বর্তমানে দেশের চাকরির বাজারে যা আকাল চলছে তাতে করে পড়াশোনা শেষ করে চাকরি পাওয়া যাবে কিনা তা নিয়ে দুরূহ রয়েছে। তাই বর্তমানে অনেক পড়াশুনা শেষ করে ছাত্র-ছাত্রী থেকে শুরু করে সকলেই ব্যবসার দিকে ঝুঁকেছে। তাছাড়া ব্যবসা যেহেতু স্বাধীন একটি পেশা তাই ব্যবসা করতে ইচ্ছুক উদ্যোক্তার সংখ্যা এখন আমাদের বাংলাদেশে কম নেই।
কম পুঁজির সেরা ১০ ব্যবসা আইডিয়া |
অনেকে ব্যবসা করতে চাই কিন্তু ব্যবসা কিভাবে শুরু করবেন কীভাবে তারা ব্যবসা পরিচালনা করে জীবনের সফল হবেন এই বিষয় নিয়ে অনেকে ভাবেন। আর সাধারনত তাদের নিয়েই আজকের আমাদের এই আর্টিকেলটি লেখা।
আজকের এই আর্টিকেলের আমি আপনাদের সাথে আরও বলব কিভাবে আপনারা কম পুজির ব্যবসা শুরু করবেন এবং কম পুজির ব্যবসা শুরু করার মাধ্যমে কিভাবে আপনারা সফল হবেন সেই সম্পর্কে। তাহলে চলুন দেরী না করে জেনে নেওয়া যাক।
কম পুজির ব্যবসা কি?
কম পুজির ব্যবসা কি আপনারা হয়তো সকলেই জানেন। যে ব্যবসাতে কম পুঁজি খাটিয়ে শুরু করা যায় তাকে বলা হয়ে থাকে মূলত কম পুজির ব্যবসা। আমাদের মতো দরিদ্র একটি দেশে অত বেশি পুঁজি নিয়ে ব্যবসা শুরু করার যোগ্যতা হয়তো অনেকেরই থাকে না। যার ফলে অনেকেই চান যে কম পুজির ব্যবসা শুরু করব।
কিন্তু তারা সঠিক গাইডলাইন পান না যার ফলে ব্যবসা শুরু করতে পারেন না। তাদের জন্য আমরা আজকে কম পুজির ব্যাবসা আইডিয়া সম্পর্কেও আলোচনা করব।তাহলে চলুন জেনে নেওয়া যাক কয়েকটি কম পুজির ব্যাবসা আইডিয়া সম্পর্কে।
কম পুজির ব্যবসা আইডিয়া?
চায়ের দোকানের ব্যবসা
আপনি যদি কম পুজির ব্যবসা খুঁজতে চান তাহলে এটি হতে পারে আপনার জন্য দারুন একটি ব্যবসা। আপনি চাইলে কি স্বল্প পুজিতে চায়ের দোকানের ব্যবসা করতে পারেন। সাধারণত চায়ের দোকান দিতে যেমন বেশি সংখ্যক পুঁজি এর প্রয়োজন হয় না। আপনি চাইলে ও স্বল্প পুজিতে চায়ের একটি সুন্দর দোকান দিতে পারবেন এবং কম খরচে এখান থেকে বেশি লাভ করতে পারবেন।
আপনাকে এই ক্ষেত্রে কোন একটি দোকান ধরেন সেই দোকান থেকে চিনি এবং চাপাতি সংগ্রহ করে আনতে হবে এবং সেগুলো দিয়ে আপনাকে চা বিক্রি করে কাস্টমারদের পরিবেশন করতে হবে। আপনার দোকানের কাস্টমার যত বেশি হবে এবং যত বেশি চা বিক্রি করতে পারবেন আপনি এই ব্যবসায় যত বেশি দ্রুত সফল হতে পারবেন। তাই আপনি যদি অল্প পুঁজির ব্যবসা করতে চান তাহলে এটা করতে পারেন।
ফাস্ট ফুডের দোকানের ব্যবসা
