ব্যবসা পেশা হিসেবে অত্যন্ত ভালো একটি মাধ্যম। সঠিকভাবে ব্যবসায় পরিচালনা করার মাধ্যমে একজন ব্যবসায়ী সফল হয়ে থাকেন। আজ প্রায় ৬০ শতাংশ মানুষ ব্যবসা কে নিজেদের পেশা হিসেবে পছন্দ করছে। তবে ব্যবসা করার আগে আপনাকে ব্যবসা করার নিয়ম বা নীতি সম্পর্কে ধারণা রাখতে হবে।
ব্যবসা |
অনেক মানুষ যারা ব্যবসা কে নিজেদের পেশা হিসেবে নিতে চায় তারা শুরুতে জানেন না ব্যবসা করার সকল প্রকার নিয়ম নীতি সম্পর্কে। শুধুমাত্র কেনা বেচার লেনদেন এর মাধ্যমে ব্যবসা পরিচালনার কাজ হয় না, আরো অনেক কাজ থাকে একটি ভালো ব্যবসা পরিচালনা করার জন্য।
প্রয়োজন হয় সঠিক উদ্যোগ ও উদ্যোক্তার। একটি সুষ্ঠ ব্যবসায় পরিচালনা করার জন্য আরও প্রয়োজন সঠিক পরিকল্পনা এবং দিক নির্দেশনার। সকল কিছুর সমন্বয়ে পরিচালিত হয় একটি ব্যবসা।
ব্যবসা কি?
সাধারণত মুনাফা অর্জনের উদ্দেশ্যে পরিচালিত অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডকে ব্যবসা বলে। ব্যবসা এর মূল উদ্দেশ্য হলো মুনাফা অর্জন করা। ব্যবসায়ের উৎপত্তির মূলে ছিল মানুষের অভাববোধ। অভাব পূরণের লক্ষ্যেই মানুষ বিভিন্ন অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে উপার্জন প্রচেষ্টায় জড়িত হয়।
মূলত অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড লেনদেনকে ঘিরেই ব্যবসায় উদ্ভব হয়। অধিকাংশ মানুষ ব্যাবসাকে নিজেদের পেশা হিসেবে বেছে করে নিচ্ছে। অন্যদিকে, আইনানুসারে বলতে গেলে ব্যবসা বলতে এমন সংগঠনকে বোঝানো হয়ে থাকে, যেটি অর্থের বিনিময়ে ভোক্তাকে পণ্য বা সেবা প্রদান করে থাকে।
ব্যবসায়ের ধারণা?
আমাদের সবগুলো অর্থনৈতিক কাজ ব্যবসায়ের অন্তর্ভুক্ত হবে যদি আমরা জীবিকা নির্বাহ ও মুনাফার আশায় উক্ত কাজগুলো করে থাকি। সাধারণভাবে মুনাফা অর্জনের লক্ষ্যে পরিচালিত অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডকে ব্যবসা বলা হয়ে থাকে। পরিবারের জন্য বা নিজের জন্য খাদ্য উৎপাদন করা, হাসঁ মুরগি পালন করা, সবজি চাষ ইত্যাদি করাকে ব্যবসা বলা যায় না।
কিন্তু আমরা যদি মুনাফার আশায় ধান, সবজি ইত্যাদি চাষ করি তখন সেটি ব্যবসা হিসেবে গণ্য করা হবে। তবে মুনাফা অর্জনের উদ্দেশ্যে দেশের আইনে বৈধ এবং সঠিক উপায়ে পরিচালিত সকল অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডকে ব্যবসা বলা যাবে। ব্যবসায়ের আরও কিছু বৈশিষ্ট্য আছে যা একে অন্য সব পেশা থেকে আলাদা করেছে। ব্যবসায়ের সাথে জড়িত পণ্য বা সেবার অবশ্যই আর্থিক মূল্য থাকতে হবে।
ব্যবসায়ের আরেকটি বৈশিষ্ট্য হলো এর সাথে ঝুঁকির সম্পর্ক। মূলত মুনাফা অর্জন করার উদ্দেশ্যেই একজন ব্যবসায়ী অর্থ বিনিয়োগ করেন। ব্যবসায়িক কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে মুনাফা অর্জনের পাশাপাশি অবশ্যই সেবার মনোভাব থাকতে হবে। ব্যবসায়ের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো এতে নৈতিকতা ও সামাজিক দায়বদ্ধতার বিষয়টি বিবেচনা করতে হয়।
ব্যবসায়ের গুরুত্ব?
অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড হিসেবে গণ্য হলেও ব্যবসায় যে কোনাে দেশের আর্থ-সামাজিক-রাজনৈতিক তথা সামগ্রিক উন্নয়নে বিশেষ অবদান রেখে চলেছে। ব্যবসায়ের প্রয়ােজনীয়তা উপলদ্ধি করেই গড়ে উঠেছে ছােট-বড় দোকান থেকে শুরু করে বিশাল শিল্প কারখানা। বর্তমান বিশ্বে ব্যবসায়ের গুরুত্ব অপরিসীম।
আজকের পৃথিবীতে সে সকল দেশ উন্নতির চরম শিখরে অবস্থান করছে যে দেশগুলাে ব্যবসা-বাণিজ্যে উন্নত। ব্যবসায়ের মাধ্যমে সম্পদের যথাযথ ব্যবহার সহজ হয় এবং দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন ত্বরান্বিত হয়। ব্যবসায়ের ফলে সঞ্চয় বৃদ্ধি পায়, মূলধন গঠিত হয় ও জাতীয় আয় বৃদ্ধি পায়।
ব্যবসায়ের মাধ্যমে বেকার মানুষের কর্মসংস্থান হয়। ব্যবসা গবেষণা ও সৃজনশীল কাজের উন্নয়ন ঘটায়। ব্যবসা-বাণিজ্যের ফলে দেশে-দেশে পণ্য-দ্রব্যের আদান প্রদানের সাথে সাথে সংস্কৃতির বিনিময়ও ঘটে। ব্যবসায়-বাণিজ্যকে ঘিরে নতুন-নতুন শহর, বন্দর গড়ে উঠে ।সুতরাং ব্যাবসা এর গুরুত্ব অপরিসীম।
ব্যবসায় পরিকল্পনার ধারণা?
ব্যবসায় পরিকল্পনা হলাে ব্যবসায়ের ভবিষ্যৎ কার্যক্রমের প্রতিচ্ছবি। এটি একটি লিখিত দলিল যার মধ্যে ব্যবসায়ের লক্ষ্য, প্রকৃতি, ব্যবস্থাপনার ধারা, অর্থায়নের উপায়, বর্তমান অবস্থা ও ভবিষ্যত উন্নয়নের সম্পূর্ণ চিত্র তুলে ধরা হয়।
কোন ব্যবসায় কোন দিকে অগ্রসর হবে ও কীভাবে ব্যবসায়ের সাফল্য অর্জন করা যাবে তার সুর্নিদিষ্ট দিক-নির্দেশনা ব্যবসায় পরিকল্পনায় পাওয়া যায়। জাহাজ বা উড়ােজাহাজের ক্ষেত্রে রাডার যেমন চালককে পথ চলার নির্দেশনা দিয়ে গন্তব্যে পৌছতে সাহায্য করে, তেমনি ব্যবসায় পরিকল্পনা কোনাে ব্যবসায়ীকে তার কাংখিত লক্ষ্যে পৌঁছতে সাহায্য করে।
নতুন ব্যবসায় শুরু করা অথবা বর্তমান ব্যবসায় সম্প্রসারণ উভয় ক্ষেত্রেই ব্যবসায় পরিকল্পনার প্রয়ােজন হয়। ব্যবসায় পরিকল্পনাকে ভ্রমণকারীর জন্য রােড ম্যাপ এবং একজন দালান নির্মাতার নীল-নকশার সাথে তুলনা করা যেতে পারে ।
কিভাবে একটি ব্যবসা শুরু করবেন?
একটি ব্যবসা শুরু করতে হলে আপনাকে কিছু নিয়ম মেনে সেটি শুরু করতে হবে। কারণ আপনি চাইলেই ব্যবসা শুরু করে দিতে পারবেন না। আপনাকে অবশ্যই ধাপে ধাপে সব কিছু করতে হবে।তাহলে চলুন ধাপে ধাপে ব্যবসা শুরু করার নিয়ম সম্পর্কে জানা যাকঃ
আপনার দক্ষতা যাচাই করুন
ব্যবসা করতে হলে আপনাকে যেকোন পণ্য বাছাই করতে হবে। আপনি কি নিয়ে ব্যবসা করবেন সেটির উপর নির্ভর করবে আপনার ব্যবসায়ের সফলতার বিষয়টি। কেন আপনার দক্ষতা যাচাই করবেন? ধরুন আপনি একটি জায়গায় থাকেন, যেখানে দামি ইলেকট্রিক প্রোডাক্ট এর চাহিদা অনেক কম, এখন যদি আপনি সে দামি ইলেকট্রিক প্রোডাক্ট নিয়ে ব্যবসা শুরু করেন তাহলে আপনার পণ্য কিনবে কে?
