ব্যায়াম করার নিয়মঃস্বাস্থ্যকেই সকল সুখের মূল বলা হয়ে থাকে। আপনার স্বাস্থ্য যদি ভাল থাকে তাহলে আপনার কাছে সারা দুনিয়া ভালো।
যদি ভালো না থাকে সারা দুনিয়ার সুখ যদি আপনার কাছে এনে দেওয়া যায় তাও কিন্তু আপনার ভালো লাগবে না। আর স্বাস্থ্য ভালো রাখতে ব্যায়াম এর জুড়ি মেলা ভার।
তাই শরীরকে সুস্থ এবং কর্মক্ষম রাখার জন্য নিয়মিত ব্যায়াম করার দরকার রয়েছে। কিন্তু আমাদের মাঝে অনেকে আছেন যারা ব্যায়াম করার সঠিক নিয়ম জানেন না।
যার ফলে শরীরের উপকারের চেয়ে অপকারই তাদের বেশি হয়ে থাকে। আমি আজকে আপনাদেরকে আর্টিকেল এর মাধ্যমে ব্যায়াম করার নিয়ম বা কিভাবে সঠিকভাবে ব্যায়াম করা যায় সেই সম্পর্কে কিছু কথা বলব। তাহলে চলুন দেরী না করে শুরু করা যাকঃ
ব্যায়াম করার নিয়ম
১.আপনাকে অবশ্যই শারীরিক ক্ষমতা এবং বয়স অনুযায়ী নির্দিষ্ট ব্যায়ামের ধরন নির্ধারণ করে নিতে হবে।
২.খাওয়ার পর বা ভরপেটে কোন সময় ব্যায়াম করা যাবে না।খাওয়ার অন্তত ২ ঘণ্টা পর ব্যায়াম করতে হবে।
৩.খুব টাইট পোশাক পরে ব্যায়াম করা যাবে না।
৪.হালকা এবং ঢিলেঢালা পোশাক করে ব্যায়াম করতে হবে টাইট পোশাক পড়ে ব্যায়াম করা যাবে না।
৫.ব্যায়ামের সময় কখনো কষ্ট করে নিঃশ্বাস নেওয়া যাবে না।
৬.মন খারাপ নিয়ে ব্যায়াম করা যাবে না অবশ্যই মন খারাপ থাকলে মন আগে ভালো করে ব্যায়াম করতে যেতে হবে।
৭.সকাল অথবা সন্ধ্যার যাইহোক প্রতিদিন একটি নির্দিষ্ট সময়ে ব্যায়াম করতে হবে।
ব্যায়াম কখন করবেন
আপনি যেদিন বেশি ব্যায়াম করবেন সেদিন অবশ্যই আপনার ঘুমের উপর এটি প্রভাব ফেলবে।সকালের ব্যায়াম করা অবশ্যই ভালো আবার ঘুমের আগে ব্যায়াম করা আপনার শরীরের জন্য ক্ষতি হতে পারে।
তাই এই ক্ষেত্রে ব্যায়াম করার আরেকটি উপযুক্ত সময় হচ্ছে মধ্যাহ্নের মাঝামাঝি সময় টা।বিকালে শরীরচর্চা করলে ঘুমের মধ্যে সময়ের ব্যবধান হয়ে থাকে অনেক।
তবে আপনি যদি সন্ধ্যায় ওয়ার্ক আউট করে থাকেন তাহলে শরীরের তাপমাত্রা বৃদ্ধি পায় এবং এর ফলে হার্ট বিট বৃদ্ধি পেয়ে থাকে। সেইসাথে এটি রাতের ঘুমের ওপরও প্রভাব ফেলে।
ঘুমানোর কয়েক ঘন্টা আগে হালকা শরীরচর্চা করা আপনার ঘুমের জন্য খুবই ভালো হতে পারে। অন্যদিকে ভারোত্তোলনের যে কোন ব্যায়াম আপনি দিনের যেকোনো সময় করুন না কেন এটি আপনার ঘুমের জন্য খুবই সহায়ক হতে পারে।
আপনি এই সময়গুলোতে ব্যায়ামের নিদৃষ্ট রুটিন করে ব্যায়াম নিয়মিত করতে পারেন। তাহলে এই ক্ষেত্রে আপনার শরীর ব্যায়ামের পর্যাপ্ত উপকারিতা পাবে।
ব্যায়াম করার আগে কি খাবার খাবেন?
