ডায়াবেটিস কমানোর উপায়ঃবর্তমানে বিশ্বজুড়ে প্রায় ৬৫ শতাংশ মানুষ ডায়াবেটিসে ভুগে থাকেন।সবচেয়ে বড় যে সমস্যাটি সেটি হচ্ছে ব্লাড সুগার। এই সমস্যা থেকে প্রতিরোধ সকলেই চাই।
ওষুধের পাশাপাশি অনেকে ঘরোয়া উপায় গুলো নিয়েও বেশ চর্চা করে থাকেন এই ব্লাড সুগার কমানোর জন্য। হ্যাঁ এক্ষেত্রে আপনি যদি একটু বাড়তি সচেতন হন তাহলে অবশ্যই খাবারের ওপর মনোযোগ দেওয়ার মাধ্যমে সুগারের মাত্রা কমানো যায়।তাহলে চলুন জেনে নেওয়া যাক সুগার কেন হয়ঃ
সুগার কেন হয়
সাধারণত আমাদের শরীরের অগ্নাশয় যখন সঠিকভাবে ইনসুলিন তৈরি করে না বা আমাদের দেহের কোষ গুলো সেই ইনসুলিন কে সঠিক ভাবে গ্রহন করতে সক্ষম হয় না তখন সাধারণত সেই ব্যক্তি সুগার বা ডাইবেটিসের আক্রান্ত হয়ে থাকে।
ব্লাড সুগার এবং গ্লুকোজ হলো আমাদের রক্তের প্রধান চিনি।আমরা সাধারণত যে খাবারগুলো খেয়ে থাকি তার মাধ্যমেই গ্লুকোজ পেয়ে থাকি।আর আমরা এখান থেকে যেগুলো খুঁজে পাচ্ছি না পেয়ে থাকি এই চিনি হচ্ছে আমাদের শক্তির অন্যতম একটি উৎস যা সাধারণত শরীরের অঙ্গ পেশী ও স্নায়ুতন্ত্রের জন্য পুষ্টি সরবরাহ করে থাকে।
সুগার লেভেল বাড়ার কারণ
সাধারণত আমাদের মধ্যে অসংখ্য মানুষ এখনও রয়েছে যারা ধারণা করে থাকেন যে সুগার লেভেল বাড়ায় একমাত্র কারণ হল চিনি।
কিন্তু অনেকে এই বিষয়টা জানেন না যে চিনি অথবা মিষ্টি ছাড়াও আপনারা দুজন যে জিনিস গুলো খেয়ে থাকেন এর মধ্যেও কিন্তু আপনার সুগার লেভেল বাড়াতে পারে। তাহলে চলুন জেনে নেওয়া যাক কি জন্য সুগার লেভেল বার ডায়াবেটিস বাড়তে পারে।যেমনঃ
১.ঔষধ বা ইনসুলিন সঠিকভাবে গ্রহণ না করলে সুগার লেভেল বেড়ে যেতে পারে।
২.অতিরিক্ত চিন্তা করার ফলে। অতিরিক্ত চিন্তার ফলে মানসিক চাপ বেড়ে যায় আর মানসিক চাপ বাড়লে সুগারের মাত্রা অনেকাংশে বেড়ে যাবে।
৩.অ্যালকোহলযুক্ত পানীয় তে প্রচুর পরিমাণে কার্বোহাইড্রেট থাকে, তাই এগুলো যদি আপনি বেশি পরিমাণে খান আপনার রক্তে সুগারের মাত্রা বেড়ে যেতে পারে।
আপনারা এতক্ষণে জানলেন সুগারের মাত্রা কিভাবে বাড়ে। এবার আপনারা জানবেন সুগারের মাত্রা বেড়ে গেলে বা ডায়াবেটিস বেড়ে গেলে ডায়াবেটিস কিভাবে কমাবেন সেই সম্পর্কে। তাহলে চলুন দেরী না করে জেনে নেওয়া যাক ডায়াবেটিস কমানোর কয়েকটি উপায় সম্পর্কেঃ
ডায়াবেটিস কমানোর উপায়
ডায়াবেটিস সাধারণত যাদের রয়েছে তারা জানেন যে ডায়াবেটিস রোগ কত কষ্টকর। তাদের যেন পেট থাকতেও পেট নেই। নিচে দেওয়া কিছু খাবার খাওয়ার মাধ্যমে আপনারা ডায়াবেটিসের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারবেন এবং শরীরকে সুস্থ রাখতে পারবেন।
১.করলার জুস খেতে পারেন
