টিকটক থেকে টাকা ইনকামঃটিকটক হচ্ছে বর্তমান সময়ের সবচেয়ে জনপ্রিয় শর্ট ভিডিও তৈরি করার অ্যাপ। টিকটক ব্যবহার করে মানুষ ১৫ সেকেন্ড এর শর্ট ভিডিও তৈরি করে সেগুলোকে সবার মাঝে শেয়ার করতে পারে।
বাংলাদেশেও টিকটক ব্যবহারকারী সংখ্যাটা অনেক, এবং দিন দিন এই এই সংখ্যা বাড়ছে। এক্ষেত্রে অনেকের মাথায় প্রশ্ন আসে টিকটক থেকে টাকা ইনকাম যায়?
বিশেষ করে যারা নতুন টিকটকে তাদের মাথায় এই প্রশ্ন বেশি আসে। তো আজকের আর্টিকেলটা মূলত এই বিষয়ের উপরে।
টিকটক থেকে টাকা ইনকাম কি সম্ভব? যদি সম্ভব হয় তবে কিভাবে? এসব বিষয় সম্পর্কে A টু Z জানতে আর্টিকেলটা পুরো মনোযোগ সহকারে পড়ুন।
টিকটক থেকে কিভাবে ইনকাম করা যায়?
এমনিতে টিকটক থেকে টাকা ইনকাম করার সরাসরি কোনো উপায় এখনও Tiktok কতৃক চালু করা হয়নি। কিন্তু একটা কথা মাথায় রাখবেন যেখানে বেশি পরিমাণে অডিয়েন্স থাকে সেখানে বিভিন্ন উপায় কাজে লাগিয়ে আপনি ভালো মানের ইনকাম করে নিতে পারেন।
যেহেতু আজকাল এর দিনে প্রায় সবার মোবাইলে Tiktok App Install করা রয়েছে এবং প্রায় সকলে এই অ্যাপটি ব্যবহার করছে সেহেতু বর্তমানে এই অ্যাপটি কাজে লাগিয়ে ইনকাম করাটাও বেশ সহজ হয়ে দাঁড়িয়েছে। কিভাবে কি করবেন সেসব আপনাদের নিচে ধাপে ধাপে বলে দিচ্ছি।
টিকটক থেকে টাকা ইনকাম করার ৬টি উপায়
১. স্পন্সরশিপ থেকে আয়
টিকটক থেকে টাকা ইনকাম করার অন্যতম সেরা একটি উপায় হচ্ছে স্পন্সরশিপ। আমাদের দেশে ছোট বড় বিভিন্ন কোম্পানি রয়েছে যারা গ্রাহকদের মাঝে তাদের প্রোডাক্ট বা সার্ভিস বিক্রি করে থাকছে। এক্ষেত্রে ব্যবসায়ের লাভের স্বার্থে কোম্পানিগুলো বিভিন্ন পন্থা অবলম্বন করে তাদের পণ্য বা সেবার বিজ্ঞাপন দিয়ে থাকে।
কোম্পানিগুলো বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়া, ইউটিউব, ব্লগ বা ওয়েবসাইট দ্বারা তাদের পণ্যের বিজ্ঞাপন দিয়ে থাকে। টিকটকে বর্তমানে বেশি পরিমাণে মানুষ সক্রিয় থাকায় কোম্পানিগুলো টিকটকে তাদের প্রচারণা চালাচ্ছে এবং লাভবান হচ্ছে।
তবে এর জন্য অবশ্যই আপনার ফলোয়ার থাকবে। বলা যায় আপনার ফলোয়ার সংখ্যা যদি ১ মিলিয়ন হয় তবে শুধু স্পন্সর থেকে প্রতি মাসে আপনি ৫০ হাজার থেকে ১ লক্ষ টাকা পযর্ন্ত আয় করতে পারেন। যখন আপনার ফলোয়ার বেশি থাকবে তখন কোম্পানি নিজ থেকে আপনার সাথে যোগাযোগ করবে বিজ্ঞাপনের জন্য। আপনার কাজ তাদের প্রোডাক্ট বা সার্ভিস আপনার একাউন্টে প্রমসন করানো।
২. নিজের প্রোডাক্ট বিক্রি করে আয়
TikTok app থেকে টাকা আয় করার আরো একটি জনপ্রিয় ট্রিকস হচ্ছে নিজস্ব পণ্য বা সেবা বিক্রি করে আয় করার প্রক্রিয়াটি।
