সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন |
আমরা যারা ব্লগিং করে কিছু টাকা উপার্জন করার কথা ভাবছি তাদের অবশ্যই এসইও (SEO) কি, এসইও বলতে মূলত কি বুঝায় এইগুলো জানতে হবে।
যদি আপনি একটি ব্লগ বা ওয়েবসাইট খুলে সেখানে কনটেন্ট লিখার মাধ্যমে ইনকাম করতে চান তাহলে আপনাকে অবশ্যই এসইও কিভাবে করে সেটা জানতে হবে।
আপনি আপনার ব্লগিং ক্যারিয়ারকে তখনোই সফল করে তুলতে পারবেন যখন আপনি সঠিকভাবে করতে সক্ষম হবেন। ব্লগিং সহ ডিজিটাল মার্কেটিং এর নানান ক্ষেত্রে এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়।
অধিকাংশ নতুন ব্লগাররা একটি ভুল করে, সেটি হলো এসইও কি বা এসইওর বিষয়ে না জেনে ব্লগে লিখালিখি করা।
আমি বা আপনি, আমরা সকলেই ব্লগে লিখালিখি করি টাকা উপার্জন করার উদ্দেশ্যে। একটি ব্লগ বানানো থেকে শুরু করে, সেখানে বিভিন্ন কন্টেন্ট পাবলিশ করা, সকল কিছুই শুধুমাত্র একটি কারণে করা।
কারণটি হলো ব্লগে বেশি বেশি ভিজিটর বা ট্রাফিক নিয়ে আসা। কারণ একটি ব্লগ থেকে আপনি আয়ের কথা তখনই ভাবতে পারবেন যখন আপনার ব্লগে পর্যাপ্ত পরিমাণে ভিজিটর আসবে।
আর আপনার ব্লগের ভিজিটর বা ট্রাফিক নিয়ে আসার মূলমন্ত্র হচ্ছে এই এসইও। এসইও করার মাধ্যমে আপনি Google sharch, Yahoo, Bing থাকে অসংখ্য ভিজিটর পেতে পারেন।
তবে এসইও করার আগে আপনাকে অবশ্যই এসইও এর মানে জানতে হবে।
এসইও কি? (What Is SEO?)
এসইও (SEO) মানে হচ্ছে সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন। যার মাধ্যমে আপনি আপনার ওয়েবসাইটে কাঙ্খিত ভিজিটর বা ট্রাফিক পেতে পারেন।
আমরা যখন কোন সার্চ ইঞ্জিনে একটি কীওয়ার্ড লিখে সার্চ করি তখন আমরা সবার আগে একটি ওয়েবসাইট দেখতে পায়, এরপর দ্বিতীয় টি, এভাবে প্রথম দশটি রেজাল্ট আমাদের সামনে আসে। যার সাইট প্রথমে এসেছে অবশ্যই তার এসইও পারফরমেন্স সবথেকে ভালো হয়েছে।
উদাহরণ স্বরূপ, আপনি গুগলে সার্চ করলেন 'How to do SEO?'
আপনার সামনে প্রথম ১০টি রেজাল্ট দেখানো হলো। তাহলে চিন্তা করে দেখুন প্রথমে যে ওয়েবসাইটটি আপনার সামনে দেখানো হচ্ছে সেটিকে কেনো ১০ নম্বরে দেখানো হচ্ছে না?
একইভাবে ১০ নম্বরে যে সাইটটি দেখানো হচ্ছে তাকে কেনোই বা ১০ নম্বরে দেখানো হচ্ছে? তাকে তো প্রথমে দেখানো যেত।
এইটাই হলো এসইওর কাজ। অর্থাৎ আমরা বলতে পারি, এসইও হচ্ছে এমন একটি প্রক্রিয়া যার মাধ্যমে আমরা আমাদের কাঙ্খিত ব্লগ বা ওয়েবসাইটকে গুগল বা অন্যান্য সার্চ ইঞ্জিনের প্রথম পাতায় আনতে পারি।
আর একটি সাইট সার্চ ইঞ্জিনের প্রথম পাতায় আসা মানে সে সাইটে অবশ্যই প্রচুর ভিজিটর যাওয়া।
তবে এখন অনেকের মাথায় প্রশ্ন আসতে পারে যে সার্চ ইঞ্জিন কি?
