কোয়েল পাখির ব্যবসা শুরু করার নিয়ম

 

কোয়েল পাখির ব্যবসা শুরু করার নিয়ম

কোয়েল পাখির ব্যবসাঃ বর্তমান সময়ে এসে যদি আপনি ভাবছেন নিজের চেষ্টায় একটি ব্যবসা শুরু করবেন তবে আপনার জন্য কোয়েল পাখির ব্যবসা করাটা লাভজনক হতে পারে।


যদিও অনেকে ভাবতে পারে কোয়েল পাখির ব্যবসা করে আর কত লাভ হবে। বিষয়টা আপনি বুঝতে পারেননি বিধায় আপনি এমনটা ভাবছেন। কোয়েল পাখির ব্যবসা যদি আপনি সঠিকভাবে পরিচালনা করতে পারেন, তবে দ্রুত সময়ের মধ্যেই আপনি এই ব্যবসাটি করে প্রতি মাসে ভালো মানের আয় করতে পারেন।


তবে নতুন অবস্থায় এই ব্যবসাটি করার পূর্বে কি কি জানা দরকার, কিভাবে শুরু করবেন, কত পুঁজির দরকার হবে এই বিষয়গুলো সম্পর্কে আপনার ধারণা নাও থাকতে পারে। এই তাই আজকের আর্টিকেলের মাধ্যমে আমি আপনাদের এই কোয়েল পাখির ব্যবসা এর সম্পর্কে কমপ্লিট ধারণা দেওয়ার চেষ্টা করবো। চলুন তবে মূল বিষয় ফেরা যাক।


কিভাবে কোয়েল পাখির ব্যবসা করবেন?


কোয়েল পাখির ব্যবসাটি আপনি কয়েকটি ধাপে শুরু করতে পারেন। নিচে উক্ত ধাপসমূহ উল্লেখ করা হলোঃ


১. স্থান নির্ধারণ 

কোয়েলের ব্যবসা করার জন্য আপনাকে একটি স্থান নির্বাচন করতে হবে। নির্দিষ্ট একটি স্থান নির্বাচন করে সেখানে আপনি কোয়েল পালন করতে পারেন। জায়গা আপনি যেকোনো জায়গায় নির্বাচন করতে পারেন। বাড়ির আসে পাশে হলে আপনার সুবিধা হয়।


২. কিসে করে পালন করবেন?

আপনি চাইলে লোহার খাঁচা দিয়ে কোয়েল পালন করতে পারবেন আবার চাইলে ফলের খাঁচা দিয়েও প্রাথমিক ভাবে কোয়েল পালন শুরু করে দিতে পারেন। লোহার খাঁচা দিয়ে শুরু করতে চাইলে টাকার পরিমাণ একটি বেশি হবে। একজন নতুন উদ্যোক্তা ভাইয়া ৫০০ এর মত কোয়েল নিয়ে তার কোয়েল পাখির ব্যবসা টি শুরু করেছিল।


তিনি লোহার খাঁচা তৈরি করে কোয়েল পালন শুরু করেন। ৫০০ কোয়েল পাখির জন্য তার লোহার খাঁচা বানাতে খরচ হয় প্রায় ১৭ হাজার টাকার মতো। আপনি ১৮-২৫ হাজার টাকার মধ্যে কোয়েল এর খাঁচা কিনে নিতে পারবেন।


তবে বাজেট কম থাকলে আপনি ফলের খাঁচা কিনে শুরু করতে পারেন। যেগুলোর প্রতি পিস জায়গা ভেদে কেবল ২০-৩০ টাকায় পেয়ে যাবেন। এছাড়াও আপনি চাইলে লিটারের মাধ্যমেও শুরু করতে পারেন। এক্ষেত্রে নেট দিয়ে চারদিক আটকে দিতে হবে। উপরে নেট দিয়ে না আটকে দিলে কোয়েল উড়ে যেতে পারে।


আরো দেখুন 

রেস্টুরেন্ট ব্যবসার লাভজনক আইডিয়া


মুরগির ব্যবসার লাভজনক আইডিয়া


৩. কোয়েল পাখি কিনুন

স্থান নির্ধারণ এবং খাঁচা ঠিকঠাক হয়ে যাওয়ার পর এবার আপনার কোয়েল কেনার পালা। আপনি কতটি কোয়েল পাখি নিয়ে আপনার ব্যবসা শুরু করবেন সে অনুযায়ী কোয়েল পাখি কিনে নিতে পারেন। তবে ২০/৫০ পিস কিনে শুরু করার থেকে একেবারে ৫০০-১০০০ পিস এর মত কিনে শুরু করাটা ভালো হয়। এতে খাবার কিনে পুষিয়ে নিতে পারবেন।