ধরুন আপনি TikTok এ লেখাপড়া সম্পর্কে নানান টিপস এবং ট্রিকস শেয়ার করে থাকেন। এক্ষেত্রে ধরুন আপনার একটি বুক শপ আছে অনলাইনে কিংবা বলতে পারেন আপনার একটি অনলাইন লাইব্রেরী রয়েছে। এখন আপনি চাচ্ছেন কোনো একটি প্রক্রিয়ায় ফ্রীতে অর্থাৎ বিজ্ঞাপনে কোনো খরচ না করে ফ্রী প্রমোশন দ্বারা আপনার পণ্য বিক্রি করতে।
তাহলে আপনার জন্য লাভজনক অপসন হচ্ছে TikTok অ্যাপটি। যখন আপনার বেশি ফলোয়ার থাকবে তখন আপনি লেখাপড়ার টিপস দেওয়ার পাশাপাশি তাদের আপনার বিভিন্ন বই সাজেস্ট করতে পারেন। যখন আপনার লেখাপড়া টিপস তাদের কাজে আসবে তখন তারা আপনাকে বিশ্বাস করবে এবং আপনার থেকে বই কিনতে আগ্রহী হবে। এইভাবে আপনি নিজের লেখা বইগুলো ও বিক্রি করতে পারবেন।
৩. অ্যাকাউন্ট বিক্রি করে আয়
আপনি যে কারণে এই আর্টিকেলটা পড়ছেন ঠিক সে কারণে আপনার মত অনেক লোকেরা বেশি ফলোয়ার থাকা TikTok Account গুলো টাকার বিনিময়ে কিনে নিয়ে থাকেন। সহজ কথায় স্পন্সর আয় বা টাকা ইনকাম অথবা কেউ কিনে থাকেন কেবল ভিডিও তৈরি করার স্বার্থে।
তবে আপনি তখনই আপনার তৈরি করা অ্যাকাউন্ট ভালো দামে বিক্রি করে পারবেন তখন আপনার একাউন্টে পর্যাপ্ত পরিমাণে ফলোয়ার থাকবে। এবং আপনার ফলোয়ার গুলো সব একটিভ থাকবে।
আপনার একাউন্ট গ্রোথ ভালো থাকলে আপনি সহজে ভালো দামের বিনিময়ে সেটিকে সেল করে দিতে পারবেন। আপনি আপনার একাউন্টে ভিডিও তৈরি করার মাধ্যমে সবাইকে অ্যাকাউন্ট বিক্রির কথা বলতে পারেন অথবা ফেসবুক গ্রুপে পোস্ট করেও।
৪. অন্যের একাউন্ট প্রমোশন করে আয়
TikTok App দ্বারা টাকা আয় করার আরো একটি কার্যকরী পন্থা হচ্ছে অন্যের অ্যাকাউন্ট নিজের একাউন্ট দ্বারা প্রমোশন করে আয়।
দেখুন একদিনে কিন্তু কারো লাখ লাখ ফলোয়ার হয়না। এর জন্য সবাইকে অনেক পরিশ্রম করতে হয়। তবে বিশেষ করে নতুন TikTok ইউজারদের ক্ষেত্রে প্রথম অবস্থায় ফলোয়ার বাড়াতে অনেক কষ্ট করতে হয়।
আপনার একাউন্টে যদি বেশি বেশি ফলোয়ার থাকে তবে আপনি আপনার একাউন্টে সেসব ছোট বা নতুন অ্যাকাউন্টগুলো প্রমোশন করে তাদের থেকে একটি নির্দিষ্ট পরিমাণে চার্জ নিতে পারেন। এইভাবে আপনি অন্যের অ্যাকাউন্ট নিজে প্রমোট করে আয় করতে পারেন।
৫. রেফার করে আয়
Tiktok অ্যাপে আপনি রেফার করে টাকা ইনকাম করতে করবেন। বিভিন্ন সময়ে তারা রেফার করে আয় করার বিভিন্ন অফার প্রদান করে থাকে। আর সবচেয়ে ভালো লাগার মতো বিষয় হচ্ছে রিচার্জ বা বিকাশে মাত্র কয়েক ঘন্টার মধ্যে তারা পেমেন্ট দিয়ে থাকে। বেশ কিছুদিন আগে Tiktok বিভিন্ন বড় বড় রেফার করার অফার দিয়ে বেশ আলোচনায় এসেছিল।
যাহোক, বিকাশ থেকে আপনারা রেফার করে টাকা ইনকাম করতে পারবেন।
TikTok থেকে টাকা ইনকাম করতে হলে কি করা লাগবে?