আমরা যেখানে সার্চ করি সেটাই হলো একটি সার্চ ইঞ্জিন। তাহলে ব্রাউজার কি সার্চ ইঞ্জিন? ব্রাউজার কে সরাসরি সার্চ ইঞ্জিন বলা যাবে না।
কারণ ব্রাউজারে আপনি একটি সার্চ ইঞ্জিন বক্স পাবেন, যেটি হতে পারে Google sharch engine, Bing sharch engine কিংবা Yahoo ইত্যাদি।
তবে গুগল হচ্ছে সবথেকে বিশ্বস্ত এবং বড় সার্চ ইঞ্জিন। গুগলে সকল ধরনের তথ্য রয়েছে।
এসইও অনেক ধরনের হয়ে থাকে। তবে মূলত এসইও হচ্ছে দুই প্রকার।
১.On Page SEO (অন পেজ এসইও)
২.Off Page SEO (অফ পেজ এসইও)
একটি ওয়েবসাইটকে গুগলে রেঙ্ক করানোর জন্য অন পেজ ও অফ পেজ এসইও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তাহলে চলুন 'On page' ও 'off page' এসইওর ব্যাপারে জেনে নেওয়া যাক।
On Page SEO কি?
অন পেজ এসইও হলো এসইওর একটি গুরুত্বপুর্ণ অংশ। তবে অন পেজ বলতে আমাদের ওয়েবসাইটের ভিতরে এসইওর যে কাজগুলো করতে হয় সেগুলোকে বুঝানো হয়ে থাকে।
মূলত অন পেজ এসইও এর প্রয়োগ আমরা আমাদের ব্লগ বা ওয়েবসাইটে করে থাকি।
যেমন ধরুন, এসইও ফ্রেন্ডলি থিম কাস্টোমাইজ করা, এসইও ফ্রেন্ডলি কনটেন্ট লিখা, কীওয়ার্ড এর সঠিক ব্যাবহার, ব্লগের সঠিক হেডিং ট্যাগ ব্যাবহার, আর্টিকেলের টাইটেল, ডেসক্রিপশন, পার্মালিংক এবং এসইওর আরও কিছু টেকনিক।
অন পেজের এই টেকনিক গুলোর মাধ্যমে আমরা আমাদের ব্লগের কনটেন্ট গুলোকে বড় বড় সার্চ ইঞ্জিনের প্রথম পাতায় আনতে পারি।
অন পেজ এসইও করার ধারণা:
১) ওয়েবসাইট লোডিং স্পীড: একটি সাইট তখনই সার্চ ইঞ্জিনে রেঙ্ক হয় যখন সাইটটির লোড স্পিড অনেকটা ভালো হয়। সাইটের ফাস্ট স্পিড এসইওর ক্ষেত্রে অনেক দরকারি।
যদি আপনার ব্লগ বা ওয়েবসাইট দ্রুত ব্রাউজ না হয় তাহলে আপনার সাইটে ভিজিটর আসবে না, বরং বিরক্ত হয়ে ভিজিটর চলে যাবে।
একইসাথে যদি আপনার সাইটের লোডিং স্পীড স্লো থাকে তাহলে গুগলে আপনি কোনোদিন রেঙ্ক পাবেন না, উল্টো আপনার সাইটের উপর বাজে প্রভাব পড়বে।
তাই অবশ্যই চেষ্টা করবেন আপনার সাইটের লোডিং ভালো রাখার। এক্ষেত্রে একটি ফাস্ট থিম, যদি ওয়ার্ডপ্রেস ব্যাবহার করে থাকেন তাহলে ভালো মানের হোস্টিং, ব্লগে ব্যাবহার করা ছবিগুলোকে কমপ্রেস করে ব্যাবহার করুন ও cache ক্লিনার প্লাগিন ব্যাবহার করবেন।
২)হেডিং ট্যাগ : আপনার পোস্টে অবশ্যই হেডিং ট্যাগ এর ব্যাবহার করবেন। h1, h2, h3, h4, h5 ও h6 এর সঠিক ব্যাবহার করতে হবে।
হেডিং ট্যাগ ব্যবহার করলে ভিজিটররা খুব সহজে আপনার আর্টিকেলের মূল বিষয় বুঝতে পারবে।