৪. কোয়েল পাখির খাবার

এখন অনেকে জানতে চেয়ে থাকেন যে কোয়েল পাখিকে কি ধরনের খাবার দেওয়া হয়। ডিম পাড়ার আগের সময়টাতে কোয়েলকে খাবার হিসেবে বয়লার খাবার দেওয়া হয়। তবে ডিম পারা শুরু হলে লেয়ার খাবার দেওয়া হয়। লেয়ার খাবার ভেঙে গুড়ো করে দেওয়া লাগে। একটি বড় কোয়েল ২০-২৫ গ্রামের মত খাবার খেয়ে থাকে।


৫. কোয়েল পাখির ব্যবসা তে লাভ কেমন

যদি আপনি ৫০০ কোয়েল নিয়ে শুরু করেন তবে দিনে সব খরচ বাদে ২০০ টাকার মতো লভ্যাংশ আপনার থাকতে পারে। তবে বেশি কোয়েল নিয়ে শুরু করতে পারলে লভ্যাংশের পরিমান বাড়বে।


এইভাবে আপনারা প্রাথমিক ভাবে ব্যবসাটি শুরু করে দিতে পারবেন। আপনি স্টুডেন্ট, শিক্ষক, শিক্ষিত বেকার, ব্যবসায়ী, চাকরিজীবী যাই হয়ে থাকেন কোনো সমস্যা নেই। যদি আপনি পার্ট টাইমে একটা আলাদা ইনকাম সোর্স খুঁজছেন তবে অবশ্যই এই ব্যবসাটি আপনার জন্য উপযোগী হবে।

চলুন নিচে আরেকটু গভীরভাবে কোয়েলের সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক।


কোয়েল পাখির বৈশিষ্ট্যঃ


১. কোয়েল পাখি দেখতে ছোট আকৃতির হয়ে থাকে, এটি ছোট আকারের পাখি।


২. একটি প্রাপ্ত বয়স্ক কোয়েল পাখির ওজন প্রায় ১৫০-২০০ গ্রাম পর্যন্ত হয়ে থাকে। আর এই পাখির এই ডিমের ওজন প্রায় ৭ গ্রাম থেকে ১৫ গ্রাম পর্যন্ত হয়ে থাকে।


৩. একটি স্ত্রী কোয়েল পাখি সাধারণত ৬-৭ সপ্তাহের মধ্যেই ডিম পাড়া শুরু করে, এবং ক্রমাগত প্রতিদিন একটি করে ডিম পেড়ে থাকে।


৪. কোয়েল পাখি তাদের প্রথম বছরে ৩০০ টির মত ডিম পারে থাকে, এরপর থেকে অর্থাৎ দ্বিতীয় বছর থেকে পাখিগুলো প্রায় ১৫০-১৭৫ টি ডিম দিয়ে থাকে। অর্থাৎ ডিম পড়ার প্রথম বছরের পর থেকে তাদের ডিম পাড়ার সংখ্যাটা দিন দিন হ্রাস পেতে থাকে।


 ৫. কোয়েলের ডিম মানুষের স্বাস্থ্যের জন্য অনেকটাই উপযোগী। একটি মুরগীর ডিমের থেকে কোয়েল পাখির ডিমে ২.৪৭ শতাংশ কম চর্বি থাকে। বিশেষজ্ঞদের মতে কোয়েলের ডিম আমাদের রক্তচাপ, ডায়াবেটিস, প্যান্ট ইত্যাদি রোগ প্রতিরোধের ক্ষেত্রে সাহায্য করে থাকে।


৬. কোয়েলের মাংস খুবই পুষ্টিকর এবং সুস্বাদু হয়ে থাকে। এছাড়াও এদের মাংসের মধ্যে চর্বি অনেকটাই কম থাকে। আর তাই যাদের হাই ব্লাড প্রেসার রয়েছে তাদের জন্য কোয়েলের মাংস খুবই উপযোগী হবে।


৭. কোয়েল নিজ থেকে তাদের ডিম দেয় না। আর তাই ডিম ফুটানোর জন্য আপনাকে ইনকিউবেটর বা ব্রুডার মুরগি ব্যবহার করতে হবে। যার মাধ্যমে কোয়েলের ডিম সংগ্রহ করতে পারবেন।


অবশ্যই পড়ুন 

ছাগলের ব্যবসা শুরু করার নিয়ম


হোটেলের ব্যবসা শুরু করার নিয়ম


কোয়েল পাখির ব্যবসা কেন করবেন?