সর্বপ্রথম আপনার একটি Tiktok Account থাকা লাগবে। আর অবশ্যই আপনার অ্যাকাউন্টটি প্রফেশনাল মানের হতে হবে। অর্থাৎ নিজের রিয়েল নাম, নিজের ছবি এবং যে ভিডিও তৈরি করতে সেগুলো অবশ্যই নিজের তৈরি হতে হবে।
টিকটক থেকে টাকা ইনকাম করতে হলে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ যে বিষয়টি সেটি হচ্ছে অবশ্যই আপনার বেশি বেশি ফলোয়ার বা অডিয়েন্স থাকতে হবে। আগেই বলেছি যেখানে বেশি অডিয়েন্স সেখানেই বিভিন্ন উপায় থাকে ইনকাম জেনারেট করার।
কিন্তু দুঃখজনক বিষয় হচ্ছে শুরুতে আমাদের ফলোয়ার থাকে না, আর একটি নতুন একাউন্টকে কে ফলো দিতে চাইবে বলুন। তাহলে উপায় কি?
নিচে আপনাদের কিছু শর্ট টিপস দিছি এগুলো মেনে কিছুদিন এই অ্যাপে সময় দিন আশা করছি দ্রুত ফলোয়ার বাড়িয়ে নিতে পারবেন। তবে যদি আপনি ভাবেন কেবল ৭ দিন বা ১ মাসে আপনার মিলিয়নের অধিক ফলোয়ার হবে তবে আপনি বোকামি করছেন। আপনাকে দীর্ঘদিন লেগে থাকতে হবে। কারণ কিছু পাওয়ার জন্য কিছু তো দিতে হবেই।
টিকটক ফলোয়ার বাড়ানোর উপায়
১.নিয়মিত কনটেন্ট আপলোড করুন, এবং টাইম মেইনটেইন করে কনটেন্ট আপলোড করবেন। নিয়মিত ভিডিও আপলোড করবেন।
২. প্রতিদিন অন্তত ৫০-১০০ জনকে ফলো দিন এবং ২৪ ঘণ্টা পর তাদের আনফলো করে দিন। প্রতিদিন এটি করবেন, ফলোয়ার বাড়তে থাকবে।
৩. সবাই ভাবে টিকটকে কেবল আজে বাজে ভিডিও তৈরি হয়, কিন্তু আপনাকে এই ভ্রান্তি দূর করতে হবে। এমন ভিডিও তৈরি করুন যেগুলো মানুষের ভালো লাগবে।
৪. আপনার ফলোয়ারদের নিয়মিত লাইক,কমেন্ট করে উৎসাহ দিন।
৫. কোয়ালিটি সম্পন্ন কনটেন্ট তৈরি করুন, যাতে রেজুলেশন মোটামুটি ভালো থাকে।
আশা করছি এই ছোট খাটো বিষয়গুলো মেনে চললে দ্রুত আপনার ফলোয়ার বাড়বে এবং আপনি ইনকাম করা শুরু করতে পারবেন।
আমাদের শেষ কথা
বন্ধুরা আজকে আমরা টিকটক থেকে টাকা ইনকাম করার বিষয়ে জানলাম। তাহলে আপনিও যদি এই অ্যাপ থেকে টাকা আয় করতে চান তবে আশা করছি এই আর্টিকেল উল্লেখ্য উপায়গুলো অবলম্বন করলে আপনি সেটি পারবেন।
আর্টিকেলটা আশা করছি উপকারে এসে থাকবে। এই বিষয়ে কোনো প্রশ্ন অথবা মতামত জানাতে আমাদের মন্তব্য করবেন।