চুল স্ট্রেইট করার ৭ নিয়ম

 

চুল স্ট্রেইট করার ৭ নিয়ম

চুল স্ট্রেইট করার নিয়মঃস্ট্রেইট চুল আমাদের সকলের পছন্দের।আমাদের চুল স্ট্রেইট হলে নিজেকে অনেক সুন্দরী মনে হয়। আজকে আমি আপনাদের সাথে চুল স্ট্রেইট করার কয়েকটি নিয়ম সম্পর্কে বলবো। আপনি যদি চুল স্ট্রেইট করার নিয়ম গুলো জানতে পারেন তাহলে খুব সহজেই ঘরে বসেই আপনারা আপনাদের চুল স্ট্রেইট করতে পারবেন।

সিল্কি এবং সুন্দর চুল আমরা সকলেই চাই। কিন্তু চাইলেই তো সব হয় না আমরা সবাই নরম এবং সুন্দর সিল্কি চুলের অধিকারী হতে পারিনি।

আমরা কিন্তু সকলেই চাই যে আমাদের স্বপ্নের নায়িকাদের মত আমাদের চুল যেন সেক্সি স্ট্রেইট এবং সিল্কি হয়।আর কোন নদীকে আমরা এই হিসাবটা করে যখন পার্লারে গিয়ে চুল স্ট্রেইট করার কথা ভাবি তখন আমাদের মাথায় আসে খরচের চিন্তাটা।

আর আপনি যখন পার্লারে গিয়ে চুল সোজা স্ট্রেইট করার কথা ভাববেন সেটা কিন্তু আপনার চুলের স্বাস্থ্যের জন্য খুব একটা ভালো হবে না।

আর এর ফলে আমাদের দুই দিক থেকেই সমস্যা সৃষ্টি হচ্ছে যেমন আমাদের টাকাও বাড়তি খরচ হচ্ছে আবার চুলের স্বাস্থ্যের ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে।

আমরা যখন কোন অনুষ্ঠানে যাই তখন কিন্তু আমাদের চুল কোঁকড়ানো এবং চুল এলোমেলো থাকলে কেমনটা লাগে। তাই আজকে আমি আপনাদেরকে এই আর্টিকেলের মাধ্যমে কিছু নিয়ম বলবো যে নিয়মগুলোর মাধ্যমে আপনারা বাড়িতে বসে নিজের চুল স্ট্রেইট করতে পারবেন।তাহলে চলুন দেরী না করে জেনে নেওয়া যাক চুল স্ট্রেইট করার কয়েকটি নিয়ম সম্পর্কেঃ

চুল স্ট্রেইট করার নিয়ম


(১)হট অয়েল ট্রিটমেন্ট


সাধারণত চুলে হট অয়েল ট্রিটমেন্ট সম্পর্কে আপনারা কম বেশি কিন্তু সকলেই জানেন। চুলের স্বাস্থ্যের উন্নতির জন্য চুলে হট অয়েল ট্রিটমেন্ট খুবই উপকারী একটি উপাদান।

আপনি যদি আপনার কোকড়ানো চুল সোজা করতে চান তাহলে হট অয়েল ট্রিটমেন্ট হতে পারে আপনার চুলের জন্য সবচেয়ে কার্যকরী একটি উপাদান।চুলে হট অয়েল ট্রিটমেন্ট কিভাবে করবেন জেনে নিনঃ

উপকরণ

নারকেল তেল, অলিভ অয়েল, তিলের তেল বা বাদামের তেল বা আপনি চাইলে মাথায় দেওয়া যেকোন ভালো একটি কোম্পানির তেল ব্যবহার করতে পারেন।

চুলে লাগাবেন যেভাবে

আপনাকে প্রথমে এর জন্য তেল হালকা গরম করে আস্তে আস্তে মাথায় লাগাতে হবে। তারপর ১৫ থেকে ২০ মিনিট খুব সুন্দর করে মাসাজ করতে হবে।

তারপর চুল ভালো করে চিরুনি দিয়ে আঁচড়ে নিতে হবে এবং নরম তোয়ালে দিয়ে মাথা পেচিয়ে ৩০ থেকে ৪০ মিনিট রেখে দিতে হবে।

