মোবাইল রিচার্জের ব্যবসা করার নিয়ম

ব্যবসা সবসময়ের মতই লাভজনক এবং জনপ্রিয় পেশা বললে আমি ভুল হবে না। আমাদের দেশে অধিকাংশ মানুষ ব্যাবসা করে নিজের ক্যারিয়ার গড়ে নিয়েছে। তবে ব্যবসা শুরুর আগে আমাদের পুঁজি, স্থান, পণ্য ইত্যাদি বিষয়বস্তু সম্পর্কে ভাবতে হয়। এসকল বিষয়বস্তুর মধ্যে গুরুত্তপূর্ণ একটি বিষয় হচ্ছে পুঁজি।

মোবাইল রিচার্জের ব্যবসা করার নিয়ম
মোবাইল রিচার্জের ব্যবসা করার নিয়ম

বিজনেস শুরুর আগে নিজের পুঁজি সম্পর্কে চিন্তা করাটা জরুরি। পুঁজির কথা চিন্তা করে আমরা নির্ধারণ করি কোন ব্যবসাটি আমরা করবো। তবে সল্প পুঁজির ব্যবসাগুলোর মধ্যে মোবাইল রিচার্জের ব্যবসা একটি লাভজনক ব্যবসা।

যদি আপনি একদম শুরুতে অল্প পুঁজি দিয়ে নিজের একটি ব্যবসা পরিচালনা করতে চাচ্ছেন সেক্ষেত্রে রিচার্জ এর ব্যবসা করতে পারবেন। আর তাই আজকের আর্টিকেল দ্বারা আমরা মোবাইল রিচার্জের ব্যবসা সম্পর্কে বিস্তারিত জানবো। অনেক কথা বলে ফেললাম, এখন চলুন মূল বিষয় আসা যাক।

মোবাইল রিচার্জের ব্যবসা কি?

মোবাইল দ্বারা অন্য কারো মোবাইলে কল করার ক্ষেত্রে আমাদের সিমে ব্যালান্স থাকতে হয়। আর এই ব্যালান্স লোড করার ক্ষেত্রে আমরা যাদের কাছে যাই তারা হচ্ছেন মোবাইল রিচার্জ বা ফ্লেক্সিলোড ব্যবসায়ী। অর্থাৎ এটা তাদের একটা ব্যবসা। 

তারা আমাদের ফোনে টাকা লোড করে দেওয়ার বিপরীতে নির্দিষ্ট কিছু কমিশন আয় করে থাকে। মূলত এটি হচ্ছে Mobile Recharge ব্যবসা। বাংলাদেশে ফ্লেক্সিলোড এর ব্যবসা করাটা অন্যান্য ব্যবসায়ের থেকে অনেকটাই সহজ বলা যায়। এই ব্যবসায় একটু পরিশ্রম করতে পারলে আপনি ভালো আয় করতে পারবেন এটি থেকে।

কিভাবে করবেন ফ্লেক্সিলোড/মোবাইল রিচার্জ ব্যবসা?

ফ্লেক্সিলোড ব্যবসা শুরু করার ক্ষেত্রে কয়েকটি ধাপে আমাদের কাজ করতে হবে। এমনিতে সব ধরনের ব্যবসার শুরুতেই কিছু ধাপ মেনে কাজ করতে হয়। এই ব্যবসাটিতেও তার ভিন্নধর্মী কিছু নয়।

সঠিক স্থান নির্বাচন

এটা নিশ্চয় আপনি জেনে থাকবেন যে, সকল ধরনের বিজনেস পরিচালনা করার ক্ষেত্রে দোকান দেওয়ার সঠিক জায়গা নির্বাচন করাটা অনেক জরুরী। ফ্লেক্সিলোড এর ব্যবসা শুরু করতে হলেও আপনাকে অবশ্যই একটি উপযুক্ত জায়গা বেছে নিতে হবে। কারণ আপনি এমন একটি জায়গায় দোকান দিলেন যেখানে কোনো মানুষ ফ্লেক্সিলোড করতে যায়না, এক্ষেত্রে কিন্তু আপনার লোকসান গুনতে হবে।

সুতরাং একটি উপযুক্ত জায়গা নির্বাচন করে ফ্লেক্সিলোড ব্যবসা শুরু করুন। তবে যেখানে আগে থেকে অনেকগুলো রিচার্জ এর দোকান রয়েছে সেখানে দোকান শুরু না করাটা ভালো। কিন্তু যদি কাস্টমার ভালো থাকে তবে অবশ্যই শুরু করতে পারেন। তবে বড় মার্কেটের মধ্যে, বিভিন্ন স্টেশন, লোকের ভিড় থাকে এমন জায়গায় শুরু করাটা ভালো হবে।