কোয়েলের ব্যবসা করলে ভালো লাভ বা প্রফিট অর্জনের পাশাপাশি অনেক ধরনের বাড়তি সুবিধা পাওয়া যায়। নিচে কোয়েলের ব্যবসা করার কয়েকটি সুবিধা উল্লেখ করা হলোঃ


➡️কোয়েল পাখি ছোট আকারের হয় এবং তাদের পরিচালনা করাটা অনেক সহজ। ছোট আকারের হওয়াতে ছোট জায়গাতে আপনি এগুলোকে বড় করতে পারবেন। অতিরিক্ত জায়গার দরকার নেই। একটি মুরগি পালনের জায়গাতে আপনি ৬-৭ টি কোয়েল পাখি পালন করতে পারবেন।


➡️অন্যান্য মুরগি, পোল্ট্রি মুরগি, পোল্ট্রি পাখিদের থেকে  কোয়েলের খাওয়ানোর খরচ তুলনামূলক অনেক কম বলা চলে। ফলে খরচের পরিমান কমে আসবে।


➡️কোয়েল খুব শক্তিশালী পাখি হওয়াতে রোগ বা অন্যান্য স্বাস্থ্য সমস্যা কম হয় এদের। তাই এই ব্যবসায় তুলনামূলক ঝুঁকি কম থাকে। অন্যান্য পাখির তুলনায় কোয়েলের রোগ অনেকটাই কম হয় বলা যায়।


➡️অন্য সকল পোল্ট্রি পাখির তুলনায় কোয়েল অনেক দ্রুত বড় হয়।


➡️এরা ৬ থেকে ৭ সপ্তাহ বয়সের মধ্যে ডিম পাড়া শুরু করে দেয়। তাদের ডিম ফুটতে সময় লাগে প্রায় ১৬-১৮ দিন পর্যন্ত।


➡️কোয়েলের মাংস ও ডিম খুবই সুস্বাদু এবং পুষ্টিকর হয়ে থাকে। তাই এটি খাদ্য ও পুষ্টির একটি বড় উৎস। এছাড়াও হাই ব্লাড প্রেসারের রোগীদের জন্য এটি বেশ উপযোগী।


➡️কোয়েল পাখির ব্যবসাতে প্রাথমিক অবস্থায় অল্প পুঁজির প্রয়োজন হয়, অর্থাৎ সল্প পুঁজিতে এই ব্যবসাটি শুরু করতে পারবেন। আর শ্রম কম দিয়ে ভালো লাভ করতে পারেন।


➡️বাণিজ্যিক পদ্ধতিতেও সফলভাবে কোয়েল পালন করা যায়।  কেউ কেউ ইতিমধ্যে বাণিজ্যিকভাবে কোয়েল পালনের ব্যবসা শুরু করেছেন।


➡️কোয়েলের ডিম আকারে ছোট হওয়ায় দামও অন্যান্য পাখির ডিমের তুলনায় কম।  ফলে সব ধরনের মানুষই কোয়েলের ডিম কিনতে পারবেন এবং আপনি সহজেই ডিম বিক্রি করতে পারবেন।


যেহেতু, এটি একটি লাভজনক ব্যবসায়িক উদ্যোগ, তাই বাণিজ্যিক কোয়েল পালন ব্যবসা শিক্ষিত বেকারদের আয় ও কর্মসংস্থানের একটি বড় উৎস হতে পারে। এছাড়াও আপনি চাইলে আপনার বর্তমান পেশার সঙ্গে কয়েকটি কোয়েল পালন শুরু করতে পারেন। পার্ট টাইম হিসেবেও ব্যবসাটি করা যেতে পারে। অথবা যদি আপনি স্টুডেন্ট হোন তাহলেও আপনি একটা সাইড ইনকাম সোর্স তৈরি করতে পারবেন এই ব্যবসাটির মাধ্যমে।


শেষ কথা

বন্ধুরা আজকে আমরা কোয়েল পাখির ব্যবসা নিয়ে বিস্তারিত ধারণা নিলাম। আশা করছি আপনারা এই ব্যবসার বিষয়ে অনেক কিছুই জানতে পেরেছেন। আর্টিকেলটা এই পর্যন্ত, আপনাদের কোনো বিষয়ে জানতে ইচ্ছে হলে মন্তব্য করবেন।

Akash

প্রযুক্তির খবর, শিক্ষা ও ইন্সুরেন্স, ভিসার খবর, স্বাস্থ্য টিপস ও অনলাইনে আয় সম্পর্কিত তথ্যের বিরাট একটি প্ল্যাটফর্ম।

Post a Comment (0)
Previous Post Next Post