★ব্যায়াম করতে যাওয়ার এক ঘন্টা আগে কার্বোহাইড্রেট খাবার খেতে হবে। ব্যায়ামের আগে খাওয়ার জন্য আপেল হতে পারে খুবই আদর্শ একটি ফল।
তাছাড়া আপনি চাইলে ব্যায়াম করতে চাওয়ার আগে কলাও খেতে পারেন। এই খাবারগুলো মূলত হজম হতে অনেক কম সময় নিয়ে থাকে এবং ব্যায়াম করার আগে এটি আপনার শরীরে শক্তির যোগান দেবে।তাছাড়া অবশ্যই ব্যায়াম করার আগে এক গ্লাস পানি খেয়ে নিতে হবে এর ফলে আপনার শরীর আর্দ্র থাকবে।
★খালি পেটে কখনোই ব্যায়াম করতে যাবেন না কেননা ব্যায়ামের ফলে শরীরের যে চাপ পড়বে সেটি শর্করার পরিমাণ অনেক কমিয়ে দেবে। যার ফলে সাধারণত হাইপোগ্লেসিমিয়া হয়ে শরীর অবসন্ন হয়ে যেতে পারে। তাই আপনি কখনোই খালি পেটে ব্যায়াম করতে যাবেন না এতে করে শরীরে উপকারের চেয়ে অপকারই বেশি হবে।
ব্যায়ামের পর কি খাবেন
★ব্যায়ামের পর সাধারণত আমাদের শরীরে করটিসলের নামের হরমোনের মাত্রা অনেক বেড়ে যায়। এর ফলে সাধারণত বিভিন্ন ধরনের সংক্রমণে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়।ব্যায়ামের পরের সময়টিকে ‘ওইনডো পিরিয়ড’ বলা হয়।তাই অবশ্যই ব্যায়াম শেষ করার পর যত দ্রুত সম্ভব আপনার শরীরকে পুষ্টিকর খাবার দিতে হবে।
★ব্যায়াম করার পর শরীরে ইলেক্ট্রোলাইট এর ভারসাম্য বজায় রাখার জন্য অবশ্যই পানি পান করতে হবে পরিমাণমতো।
★আমাদের দেহে শক্তির জন্য অবশ্যই প্রোটিনের প্রয়োজন রয়েছে কিন্তু আপনারা হয়ত এটা সবাই জানেন যে প্রোটিন হজম করা একটু কঠিন।এটি সাধারণত কিডনির ওপর প্রভাব ফেলে থাকে তাই প্রয়োগের পাশাপাশি শাক জাতীয় খাবার এবং আঁশ যুক্ত খাবার খেতে হবে।
★পেশীর গঠন বাড়ানোর জন্য অবশ্যই প্রোটিন জাতীয় খাবার এর কোন বিকল্প নেই। আপনি যত বেশি পরিমাণে প্রোটিন খাবেন ততো আপনার পেশি শক্তিশালী এবং সুগঠিত হবে। আর এর জন্য সাধারণত অনেকেই আছেন যারা প্রোটিনের সাপ্লিমেন্ট খেয়ে থাকেন।
আপনারা যদি দুপুরের পর আপেল এবং কলা একসাথে ব্লেন্ড করে খেতে পারেন তাহলে আপনার শরীরের জন্য এটি খুবই ভাল হয়। এটা সাধারণত প্রোটিন এবং কার্বোহাইড্রেট এই দুটি জিনিসের চাহিদা খুব ভালোভাবে পূরণ করবে।
ব্যায়াম করার আগে কিছু টিপস