ফাস্ট ফুডের দোকানের ব্যবসা হচ্ছে অল্প পুঁজির ব্যবসার মধ্যে আরো একটি দারুন লাভজনক ব্যবসা। এই ব্যবসাটি চাইলে যে কেউ করতে পারেন। তবে এই ব্যবসা করার আগে আপনাকে একটি বিষয় খেয়াল রাখতে হবে যেখানে অনেক মানুষের সংগম একটা স্থানে সুন্দর লোকেশন দেখে দোকান টা দেওয়ার জন্য।
আপনি যদি সুন্দর জায়গায় দোকানটির দিতে পারেন তাহলে আপনার কাস্টমার বৃদ্ধির হার অনেকাংশে বেড়ে যাবে এবং আপনার লাভের পরিমাণ বৃদ্ধি পাবে। ফাস্ট ফুডের দোকানের যেহেতু অসংখ্য আইটেম রয়েছেন তাই আপনি এই সকল আইটেমগুলো থেকে ভালো পরিমাণে লাভ করতে পারবেন খুব সহজেই।
তাই আপনি যদি মনে করেন অল্প পুঁজির ব্যবসা করে নিজেকে স্বাবলম্বী করে তুলবেন তাহলে এটি হতে পারে আপনার জন্য দারুন একটি ব্যবসা।
কসমেটিকস এর দোকানের ব্যবসা
কসমেটিকসের দোকান এর ব্যবসাটি হচ্ছে অল্প পুজিতে আরও একটি লাভজনক ব্যবসা। তবে এই ব্যবসাটি করার পেছনেও আপনাকে সুন্দর লোকেশন সিলেক্ট করতে হবে এবং জায়গা মতো লোকেশনে আপনাকে এই ব্যবসাটি করতে হবে। আপনি কসমেটিকসের দোকান দিতে পারেন এমন জায়গায় যেখানে মেয়েদের আসার মত পরিবেশ রয়েছে বা জনসঙ্গম মূলক একটি স্থানে।
সব থেকে ভাল হয় আপনি যদি কসমেটিকসের দোকান থেকে কোন হাই স্কুল বা কলেজের সামনে দিতে পারেন। কেননা এসব স্থানে থাকা মেয়েরা আপনার দোকানে এসে সরাসরি মাল কিনবে যার ফলে আপনার আর কাস্টমারের অভাব হবে না।
তাই আপনি যদি অল্প পুজিতে মনে করেন যে ব্যবসা শুরু করব তাহলে এই ব্যবসাটি আপনি শুরু করতে পারেন। এই ব্যবসাটি শুরু করার মাধ্যমে আপনি খুব দ্রুতই সফল হতে পারবেন।
কম্পিউটারের দোকান দিয়ে ব্যবসা
আপনি আপনি চাইলে এই ক্ষেত্রে কম্পিউটারের দোকান দিয়ে গান লোড দেওয়া, ফটোকপি প্রিন্ট করা এই ব্যবসাটি শুরু করতে পারেন। এই ব্যবসাটি খুবই লাভজনক একটি ব্যবসা অল্প পুঁজির ব্যবসার মধ্যে। আপনি যদি দোকানটির ভালো লোকেশন দেখে দিতে পারেন তাহলে প্রতিদিন প্রচুর প্রচুর কাস্টমার আপনার দোকানে এসে ভীড় করবে এবং আপনি এখান থেকে ভালো পরিমাণে অর্থ উপার্জন করে নিতে পারবেন অল্প কিছু কাজের মাধ্যমে।
তাই আপনার জন্য তেমন কোন ভাল জায়গায় জায়গা থেকে থাকে তাহলে অল্প কিছু বুঝে নিয়েছে এই ব্যবসাটি শুরু করতে পারেন এবং ব্যবসায়িক হিসেবে নিজেকে সফল করে তুলতে পারেন।
ফ্লাক্সি লোড ও বিকাশের ব্যবসা