আপনার রিচার্জ এর দোকান দিন

জায়গা নির্বাচন করা হয়ে গেলে আপনাকে ফ্লেক্সিলোড এর দোকান দিতে হবে। চেষ্টা করুন আপনার দোকানটি কাস্টমারদের সামনে সুন্দরভাবে উপস্থাপন করতে। এতে সবাই আপনার কাছে ফ্লেক্সিলোড এর জন্য আসবে।

দোকানে বিভিন্ন ফ্লেক্সিলোড সাইনবোর্ড ঝুলিয়ে দিতে পারেন। এতে সবাই সহজে বুঝতে পারবে আপনি ফ্লেক্সিলোড করেন। একদম খালি দোকানে ফ্লেক্সিলোড ব্যবসা না করে আরো অন্যান্য পণ্য দিয়ে আপনার দোকান সাজাতে পারেন।

বাজেট নির্ধারণ করে রাখুন

বিজনেস শুরু করার আগে উক্ত বিজনেসে কি পরিমান খরচ হবে না হবে সে বিষয়টা ঠিক করে নেওয়া প্রয়োজন। অর্থাৎ ব্যবসার একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো বাজেট পরিকল্পনা। অন্যান্য সব ব্যবসার মতই ফ্লেক্সিলোড ব্যবসা শুরু করতে হলে আপনাকে বাজেট নির্ধারণ করতে হবে। 

যেমন ধরুন দোকান বাবদ, দোকানের নানান আওনুসঙ্গিক খরচ, মোবাইল রিচার্জ, রিচার্জের ফোন ইত্যাদি বাবদে কত খরচ হবে সেই নির্ণয় করে নেওয়া ভালো। এসকল খরচের পরিমাণ নির্ণয় করে টাকা গুছিয়ে নিন। পরবর্তীতে ব্যবসায় নেমে পড়তে সুবিধা হবে।

ব্যবসার প্রচার করুন

ব্যবসার লাভের জন্য প্রচার এবং মার্কেটিং করাটা অনেক গুরুত্বপূর্ণ। প্রচার দ্বারা আপনি আপনার ব্যবসাটি অনেকের নিকট পৌঁছে দিতে পারবেন। এক্ষেত্রে প্রচারণার স্বার্থে আপনার ব্যবসায়ের বিভিন্ন পোস্টার দিতে পারেন। 

ভালোভাবে প্রচার কাজ চালাতে পারলে আপনার দোকানে কাস্টমার ভালো থাকবে সবসময়। প্রচারের জন্য অবশ্য কিছু টাকা খরচ হতে পারেন তবুও এতে আপনার ব্যবসায়ের লাভ হবে।

ডিলার খুঁজুন

ফ্লেক্সিলোড ব্যবসার ক্ষেত্রে আপনাকে ডিস্ট্রিবিউটর বা ডিলার খুঁজতে হবে। কেননা মোবাইল কোম্পানির ডিলার ব্যতীত আপনি এই ব্যবসাটি করতে পারবেন না। তাহলে ডিলার কিভাবে খুঁজবেন? ডিলার খুঁজতে আপনাকে জায়গায় জায়গায় হাঁটার প্রয়োজন নেই। 

আপনার আসে পাশের রিচার্জ ব্যবসায়ীদের কাছে থেকে আপনি ডিলার এর বিষয়ে খোঁজ নিতে পারেন। এই কয়েকটি ধাপ অনুসরণ করে আপনি শুরু করতে পারেন আপনার ফ্লেক্সিলোড বা রিচার্জের ব্যবসাটি।

ফ্লেক্সিলোড/রিচার্জ বিজনেস শুরু করতে কি কি লাগবে?

যেকোন ধরনের বিজনেস শুরু করতে কিছু না কিছু রিকোয়ারমেন্ট প্রয়োজন হয়। এক এক ধরনের বিজনেসে ভিন্ন রকমের রিকোয়ারমেন্ট প্রয়োজন হয়ে থাকে। তবে ফ্লেক্সিলোড ব্যবসার ক্ষেত্রে কি কি লাগবে চলুন সেই বিষয়ে জেনে নেই।

১) যেহেতু এই ব্যবসায় আপনি অন্য কারো ফোনে টাকা লোড করবেন সেহেতু আপনার মোবাইল সেটের প্রয়োজন হবে। বাংলাদেশে ৫ টি সিম মানুষ বেশি ব্যবহার করে। সিমগুলো হলো গ্রামীণ সিম, রবি সিম, টেলিটক সিম, এয়ারটেল সিম এবং বাংলালিংক সিম।