তারপর আপনাকে হালকা শ্যাম্পু দিয়ে চুল ধুয়ে নিতে হবে এবং পরে আবার চিরুনি দিয়ে চুল আঁচড়াতে হবে। আপনি এভাবে সপ্তাহে কয়েকবার করতে পারেন। কোকড়ানো চুল সোজা করার জন্য আপনার চুলের জন্য এটি হতে পারে সবচেয়ে কার্যকরী একটি উপাদান।


২.দুধের ব্যবহার করার মাধ্যমে


আপনারা হয়তো কথাটা শুনে একটু অবাক হয়েছেন যে দুধ দিয়ে কি কোকড়ানো চুল সোজা করা যায়।হ্যাঁ দুধ দিয়ে কোকড়ানো চুল সোজা করা যায়।

দুধ আপনার চুলকে ময়েশ্চারাইজ করে সোজা করার জন্য দারুণ এবং কার্যকারী একটি উপাদান।

উপকরণ

হাফ কাপ দুধ এবং হাফ কাপ জল

চুলে লাগানোর পদ্ধতি

আপনাকে এর জন্য প্রথমে একটি স্প্রে বোতলে দুধ এবং জল নিয়ে ভালো করে মিক্স করে নিতে হবে। তারপর যখন মিক্স করা হয়ে যাবে এটি আপনার চুলের সুন্দর করে স্প্রে করে নিতে হবে।

আপনাকে স্প্রে করার আগে একটি বিষয় খেয়াল রাখতে হবে যেটি হচ্ছে আপনার চুলে যেন কোন ধরনের জট না থাকে। আপনার চুলে কি স্প্রে করা হয়ে গেলে চুল ভালো করে আচড়ে নিতে হবে।

তারপর আপনাকে এইভাবে চুল ৩০ মিনিট রেখে হালকা শ্যাম্পু করে চুল ধুয়ে ফেলতে হবে। আপনি যদি চুলের এই প্যাকটি সপ্তাহে দুই থেকে তিনবার ব্যবহার করতে পারেন তাহলে নিজে নিজেই এর উপকারিতা আপনি কয়েকদিন পর দেখতে পাবেন।

৩.ডিম এবং অলিভ অয়েলের ব্যবহার


আপনার চুলের যত্নে ডিমের উপকারিতা কথাতো কমবেশি সকলেই জানেন। এখন আপনি চাইলে চুল স্ট্রেট বা সোজা করার ক্ষেত্রেও ডিমের ব্যবহার করতে পারেন। চুল স্ট্রেইট করার নিয়ম গুলোর মধ্যে এটি অন্যতম।

আপনাকে এর জন্য ডিমের সাথে অলিভ অয়েল একসাথে করে ব্যবহার করতে হবে। এককথায় আপনার চুল যদি কোকড়ানো হয়ে থাকে তাহলে আপনার কোকড়ানো চুল সোজা করার জন্য এই দুইটি জিনিসের অবদান উল্লেখযোগ্য।

ডিমে থাকে কার্যকারী বিভিন্ন ধরনের উপাদান আপনার চুলকে মসৃণ এবং শক্তিশালী করবে এবং অলিভ অয়েলের ভেতরে থাকা বিভিন্ন উপাদান আপনার চুলকে ময়শ্চারাইজ করবে। তাই এই দুইটি উপাদান যদি আপনি একসাথে ব্যবহার করতে পারেন তাহলে এটি আপনার চুল স্ট্রেইট করতে সাহায্য করবে।

উপকরণ

দুইটা ডিম এবং চার চামচ অলিভ অয়েল

যেভাবে ব্যবহার করবেন

আপনাকে প্রথমে এর জন্য ডিম ভালোভাবে ফেটিয়ে নিতে হবে এবং অলিভ অয়েল মেশাতে হবে। তারপর মেশানো হয়ে গেলে এটা আপনার মাথায় সুন্দর করে ভালোভাবে মিশিয়ে নিতে হবে এবং ওটা ভালো করে মাখিয়ে আস্তে আস্তে চিরুনি করতে হবে।