গ্রামে শিক্ষিত ছেলেদের জন্য এটি হতে পারে এখনই উপযুক্ত একটি ব্যবসা। গ্রামে অনেক শিক্ষিত ছেলে থাকে যারা চাকরি না পেয়ে বেকার বসে থাকেন তারা চাইলে এই কাজটি করতে পারেন। সাধারণত এই ব্যবসাটি করার জন্য আপনার তেমন বেশি টাকার প্রয়োজন হবে না শুধুমাত্র বিকাশের এজেন্ট নেওয়ার জন্য আপনার দিতে হতে পারে কিছু টাকা।
তারপরে আপনার কাজ হলো ভালো একটি জায়গা বেছে দোকানটি দিয়ে ব্যবসা শুরু করা এবং আপনি যদি এই ব্যবসায় কিছু কাস্টমারের সাথে ভাল সম্পর্ক তৈরী করতে পারেন তাহলে আপনাকে আর এক্ষেত্রে পিছনে ফিরে তাকাতে হবে না। তাই আপনি যদি অল্প পুজিতে কোন ব্যবসা শুরু করতে চান তাহলে এই ব্যবসাটি শুরু করতে পারেন এটি হতে পারে আপনার জন্য খুবই কার্যকরী একটি ব্যবসা।
মুদির দোকান দিয়ে ব্যবসা
মুদির দোকান দিতে তেমন বেশি টাকার প্রয়োজন হয় না। আপনি চাইলে অল্প পুঁজির মধ্যে এই ব্যবসাটি শুরু করতে পারেন। তবে এই সকল ব্যবসা করার জন্য বেশ কিছু পদ্ধতি অবলম্বন করতে হয় আপনি যদি এসকল সঠিক পদ্ধতি অবলম্বন করে ব্যবসা করতে পারেন তাহলে আপনার দোকান কিছুদিনের মধ্যে বড় হয়ে যাবে।
মুদি দোকানের ব্যবসাকে বলা হয়ে থাকে স্বাধীন ব্যবসা কেননা আপনি এই ব্যবসাতে নিজের মন মত যার কিছু তাই করতে পারবেন। তাছাড়া বর্তমানে মুদির দোকানের ব্যবসা খুবই জনপ্রিয় হয়ে গিয়েছে কেননা এখানে পুঁজিবাদে ও ব্যবসা করা যাচ্ছে। অনেক কোম্পানি আছে যারা আপনাকে বাকিতে মাল দিবে এবং মাল বিক্রির পর টাকা নেবে।তাই আপনি কম পুঁজির ব্যবসার মধ্যে ব্যবসা যোগ করতে পারেন।
ইলেকট্রনিক দোকানের ব্যবসা
আপনি চাইলে অল্প পুঁজির মধ্যে ইলেকট্রনিক দোকানের ব্যবসা করতে পারেন। কেননা বর্তমানে বিদ্যুতের এই যুগে ইলেকট্রনিক্স মালামাল এর চাহিদা রয়েছে প্রচুর। আপনি যদি একটি ইলেকট্রনিক্সের দোকান দিয়ে সকল ধরনের মালামাল রাখতে পারেন তাহলে অবশ্যই এই ক্ষেত্রে আপনার কাস্টমারের অভাব হবে না। আর আপনি যদি এই ক্ষেত্রে ইলেকট্রনিকের কাজ জানি তাহলে তো কোন কথাই নাই।
সঠিক জায়গা দেখে আপনি যদি দোকান দিতে পারেন তাহলে আপনি প্রচুর কাস্টমার পেয়ে যাবেন এবং এই ব্যবসার মাধ্যমে খুব দ্রুত আপনি সফলতার মুখ দেখতে পারবেন। তাই অল্প পুঁজির ব্যবসার মধ্যে এটি হতে পারে আপনার জন্য দারুন একটি ব্যবসা।
পানের পাইকারি ব্যবসা
আপনি চাইলে অল্প পুজিতে পানের এই পাইকারি ব্যবসা করতে পারেন। পানের পাইকারি ব্যবসাটি আপনার পক্ষে সবচেয়ে ভালো হয় যদি আপনাদের নিজেদের কোন বরজ থাকে। আপনাকে এই ক্ষেত্রে শুধু পান সংগ্রহ করে নিয়ে যেতে হবে এবং এলাকার বিভিন্ন দোকানে দোকানে পাইকারিভাবে পান বিক্রি করতে হবে।
