শিশুদের চোখের এলার্জিঃসাধারণত শীতের শেষে বসন্ত ও গরমকালে শিশুদের চোখের এলার্জির লক্ষণ টা বেশি দেখা যায়। তবে একটা বিষয় যেসব শিশুদের এলার্জি পরিমাণ বেশি শরীরে তারা কম বেশী সকল সময় এলার্জির সমস্যায় ভুগে থাকেন।
বাচ্চাদের ক্ষেত্রে মূলত এই রোগটি ভিকেসি অথবা দীর্ঘমেয়াদি অ্যালার্জিক কনজাংটিভাইটিস হিসেবে পরিচিত।এই রোগের সাধারণত দুটি চোখে বারবার আক্রান্ত হয়ে থাকে।
এলার্জি কি কারণে হয়?
এলার্জি হওয়ার সাধারণত অনেক ধরনের কারণ রয়েছে। তার মধ্যে বেশ কয়েকটি কারণ নিচে উল্লেখ করা হলোঃ
১.পরিবারের কারো এলার্জি থাকলে শিশুদের এলার্জি সমস্যা কি হতে পারে।
২.ঘন ঘন সর্দি ঠান্ডা এর জন্য এলার্জি সমস্যা হতে পারে।
৩.অ্যাজমা ও একজিমার জন্য হতে পারে।
৪.ধুলাবালি ও ঠান্ডা জনিত কোন কারণে এলার্জি হতে পারে।
৫.নির্দিষ্ট কোন খাবার খাওয়ার ফলে এটি আসতে পারে।
সাধারণত এসব কারণে এলার্জি হতে পারে। এছাড়াও এলার্জি হওয়ার আরো বেশ কয়েকটি কারণ রয়েছে।তাহলে চলুন এবার জেনে নেয়া যাক এলার্জির লক্ষণ সম্পর্কেঃ
এলার্জির কয়েকটি লক্ষণ
চোখে প্রচন্ড চুলকানি হওয়া
আপনার চোখের যখন অ্যালার্জি সৃষ্টি হবে তখন আপনার চোখ ঘনঘন চুলকাবে। শুধু ঘনঘন বললে ভুল হবে ব্যাপকভাবে আপনার চোখ চুলকানো লাগবে।আর এটিও সাধারণত এলার্জির একটি লক্ষণ।
চোখ লাল হয়ে যাওয়া ও পানি পড়া
চোখের অ্যালার্জি সৃষ্টি হয়েছে সেটা আপনারা কীভাবে বুঝবেন এর আরেকটি লক্ষণ হচ্ছে চোখ লাল হয়ে যাওয়া ও পানি পড়া। আমাদের চোখের যখন অ্যালার্জি সৃষ্টি হবে তখন আমাদের চোখ লাল হয়ে যাবে এবং চোখ থেকে পানি পড়া শুরু হবে।
তাই এগুলো যদি আপনি দেখতে পান তাহলে অবশ্যই বুঝতে হবে যে এটিও এলার্জির একটি সমস্যা।
চোখে কম দেখা
চোখের সংক্রমণ বা অ্যালার্জি দেখা দিলে অনেকের চোখে কম দেখতে পারেন এর জন্য।আর সাধারনত এটিও কিন্তু এলার্জির একটি বড় লক্ষ্যন হিসেবে প্রতীয়মান হয়েছে। তাই এই লক্ষণটি দেখা দিলেও এলার্জির লক্ষণ হতে পারে।
চুলকানির ফলে চোখ ফুলে যাওয়া
আপনার চোখের যখন এলার্জি হবে তখন প্রচন্ড চোখ চুলকাবে।আর চোখ চুলকানোর একপর্যায়ে আপনার চোখ ফুলে যেতে পারে। সাধারণত আপনার চোখে সংক্রমণ হয়েছে বলেই আপনার চোখ চুলকাচ্ছে এবং ফুলে গিয়েছে। এটি হতে পারে শিশুদের এলার্জির আরেকটি লক্ষণ।
কবেল স্টোন
সাধারণত আমাদের মধ্যে অনেকেই আছেন যারা চোখের পাতা উল্টালে বড় বড় ছানির মতো দাগ দেখা যায় চোখে। এটাও কিন্তু এলার্জির কারণে সৃষ্টি হয়ে থাকে। তাই আপনার শিশুর চোখে যখন এই সমস্যাটা আপনি দেখতে পারবেন তখনই বুঝতে হবে যে আপনার শিশু হয়তো এলার্জির সংক্রমণে ভুগছে।
ঘন ঘন চোখের পলক খেলা
আপনার চোখে যখন সংক্রমনের সৃষ্টি হবে তখন ঘন ঘন চোখের পলক পড়বে। ঘন ঘন চোখের পলক পড়ার মানেই হচ্ছে চোখের জ্বালাপোড়া হবে বা চুলকানির কারণে এই সময় চোখের পলক স্তীর থাকবে না।তাই এই সময়ে লক্ষণটা যদি আপনার দেখা দিয়ে থাকে তাহলে বুঝবেন যে আপনার এলার্জির সংক্রমণ হতে পারে। আপনাকে বিশেষজ্ঞ কোন ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
শিশুদের চোখের এলার্জির চিকিৎসা
সাধারণত শিশুদের চোখের এলার্জির সমস্যা এর চিকিৎসা তা অনেকটাই জটিল। শিশুরা যখন এই সমস্যাটা আক্রান্ত হবেন তখন তাদের এলার্জির ওষুধ ব্যবহার করলে চোখ ভাল থাকবে এবং যখন ব্যবহার বাদ দিয়ে দিবে আবারো এলার্জি উপসর্গ দেখা দেয়।