৩)Internal linking :ব্লগের পোস্ট অবশ্যই Internal linking করুন। ব্লগের এসইওর জন্য এটি অনেক দরকারি।
Internal linking হলো আপনার ব্লগের একটি আর্টিকেল লিখার সময় সেই আর্টিকেলের সাথে সামঞ্জস্য রেখে কোনো আর্টিকেলের লিংক দেওয়া।
অর্থাৎ ধরুন আপনি আর্টিকেল লিখছেন 'অনলাইন থেকে আয় করার ৫ উপায়'
তাহলে আপনি আয় সম্পর্কিত আপনার ব্লগে এর আগে লিখা একটি আর্টিকেলের লিংক এখানে দিতে পারেন। এইটাই মূলত Internal linking পদ্ধতি।
এছড়াও ALT ট্যাগ, ছবি, সার্চ ডেসক্রিপশন, কনটেন্ট এর মধ্যে কীওয়ার্ড এর ব্যাবহার অবশ্যই করতে হবে অন পেজ এসইও করার জন্য।
এতক্ষণ আমরা অন পেজ এসইও সম্পর্কে কিছু ধারণা নিলাম, চলুন অফ পেজ এসইও নিজে জানা যাক।
Off Page SEO কি?
অফ পেজ সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন এমন একটি প্রক্রিয়া যেটি আমরা আমাদের ব্লগের মধ্যে করতে পারি না। অন পেজ এসইওর ক্ষেত্রে আমরা আমাদের সাইটের ভিতরে বিভিন্ন কাজ করে থাকি, তবে অফ পেজ এর ক্ষেত্রে এর ঠিক উল্টোটা।
আমাদের সাইটে কোনো কনটেন্ট পাবলিশ করার পর শুরু হয় অফ পেজ অপটিমাইজেশন এর কাজ।
অফ পেজ এসইও এর মধ্যে
★ব্লগ/ওয়েবসাইট সার্চ ইঞ্জিনে সাবমিট করা
★Directory Submission এর ব্যাবহার করা
★ব্যাকলিংক
★Blog Commenting করা
★গেস্ট পোস্ট
★বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়া সাইটের ব্যাবহার
এসমস্ত কাজগুলো মূলত অফ পেজ এসইও এর মধ্যে করা হয়ে থাকে।
অর্থাৎ একটি ওয়েবসাইট রেঙ্ক করানোর জন্য ওয়েবসাইটের বাহিরে যে যে কাজগুলো করতে হয় সেগুলোই অফ পেজ এসইও নামে পরিচিত।
SEO জানলে আপনার জন্য অনেক ধরনের কাজ অপেক্ষা করবে। এখন অনেকে বলবে যে এসইও শিখে লাভ কি?
যদি আপনি ভালো এসইওর কাজ জানেন তাহলে আপনার জন্য ইনকাম করার অসংখ্য উপায় রয়েছে। আপনি চাইলে একটি সাইট বানিয়ে সেটিতে এসইও করার মাধ্যমে প্রচুর ভিজিটর নিয়ে আসতে পারবেন।আর আপনার ইনকামের পরিধিও বাড়তে থাকবে।
তাছাড়া আপনি যদি ভালো এসইও এক্সপার্ট হন তাহলে এসইও শেখানোর মাধ্যমে আপনি ইনকাম করতে পারেন। অথবা আপনি এসইও কোর্স বানিয়ে সেটিকে বিক্রি করতে পারেন।
বর্তমান দিনে এসইও এর চাহিদা অনেক বেশি। তবে যদি আপনি এসইওর কাজ জেনে থাকেন, তাহলে সেটিকে অবশ্যই কাজে লাগান। আজকের আর্টিকেল এই পর্যন্ত। যদি আপনাদের কারো কিছু বুঝতে অসুবিধা হয় তাহলে অবশ্যই মন্তব্য করে জানাবেন। ধন্যবাদ