এক্ষেত্রে ৫ টি সিমের জন্য ডুয়েল সিম আছে এমন তিনটি মোবাইল নিতে পারেন। বর্তমান মার্কেটে ১ হাজার থেকে শুরু করে বিভিন্ন দামের মোবাইল পাওয়া যায়। রিচার্জ ব্যবসার জন্য আপনি ১ হাজার থেকে ২ হাজার টাকা দামের ফোনগুলো নিয়ে পারেন।

২) ৫ টি সিমে রিচার্জ ব্যবসা করতে আপনাকে ৫ টি সিমের কোম্পানি থেকে সিম কিনতে হবে। তবে আপনার ৫ টি সিম নিতে হবে এমন কোনো কথা নেই। আপনার এলাকায় যে সিম চলে সেগুলোই কিনতে পারেন।

৩) ফ্লেক্সিলোড ব্যবসার ক্ষেত্রে ট্রেড লাইন্সেস এবং যাবতীয় কাগজপত্র গুছিয়ে নিবেন। ফ্লেক্সিলোড এর ক্ষেত্রে আর তেমন আহামরি কিছুর প্রয়োজন নেই। মোবাইল এবং সিম থাকলেই শুরু করতে পারেন।

ফ্লেক্সিলোড বা রিচার্জ এর ব্যবসায় লাভ কেমন?

ফ্লেক্সিলোড ব্যবসায় আপনি নির্দিষ্ট কমিশন আয় করতে পারবেন। তবে সিম কোম্পানিগুলো সাধারণত ১ টাকা লোড করার বিপরীতে ২৭-৩০ টাকা পর্যন্ত কমিশন দিয়ে থাকে। সে অনুযায়ী আপনি যদি এক দিনে ১০ হাজার টাকা সর্বমোট লোড করতে পারেন তাহলে, ১০*৩০= ৩০০ টাকা কমিশন আয় হবে আপনার এক দিনে। এছাড়া সিম কোম্পানিগুলো বিভিন্ন মিনিট ব্যান্ডেল, ইন্টারনেট প্যাক ইত্যাদি ফ্লেক্সিলোড বাবদে আলাদা কিছু কমিশন দিয়ে থাকে।

পরামর্শ

Mobile Recharge Business এর ক্ষেত্রে খুব বেশি অর্থ আপনি লাভ করতে পারবেন না। এখানে সীমিত কমিশন আয় করতে পারবেন আপনি। সত্যি বলতে বর্তমান দিন অনুসারে আপনি শুধুমাত্র রিচার্জ ব্যবসা করে চলতে পারবেন না। তবে আমি আপনাদের এটা বলছি না যে আপনারা ফ্লেক্সিলোড ব্যবসা করবেন না। অবশ্যই কম পুঁজিতে মোটামুটি কমিশন আপনি আয় করতে পারবেন।

তবে শুধুমাত্র ফ্লেক্সিলোড এর দোকান দিয়ে বা ব্যবসা করে পোষাতে পারবেন না। এক্ষেত্রে অন্য কোনো ব্যবসার সাথে ফ্লেক্সিলোড ব্যবসাটি করতে পারেন। এতে আপনার উক্ত বিজনেস লাভের পাশাপাশি আলাদা কমিশন আয় করা হয়ে যাবে।

আমাদের শেষ কথা

বন্ধুরা আজ আমরা মোবাইল রিচার্জের ব্যবসা সম্পর্কে কমপ্লিট ধারণা নিলাম।আশা করি আর্টিকেলটি দ্বারা সম্পন্ন করেছেন সব বিষয় বুঝতে পেরেছেন একটি ব্যবসা শুরুর ক্ষেত্রে যে যে বিষয়গুলো মাথায় রাখতে হয় সেগুলো সকল কিছুই আমি আপনাদের বুঝিয়ে বলার চেষ্টা করেছি। আর আর্টিকেলের শেষে আমি আপনাদের যে পরামর্শটি দিয়েছি সেটি অনুসরণ করলেই আপনি এই বিজনেস করে মোটামুটি লাভ করতে পারবেন।

তবে বাড়িয়ে বসে বা এমনিতে সময় নষ্ট না করে এই ব্যবসায় লেগে পড়লে ভালো কিছু করতে পারবেন। একটু শ্রম ব্যয় করলে অবশ্যই যেকোনো ব্যবসায় লাভ করা সম্ভব। আর্টিকেল নিয়ে কোনো প্রশ্ন করার থাকলে অবশ্যই কমেন্ট করবেন। আমরা আপনার সমাধান দেওয়ার চেষ্টা করবো, আল্লাহ হাফেজ।
Akash

প্রযুক্তির খবর, শিক্ষা ও ইন্সুরেন্স, ভিসার খবর, স্বাস্থ্য টিপস ও অনলাইনে আয় সম্পর্কিত তথ্যের বিরাট একটি প্ল্যাটফর্ম।

Post a Comment (0)
Previous Post Next Post