সাধারণত করলার জুস ডায়াবেটিসের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য দারুণ এবং কার্যকারী ভূমিকা পালন করে থাকে। শুধু করোলা নাই তেতো সব ধরনের সবজি ডায়াবেটিসের বিরুদ্ধে লড়াই করে থাকে।
আর সেখানে করলাতে রয়েছে ইনসুলিন-পলিপেপটাইড-পি সমৃদ্ধ, এটি হাইপারগ্লাইসেমিয়ার বৃদ্ধি করার ক্ষমতা রেখে থাকে। তাই সাধারণত যাদের ডায়াবেটিস রয়েছে তারা রোজ সকালে খালি পেটে করলার জুস পান করতে পারেন কিছুদিন পরপর।তাছাড়া আপনারা চাইলে সরাসরি করলার তরকারি করে খেতে পারেন। তাহলে আপনারা ডায়াবেটিসের প্রকোপ থেকে আস্তে আস্তে রেহাই পেতে থাকবেন।
২.নিম পাতা খেতে পারেন
ডায়াবেটিসের চিকিৎসায় আরেকটি জিনিস যেটি ব্যবহার করা হয়ে থাকে সেটি হচ্ছে নিমপাতা। নিম পাতা ডায়াবেটিস রোধে কার্যকরী ভূমিকা পালন করে থাকে।
নিমপাতা সাধারণত আমাদের শরীরের কোষগুলোতে রিসেপ্টর সংবেদনশীলতা বাড়ায় যা সাধারণত রক্তে শর্করার মাত্রা হ্রাস করে আমাদের শরীরকে ডায়াবেটিসের সাথে রুখতে সাহায্য করে।তাই আপনার যদি ডায়াবেটিস থেকে থাকে তাহলে নিম পাতা খাওয়ার অভ্যাস করতে পারেন প্রতিদিন তাহলে আপনি সুগারের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারবেন খুব সহজেই।
৩.আমলকি খাওয়ার অভ্যাস করুন
আমলকিতে থাকা বিভিন্ন ধরনের ঔষধি গুনাগুন ডায়াবেটিস কমাতে কার্যকরী ভূমিকা পালন করে থাকেন। ডায়াবেটিস কমানোর উপায় গুলোর মধ্যে আমলকি খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি উপাদান।
আমলকি সাধারণত ভিটামিন সি এর গুরুত্বপূর্ণ একটি উৎস যা আপনার অগ্নাশয় কে ভালো ইনসুলিন উৎপাদন করতে সাহায্য করে এবং রক্তে শর্করার মাত্রা হ্রাস করে।আপনার যদি ডায়াবেটিস হয়ে থাকে এবং ডায়াবেটিস কমাতে আপনি রোজ আমলকি খেতে পারেন। আপনি আমলকি খাওয়ার মাধ্যমে ডায়াবেটিস কমাতে পারবেন এবং শরীরকে সুস্থ রাখতে পারবেন।
৪.মেথি খেতে পারেন
মেথি হচ্ছে সাধারণত ডায়াবেটিস কমানোর জন্য সবচেয়ে সহজ একটি ঘরোয়া উপায়। মেথিতে থাকে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার এবং এটি ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে গ্লুকোজ সহনশীলতা এবং রক্তে শর্করার মাত্রা হ্রাস করতে সাহায্য করে থাকে।যদি এটি নিয়মিত খেতে পারেন তাহলে আপনাদের হজম শক্তি হ্রাস পায় এবং এর ফলে শরীর সুগার খুব সহজেই সঠিকভাবে শুষে নিতে পারে।
তাই ডায়াবেটিস কমানোর জন্য আপনি ২ চা চামচ মেথি বীজ সারারাত জলে ভিজিয়ে রাখুন এবং প্রতিদিন সকালে খালি পেটে মেথি বীজ দিয়ে সেই জল পান করুন।তাছাড়া আপনি চাইলে প্রতিদিন মেথি বীজের গুঁড়ো গরম পানি ঠান্ডা দুধের সাথে নিয়মিত খাওয়ার অভ্যাস করতে পারেন। এটিও সাধারণত ডায়াবেটিস কমাতে সাহায্য করে থাকে।
