ব্লগ থেকে টাকা আয় করা যায়
ব্লগ থেকে আয় এর অসংখ্য উপায় রয়েছে তবে আপনি চাইলে জনপ্রিয় এই চারটি উপায় অবলম্বন করে খুব সহজেই ব্লগ থেকে আয় করতে পারেন। তবে এই উপায়গুলো অবলম্বন করে যদি আপনাকে ভালো পরিমাণে আয় করতে হয় তাহলে অবশ্যই ব্লগ-এ পর্যাপ্ত পরিমান ভিজিটর নিয়ে আসতে হবে।নিচে সেই সম্পর্কে বিস্তারিত আলোকপাত করা হলো:-
১.গুগল এডসেন্স ব্যবহার করে আয়
বর্তমানে দুই লক্ষের বেশি ব্লগার তাদের ব্লগের গুগল এডসেন্স ব্যবহার করে ইনকাম করে থাকেন। গুগল এডসেন্স হচ্ছে বিজ্ঞাপন নেটওয়ার্ক একটি কোম্পানি। গুগল এডসেন্সের এড ব্লগে বসিয়ে সেখান থেকে গুগল এডসেন্সের মাধ্যমে অনেক ব্লগাররা আয় করে থাকেন।
এমন অসংখ্য ব্লগার রয়েছে যারা শুধুমাত্র ব্লগ থেকে গুগল এডসেন্স ব্যবহার করে মাসে ১০০০ ডলারের বেশি আয় করে থাকেন।
আপনার ব্লগের যদি মাসিক এক লক্ষ ভিজিটর আপনি নিয়ে আসতে পারেন তাহলে গুগল এডসেন্স থেকে অনায়াসেই ভালো একটি অর্থ আপনারা উপার্জন করে নিতে পারবেন। যদি ব্লগ থেকে আয় করার উপায় সম্পর্কে ভেবে থাকেন তাহলে এই উপায়টি হতে পারে ব্লগারদের জন্য কার্যকরী একটি উপায়।
২.ব্লগে অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং করে আয়
ব্লগ থেকে ইনকাম করার উপায় গুলোর মধ্যে অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং করে ইনকাম করার এই উপায়টি অনেক জনপ্রিয়। বিশেষ করে যারা ইংরেজি ব্লগার রয়েছেন তারা অনেকেই অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং করে ব্লগ থেকে হাজার হাজার ডলার প্রতি মাসে আয় করে থাকেন।
যারা বাংলাতে ব্লগিং করে থাকেন তাদের এফিলিয়েট মার্কেটিং করে তেমন বেশি আয়ের সুযোগ না থাকলেও ইংরেজি ব্লগারদের সুযোগটা রয়েছে।অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং হলো আপনার ব্লগ বা ওয়েবসাইটের মাধ্যমে অন্য কোন কোম্পানির প্রোডাক্ট বিক্রি করে দেওয়া।
আপনি যেহেতু তাদের প্রোডাক্ট বিক্রি করে দিচ্ছেন তাই তাদের লাভের একটি অংশ থেকে আপনাকে তারা কমিশন দিবে। আর এইভাবে সাধারণত ব্লগাররা অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং করার মাধ্যমে ইনকাম করে থাকেন। তাই ব্লগে যদি ভালো পর্যায়ে নিয়ে যেতে পারেন তাহলে অবশ্যই এখান থেকে অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং করে ভালো পরিমাণে অর্থ উপার্জন করা সম্ভব।
৩.নিজের প্রোডাক্ট বিক্রি করে আয়
ধরুন আপনার ব্লগে প্রতিদিন দুই হাজার থেকে তিন হাজার ট্রাফিক আসে। এই ভিজিটররা বিভিন্ন ধরনের প্রশ্নের উত্তরের জন্য আপনার ব্লগে নিয়মিত আসে।আপনি যদি সেই প্রশ্নগুলোর সাথে রিলেটেড কিছু প্রোডাক্ট আপনার ব্লগের মাধ্যমে বিক্রি করতে চান তাহলে তারা হয়তো কিনতেও পারে।
এইভাবে আপনারা নিজের ব্লগের মাধ্যমে যত বেশী প্রোডাক্ট বিক্রি করতে পারবেন আপনাদের আয়ের পরিমাণটা কিন্তু ততটাই বেশি বৃদ্ধি পাবে।তাই যদি ব্লগ থেকে ইনকাম করার উপায় সম্পর্কে জানতে চান তাহলে এই উপায়টি হতে পারে আপনাদের জন্য দারুণ এবং কার্যকারী একটি উপায়।
৪.পেইড রিভিউ লিখে আয়
অনলাইনে এমন অনেক ই-কমার্স ওয়েবসাইট রয়েছে যারা বিভিন্ন ধরনের পেইড রিভিউ করানোর মাধ্যমে তাদের প্রোডাক্ট বিক্রি করে থাকে। আর আপনার ব্লগে যদি পর্যাপ্ত পরিমাণে ভিজিটর থাকে তাহলে আপনিও এই সুযোগটা নিতে পারেন।
আর কোন ই কমার্স ওয়েবসাইট যদি আপনার সাথে যোগাযোগ করে থাকে তাহলে আপনি তাদের প্রোডাক্টের জন্য আপনার ব্লগে পেইড রিভিউ করতে পারেন। ব্লগ থেকে আয় করার যত উপায় রয়েছে তার মধ্যে পেইড রিভিউ থেকে আয় করার উপায় টা খুবই জনপ্রিয়।
আমাদের শেষকথা
ব্লগ কি এবং ব্লগ কেন বানাবেন এবং ব্লগের সুবিধাগুলো সম্পর্কে আপনারা হয়তো আজকের এ পোস্টটি পড়ার মাধ্যমে বিস্তারিত ধারণা এতক্ষণে পেয়ে গিয়েছেন।তার পরেও ব্লগিং সম্পর্কিত কোন বিষয় সম্পর্কের যদি আজকের এই পোস্ট টি পড়ে বুঝে না থাকেন তাহলে আমাদেরকে কমেন্ট করে জানাতে পারেন।আর যদি পোস্টটি ভালো লেগে থাকে তাহলে অবশ্যই শেয়ার করবেন।
আরো দেখুন
নিউজ সাইট যেভাবে তৈরি করবেন এবং মাসে ১ হাজার ডলার আয় করবেন