★অনেকেই আছেন যারা ব্যায়াম করার শুরুতেই ভারী ভারী জিনিস তুলতে থাকেন এবং যার ফলে তাদের শরীরের ক্ষতি তারা না বুঝেই করে থাকেন।ব্যায়াম করার শুরুতে অবশ্যই হালকা ব্যায়াম করতে হবে এবং ধীরে ধীরে কঠিন অন্তরে মানে যেতে হবে তাহলে এক্ষেত্রে আপনার শরীরের ক্ষতি হতে পারে।
★রাতে ঘুমানোর আগে কোন সময় ব্যায়াম করবেন না এর ফলে আপনার শরীরে উপকারের চেয়ে অপকারই বেশি হতে পারে। রাতে ঘুমানোর আগে আপনি চাইলে যোগ ব্যায়াম করতে পারেন এর ফলে আপনার ঘুমের অনেক উন্নতি হতে পারে।
★খালি পেটে কোন সময় ব্যায়াম করবেন না যখনই ব্যায়াম করুন অবশ্যই তার আগে হালকা কিছু হলেও খাবার খেয়ে দিতে হবে কেননা আপনি যদি একদম খালি পেটে ব্যায়াম করেন তাহলে শরীরে শর্করার মাত্রা কমে যেতে পারে।
★শরীরে ধারণ ক্ষমতা অনুযায়ী ব্যায়াম করতে হবে। শরীর যত টুকু ব্যায়াম করতে সায় দিবে আপনাকে অবশ্যই ততটুকু ব্যায়াম করতে হবে।শরীরের ওপর বাড়তি প্রেসার দিয়ে ভারী ভারী ব্যায়াম করানো যাবে না এর ফলে আপনার শরীরের উপকারের চেয়ে ক্ষতি বেশি হবে।
★ব্যায়ামের পর প্রোটিনসমৃদ্ধ খাবার খেতে পারেন এর ফলে আপনার শরীরের যে ক্ষয় পূরণ হবে সেটা এর মাধ্যমে পুষিয়ে নিতে পারবেন খুব সহজেই। অবশ্যই ব্যায়াম করার আগে এই জিনিসগুলো অবলম্বন করবেন তাহলে আপনি ব্যায়াম করার সম্পূর্ণ উপকারিতাটা পাবেন।
আমাদের শেষ কথা
শরীরকে সুস্থ রাখার জন্য ব্যায়ামের উপকারিতা কথা বলে শেষ করা যাবে না।নিয়মিত ব্যায়াম করার ফলে আমাদের শরীর নানা ধরনের রোগ বালাই থেকে দূরে থাকে এবং আমাদের শরীর থাকে প্রাণবন্ত।
কিন্তু অনেকেই আছেন যারা ব্যায়াম করার নিয়ম সম্পর্কে জানেন না যার ফলে তারা ব্যায়ামের উপকারিতা অপকারিতা টা বেশি পান। আর আজকে শুধুমাত্র তাদের জন্যই এই আর্টিকেলটা লেখা। আজকের এই পোস্টের মাধ্যমে আমি আপনাদেরকে জানাতে চেয়েছি ব্যায়াম করার সঠিক নিয়ম সম্পর্কে এবং ব্যায়াম করার পর কি খাবার-দাবার খাবেন।
আশাকরি আমাদের এই আর্টিকেলটি যারা বিস্তারিত পড়েছেন তারা সবকিছুই ভালো হবে বুঝতে পেরেছেন। আর যদি কারো কোন প্রশ্ন থেকে থাকে এই বিষয়ে তাহলে অবশ্যই আমাদেরকে কমেন্ট করে জানাবেন এবং আমাদের পোস্টটি যদি আপনাদের ভালো লেগে থাকে তাহলে শেয়ার করতে ভুলবেন না।ধন্যবাদ।