তারপর শাওয়ার ক্যাপ পড়ে মিশ্রণটি আপনার মাথায় ৪০ মিনিট রেখে দিন।তারপরে আপনি হালকা শ্যাম্পু করে আপনার চুল সুন্দর ভাবে ধুয়ে ফেলুন। তারপরে আপনি এর উপকারিতা নিজের দেখতে পারবেন যে আপনার চুল এর মাধ্যমে কতটা স্ট্রেইট হলো।

৪.অ্যালোভেরা


চুলের যত্নে অ্যালোভেরার ব্যবহার সম্পর্কে আপনারা সবাই জানেন। অ্যালোভেরা জেল চুলের যত্নে সবচেয়ে কার্যকরী একটি উপাদান সেটা অনেকেরই জানা। অ্যালোভেরার ভিতরে বিদ্যমান অ্যানাইজম চুলের বৃদ্ধি দ্রুত করার জন্য সাহায্য করে থাকে।

তাছাড়া অ্যালোভেরা আপনার চুলকে নরম সুন্দর এবং সিল্কি রাখতেও কার্যকারী ভূমিকা পালন করে থাকে। আপনারা চাইলে চুল স্ট্রেইট করার কাজেও এলোভেরার ব্যবহার করতে পারেন।

উপকরণ

হাফ কাপ অ্যালোভেরার রস, হাফ কাপ অলিভ অয়েল

যেভাবে লাগাবেন

প্রথমে আপনাকে একটি পাত্রে হাফ কাপ অলিভ ওয়েল এবং হাফ কাপ অ্যালোভেরার রস নিয়ে নিতে হবে। তারপর এই দুই উপাদান খুব সুন্দর করে একসাথে মিক্স করে নিতে হবে।

তারপর মিক্স করা যখন হয়ে যাবে তখন খুব ভালোভাবে আপনার চুলে এবং স্ক্যাল্পে সুন্দর করে ম্যাসাজ করতে হবে।

তারপর শাওয়ার ক্যাপ দিয়ে মাথা ঢেকে ফেলুন এবং ঘন্টা দুয়েক মত এরকম ভাবে রেখে দেন। তারপরে হালকা শ্যাম্পু দিয়ে চুল ধুয়ে ফেলুন এবং চুল ভেজা অবস্থায় আস্তে আস্তে চিরুনি দিয়ে চুল আঁচড়াতে থাকুন। তারপরে আপনি রেজাল্ট টা নিজে থেকে দেখতে পারবেন।

৫.নারকেলের দুধ ব্যবহার করা


আপনি যদি চুল স্ট্রেইট করার কথা ভাবছেন তাহলে নারকেলের দুধ হতে পারে আপনার চুল সোজা করার জন্য দারুন একটি কার্যকরী উপাদান। নারকেলের দুধ আপনার চুলকে ময়েশ্চারাইজ করার পাশাপাশি চুল সুন্দর এবং সিল্কি করে তুলতে সাহায্য করে থাকে।

তাছাড়া নারকেলের দুধে থাকা বিভিন্ন ধরনের উপাদান আপনার চুলকে বিভিন্ন ধরনের সমস্যা থেকে মুক্তি দিয়ে থাকে খুব সহজেই। তাই আপনারা চুল স্ট্রেইট করার কাজে নারকেলের দুধ ব্যবহার করতে পারেন।

উপকরণ

একটা ফ্রেশ দুধ এবং একটি পাতিলেবু

চুলে লাগানোর পদ্ধতি

আপনি প্রথমে একটি পাত্রে নারকেল দুধ এবং পাতি লেবু নিয়ে সুন্দর করে মিশিয়ে মিক্স করে নিন। তারপর যখন মেশানো হয়ে যাবে পাত্রটিকে ঘন্টা খানেকের মতো ফ্রিজে রেখে দিতে হবে।

তারপর কিছুক্ষণ পর দেখতে পারবেন ওর মধ্যে একটি ক্রিমি আস্তরণ তৈরি হয়েছে।এবার ওই ক্রিমটি আপনার মাথায় ভালো করে লাগিয়ে ২০ মিনিট রেখে দিন।