৫.সজনে পাতা খেতে পারেন
সজনা পাতা বা সজনের ডাঁটা ডায়াবেটিস কমাতে কার্যকরী একটি ঘরোয়া উপায় হিসেবে দীর্ঘদিন ধরে ব্যবহার হয়ে আসছে। সজনে পাতা রক্তে শর্করার মাত্রা বজায় রাখার এবং শক্তি বৃদ্ধিতে সক্ষমতার জন্য পরিচিত।
সজনের পাতায় মূলত এমন সব পুষ্টি উপাদান থাকে যা শরীরে ইনসুলিনের ক্ষরণ বাড়ায়।এই পাতাগুলি অ্যান্টিঅক্সিডেন্টগুলিতেও সমৃদ্ধ এবং এন্টি-ইনফ্ল্যামেটরি গুণ রয়েছে।
তাই সাধারণত ডায়াবেটিস কমাতে আপনার খাদ্য তালিকায় ৫০ গ্রাম তাজা সজনের পাতা রাখার চেষ্টা করুন।এই খাবার গুলো সাধারণত আপনার রক্তে সুগারের মাত্রা 20% হ্রাস এর মাধ্যমে আপনার খাবারের স্বাদ অনেক বাড়িয়ে তুলবে। তাই নিয়মিত ডায়াবেটিস কমানোর জন্য সজনের পাতা খেতে পারেন।
৬.অ্যালোভেরা ব্যবহার করতে পারেন
সাধারনত নিয়মিত অ্যালোভেরা খাওয়া ডায়াবেটিস হ্রাস করার আরেকটি কার্যকারী চিকিৎসা। অ্যালোভেরা ফাইটোস্টেরল সমৃদ্ধ।এটি সাধারণত টাইপ 2 ডায়াবেটিস পিড়ীত ব্যক্তিদের ওপর অ্যান্টি-হাইপারগ্লাইসেমিক প্রভাব ফেলতে পারে।
অনেক পুষ্টিবিদরা পরামর্শ দিয়ে থাকেন ডায়াবেটিস কমানোর জন্য অ্যালোভেরা খাওয়ার জন্য। অ্যালোভেরা রক্তে শর্করার মাত্রা কমাতে সাহায্য করে থাকে। তাই আপনি ডায়াবেটিস কমাতে চাইলে নিয়মিত অ্যালোভেরা খাওয়ার অভ্যাস করতে পারেন।
৭.পেয়ারা খেতে পারেন
পেয়ারাতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি এবং ফাইবার যা সাধারণত রক্তে শর্করার মাত্রা ঠিক রাখতে সাহায্য করে থাকে। এটি বিপাক প্রক্রিয়া কে ধীর করে দেয় ফলে খাদ্য থেকে সুগার ভালো রক্তে শর্করার শোষণের দিকে নিয়ে যায়।
তাই রক্তে সুগারের পরিমাণ হ্রাস করার জন্য অল্প পরিমাণে পেয়ারা মাঝেমধ্যে খাওয়া উচিত। তাহলে ডায়াবেটিস আপনারা খুব সহজেই কমাতে পারবেন।আপনারা নিয়মিত শরীরচর্চার মাধ্যমে উক্ত খাবারগুলো যদি সেবন করেন তাহলে অবশ্যই ডায়াবেটিস কমাতে খুব দ্রুতই সক্ষম হবেন এবং শরীরকে সুস্থ রাখতে পারবেন।
আমাদের শেষ কথা
বর্তমান বিশ্বের বড় একটি সমস্যা হচ্ছে ডায়াবেটিসের সমস্যা। যত দিন যাচ্ছে ততই যেন বেশি বেশি হারে মানুষ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হচ্ছে।আপনারা যদি এই ক্ষেত্রে বাড়তি একটু সচেতন হোন তাহলে ডায়াবেটিস থেকে দূরে থাকতে পারবেন এবং যদি কারো ডায়াবেটিস হয়ে থাকে আপনারা ডায়াবেটিস খুব সহজেই কমাতে পারবেন।
আশা করি যারা পুরো আর্টিকেলটি বিস্তারিত করেছেন তারা ডায়াবেটিস কমানোর উপায় গুলো সম্পর্কে ভালভাবে বুঝতে পেরেছেন।তারপরও যদি এই বিষয়ে আপনাদের কোন প্রশ্ন থেকে থাকে অবশ্যই কমেন্ট করে জানাবেন। আর আমাদের এই আর্টিকেলটি ভালো লেগে থাকলে অবশ্যই শেয়ার করবেন।