আর সাধারনত এর কারণে অনেক অভিভাবক আছেন যারা অস্থির হয়ে একের পর এক চিকিৎসক পাল্টাতে থাকেন। এতে সাধারণত বিভিন্ন চিকিৎসক একই ওষুধ স্টেরয়েড আই ড্রপ বিভিন্ন নামে ব্যবহার করার পরামর্শ দিয়ে থাকেন।
তবে দীর্ঘদিন এসব স্টেরয়েড ড্রপ ব্যবহার করলে শিশুদের চোখের প্রেসার অনেক বেশি বেড়ে যায় এবং এক পর্যায়ে গ্লুকোমায় আক্রান্ত হয়ে অন্ধত্বের ঝুঁকি বাড়ে।
সাধারণত এই চোখের এলার্জি বাঁ ছানি পড়ার পড়ার সমস্যা কেউ কেউ একদম ছোটকালেই আক্রান্ত হয়ে থাকেন।
তবে কিছু কিছু অভিভাবকরা একটি ভুল করে থাকেন তারা হচ্ছে তারা একই ড্রপ প্রেসক্রিপশন দেখিয়ে অনেক বছর ব্যবহার করে থাকেন।যার ফলে শিশু গ্লুকোমায় আক্রান্ত হয় এবং পরবর্তীতে ডাক্তারের আর কিছু করার থাকে না। শিশুর চোখের এলার্জি হলে যেভাবে চিকিৎসা করাবেনঃ
★অনেক অভিভাবক আছেন যারা শিশুদের চোখের এলার্জি হলে একদম ভেঙে পড়েন তবে তাদের জন্য বলে রাখা ভাল অধিকাংশ সংক্রমণের সমস্যা বয়সন্ধিকালের আগেই নিজে নিজেই ঠিক হয়ে যায়।
★যেকোনো ধরনের এলার্জি পরিহার করতে হবে এবং এলার্জি হয় এমন কোন খাবার খাওয়া যাবেনা।
★সকল সময় দরজা জানালা বন্ধ রাখতে হবে যেন বাইরের এলার্জি বিশেষ করে ধুলাবালি ঘরের ভিতরে না আসতে পারে এবং কোনো সংক্রমণ না ঘটাতে পারে। তাছাড়া ফুলের রেণু যেন চোখে সংস্পর্শে না আসে সেটা খেয়াল রাখতে হবে।
★শিশুদের সকল সময় ঠাণ্ডা থেকে বিরত রাখতে হবে। এই সময় তাদেরকে যতটা সম্ভব গরম রাখার চেষ্টা করতে হবে।
★যদি চশমা পরা মতো হয়ে থাকে তাহলে এই সময় তাদেরকে চশমা বা সানগ্লাস পড়াতে হবে আর যদি না হয়ে থাকে তাহলে সকল সময় সাবধানে রাখতে হবে।
★অবশ্যই বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শে ভালো ড্রপ ব্যবহার করতে হবে তাছাড়া আরো বেশি ক্ষতি হতে পারে চোখের।
এলার্জি হলে সচেতনতা
★শিশুর চোখে যখন অ্যালার্জি সৃষ্টি হবে তখন অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে শিশুর যেন বারবার চোখ চুল চুলকাতে না পারে। বারবার চোখ চুলকানোর ফলে এই সমস্যাটা আরো অনেক বেশি বৃদ্ধি পাবে।
★সব সময় শিশুকে গরম রাখার চেষ্টা করতে হবে অ্যালার্জি সৃষ্টি হলে এবং চোখের সুরক্ষার জন্য সেই সময় বাড়তি সচেতন হতে হবে।
★চোখের ধুলাবালির যেন না পড়ে সেই দিকটাতে বেশি নজর দিতে হবে কেননা আপনি যখন আপনার শিশুর অ্যালার্জি চিকিৎসা করছেন সেই সময় চোখে ধুলো বালি পড়লে আবারও নতুন করে সংক্রমণ সৃষ্টি হতে পারে। তাই এই দিকটাতে বাড়তি একটু সচেতনতা অবলম্বন করতে হবে।
কিছু কিছু বিষয় অবলম্বন করে চললে আপনারা খুব সহজেই আপনার শিশুদের এলার্জির এই সমস্যা থেকে মুক্তি দিতে পারবেন। আর সকল সময় প্রতিরোধের ব্যবস্থা করতে হবে যেন এলার্জি বা সংক্রমণ শিশুদের চোখে সৃষ্টি না হয় সেই দিকটাই বেশি নজর দিতে হবে।কেননা চিকিৎসার চেয়ে প্রতিরোধই উত্তম।
আমাদের শেষ কথা
শিশুদের এলার্জি সমস্যা টা খুবই মারাত্মক একটি সমস্যা। এলার্জির সঠিক চিকিৎসা না করা গেলে এই সময় অনেক শিশুর অন্ধ হয়ে যেতে পারে।
তাই কোনো শিশুর যদি এলার্জিতে আক্রান্ত হয়ে থাকে তাহলে অবশ্যই একজন অভিজ্ঞ এবং বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের শরণাপন্ন হতে হবে এবং তার গাইডলাইন অনুযায়ী শিশুর চোখের সঠিক চিকিৎসা করাতে হবে।
আর যদি ঠিক সময়ে ঠিক চিকিৎসা না করা হয় তাহলে এই সমস্যা আরও বড় সমস্যায় পরিণত হতে পারে। তাই অবশ্যই সুসময়ে সুচিকিৎসা করার ব্যবস্থা করতে হবে এবং এই রোগে কোন শিশু আক্রান্ত হলে ঠান্ডা মাথায় এর প্রতিরোধ করার ব্যবস্থা করতে হবে।