আপনি খুব সহজেই এই ব্যবসার মাধ্যমে নিজেকে স্বাবলম্বী করে ফেলতে পারবেন এবং এর ব্যবসা থেকে অর্থ উপার্জন করতে পারবেন। তাই আপনি যদি চান যে অল্প পুঁজির ব্যবসা করবেন তাহলে পানের পাইকারি ব্যবসাটি আপনি শুরু করতে পারেন।
কোচিং সেন্টার খুলে ব্যবসা
আপনি যদি একজন শিক্ষিত বেকার যুবক হয়ে থাকেন তাহলে আপনি কোচিং সেন্টার খুলে ব্যবসা শুরু করতে পারেন। আপনাকে কোচিং সেন্টার শুরু করার জন্য তেমন বেশি পুঁজির প্রয়োজন হবে না শুধুমাত্র একটি জায়গা দেখে সেখানে ঘিরে দিয়ে কিছু টেবিল এবং বেঞ্চের ব্যবস্থা করতে হবে।
সেই সাথে থাকবে বোর্ড এবং আপনি নিজে যদি কোচিং সেন্টারে শিক্ষকতা করতে পারেন তাহলে সবথেকে ভালো হয়। সবকিছু ঠিকঠাক হয়ে গেলে আপনি আপনার এই কোচিং সেন্টারের প্রচার করা শুরু করুন এবং কিছু শিক্ষার্থী যখন আপনার কোচিং সেন্টারে আসবে তখন তাদের দেখাদেখি আরো অনেক শিক্ষার্থী আসবে।
এভাবে আপনি আপনার কোচিং সেন্টারের মাধ্যমে বেকারত্ব জীবন দূর করতে পারেন এবং এই ব্যবসাটি করার মাধ্যমে নিজেকে স্বাবলম্বী হিসেবে গড়ে তুলতে পারেন।
হোটেল দোকান দিয়ে ব্যবসা
আপনি চাইলে ভালো একটি জায়গায় খুবই সুন্দর একটি হোটেল দিয়ে ব্যবসা শুরু করতে পারেন। বর্তমানে হোটেলের ব্যবসা করার মাধ্যমে অনেক ব্যবসায়ী লাভবান হয়েছেন এবং এই ব্যবসা করার মাধ্যমে তারা জীবনের সফলতা অর্জন করতে পেরেছেন। হোটেলের ব্যবসা করার জন্য তেমন বেশি পুজির প্রয়োজন হয় না।
আপনি শুধুমাত্র খাবার হোটেলে একজন কারিগরের ব্যবস্থা করে দিয়ে সেই আপনার দোকানের সবকিছু দেখভাল করবে। আপনি এই ব্যবসাতে সময় কম দিয়েও ভালো পরিমাণে লাভ করতে পারবেন যা সাধারণত অন্যান্য কোন ব্যবসার মাধ্যমে সম্ভব নয়। তাই আপনি চাইলে অল্প পুঁজির ব্যবসার মধ্যে এই খাবার হোটেলের ব্যবসা ঠিক করতে পারেন।
আমাদের শেষ কথা
আমি আজকে আমাদের এই আর্টিকেলের মাধ্যমে আপনাদেরকে অল্প পুঁজির সেরা কয়েকটি ব্যবসা আইডিয়া সম্পর্কে বলতে চেয়েছি। যারা সাধারণত ব্যবসা শুরু করতে গিয়েও শুরু করতে পারছেন না সঠিক গাইডলাইন এর অভাবে তাদেরকে আমরা ব্যবসার গাইডলাইন দিতে চেয়েছি।
এই সম্পর্কে যদি আপনাদের আরো কোন প্রশ্ন থাকে তাহলে কমেন্ট করে জানাতে পারেন। আর আমাদের এই পোস্টটি যদি আপনাদের ভালো লাগে তাহলে অবশ্যই শেয়ার করবেন।