তারপর আপনার মাথায় কে সাওয়ার ক্যাপ দিয়ে ঢেকে ফেলতে হবে যেন আপনার চুল মশ্চারাইজ থাকে।এইভাবে আপনি ৩০ মিনিট রেখে আপনার চুল হালকা শ্যাম্পু দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।

তারপর আপনার চুল ভেজা অবস্থায় আস্তে আস্তে আস্তে থাকুন এবং কিছুদিন এইভাবে ব্যবহার করার পর আপনি নিজে থেকেই এর উপকারিতা টা দেখতে পারবেন।

৬.কলা আর মধু


চুলকে শক্তিশালী এবং সিল্কি করে তোলার জন্য কলা খুবই কার্যকরী একটি উপাদান। আপনি যখন কলার সাথে মধু মিশিয়ে চুলের জন্য ব্যবহার করবেন তখন এর শক্তি আরো কয়েকগুণ বেড়ে যায়। আপনি চাইলে চুল স্ট্রেইট করার কাজেও এটি ব্যবহার করতে পারেন।

উপকরণ

একটি কলা এবং এক টেবিল চামচ মধু

চুলে লাগানোর পদ্ধতি

প্রথমে আপনাকে এর জন্য একটি কলা খুব সুন্দর করে চটকে নিতে হবে এবং তাতে মধু মিশিয়ে দিতে হবে। তারপর এটি আপনার চুলে সুন্দর করে লাগাতে হবে এবং মিনিট ত্রিশেক মত রেখে দিতে হবে। তারপর হালকা শ্যাম্পু দিয়ে আপনার চুল ধুয়ে ফেলতে হবে এবং আস্তে আস্তে ভেজা চুলে চিরুনি দিয়ে আচড়াতে হবে। আপনি সপ্তাহে এই প্যাকটি দুইবার ব্যবহার করতে পারেন তাহলে কিছুদিন পরই এর রেজাল্ট দেখতে পারবেন।

৭.কলা,দই ও অলিভ অয়েল


চুলের যত্নে অলিভ অয়েল এবং কলার উপকারিতা আপনারা সকলেই জানেন। কিন্তু এই উপাদানগুলো যখন একসাথে মিশিয়ে চুলের জন্য ব্যবহার করা হয়ে যায় তখন এর উপকারিতা আরো অনেকাংশে বেড়ে যায়।

আপনারা চাইলে চুল স্ট্রেইট করার কাজেও এটি ব্যবহার করতে পারেন। এই তিনটির ব্যবহার আপনার চুলকে স্ট্রেইট করতে সাহায্য করবে।

উপকরণ

দুইটা পাকা কলা, ২ টেবিল চামচ মধু,২ টেবিল চামচ অলিভ অয়েল,২ টেবিল চামচ দই

চুলে লাগানোর পদ্ধতি


প্রথমে আপনাকে এই তিনটি জিনিস খুব সুন্দর করে মিক্স করে নিতে হবে। মিক্স করা হয়ে গেলে আপনার চুলে এই প্যাকটি খুব সুন্দর করে লাগাতে হবে। তারপর লাগানো হয়ে গেলে চুল শুকানোর জন্য ৩০ মিনিট রেখে দিন।তারপর আপনি ঠান্ডা পানি দিয়ে হালকা শ্যাম্পু করে চুল ধুয়ে ফেলুন। আপনি চাইলে এই প্যাকটি চুলের জন্য সপ্তাহে একদিন ব্যবহার করতে পারেন।

আমাদের শেষ কথা


চুল স্ট্রেইট করার ঘরোয়া নিয়ম গুলোর মধ্যে এইগুলো হচ্ছে সবচেয়ে কার্যকারী কয়েকটি উপাদান। আপনারা চাইলে প্রাকৃতিকভাবে এসব উপাদান গুলো ব্যবহার করে খুব সহজেই আপনাদের চুলকে স্ট্রেইট করতে পারবেন।তাই ঘরে বসেই আপনার কোকড়ানো চুল করে ফেলুন সোজা এই উপায়গুলো মাধ্যমে।

আরো দেখুন

বাদাম খাওয়ার উপকারিতা

 রসুন খাওয়ার কয়েকটি অসাধারণ উপকারিতা

1 Comments

Post a Comment
Previous Post Next Post