একইভাবে,ধরুন আপনি যেখানে ব্যবসা পরিচালনা করবেন সেখানে চাল-ডালের ব্যবসা অধিক বেশি লাভবান, কিন্তু আপনার এই ব্যবসা সম্পর্কে কোনো প্রকার ধারণা নেই তাহলে কিন্তু আপনি সে ব্যবসা করে ততটা সফল হতে সক্ষম হবেন না। তাই অবশ্যই আপনার দক্ষতা যাচাই করে একটি লাভজনক ব্যবসা আইডিয়া আপনাকে বাছাই করতে হবে।
সঠিক পরিকল্পনা
প্রথমেই আপনারা ব্যবসায় পরিকল্পনা সম্পর্কে কিছুটা ধারণা পেয়েছেন। ব্যবসায় পরিকল্পনা হলো ব্যবসায়ের ভবিষ্যত সম্পর্কে একটি প্রতিচ্ছবি। অর্থাৎ আপনি যে ব্যবসা শুরু করতে চান সেটি লোকেদের কতটা কাজে আসবে, ভবিষ্যতে এই ব্যবসায় করে আপনি কতটা লাভবান হবেন, পণ্যের চাহিদা ইত্যাদি।
যদি আপনি ব্যবসা করে দ্রুত সফল হওয়ার কথা ভাবেন তাহলে অবশ্যই আপনার ভালো পরিকল্পনা করতে হবে। সঠিক পরিকল্পনা ছাড়া আপনি একটি ব্যবসা সহজে পরিচালনা করতে পারবেন না।
একটি ব্যবসা টপিক নির্ধারণ করুন
বিভিন্ন ব্যবসা টপিক রয়েছে যেমনঃ ইলেকট্রিক প্রোডাক্ট, কসমেটিক, ফার্মেসি, চাল-ডাল, কাঁচা বাজার ব্যবসা ইত্যাদি। আপনাকে ব্যবসা করার জন্য একটি লাভজনক টপিক নির্ধারণ করতে হবে। আপনার চারপাশে যে জিনিয গুলো মানুষের বেশি প্রয়োজন হয় সেগুলো নিয়ে ব্যবসা শুরু করলে লাভবান হতে পারবেন।
টাকা বিনিয়োগ
একটি ব্যবসা শুরু করতে হলে আপনাকে অবশ্যই বিনিয়োগ করতে হবে। মূলত মুনাফা অর্জনের উদ্দেশ্যে আপনাকে ব্যবসায় বিনিয়োগ করতে হবে। ব্যবসায়ের মূলধন বিনিয়োগ করার মাধ্যমে আপনাকে একটি ব্যবসা পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে হবে।
আপনার কি কি লাইসেন্স দরকার সেগুলো যাচাই করুন
আপনার ব্যবসা সংক্রান্ত যে যে কাগজপত্র প্রয়োজন সেগুলোর জন্য আবেদন করুন। আমদানি বা রপ্তানি সনদ, লোকাল বিজনেস সনদ ইত্যাদি প্রয়োজন হতে পারে। আপনার ব্যবসা এর স্থান হিসেবে যা যা প্রয়োজন সেগুলোর জন্য আবেদন করুন, এতে পরবর্তীতে আপনার কোনো সমস্যায় পড়তে হবে না।
পণ্য বিক্রয় কৌশল জেনে নিন
একটি পণ্য ক্রেতার কাছে কিভাবে বিক্রি করবেন সে বিষয়টি অবশ্যই জেনে নিতে হবে। একই সাথে ক্রেতার মতামত জেনে নেওয়ার বিষয়টি লক্ষ রাখুন।
সফল ব্যবসায়ীর থেকে পরামর্শ নিন
আপনার আগে যারা ব্যবসা করে সফল হয়েছেন এমন ব্যবসায়ীদের থেকে বিভিন্ন পরামর্শ নিতে পারেন। কারণ তারা অবশ্যই জানবে কিভাবে কি করলে সহজে সফল হওয়া যায়। তাদের পরামর্শ আপনাদের অনেক সাহায্য করতে পারে।
আমাদের শেষ কথা
বন্ধুরা আজকে আমরা জানলাম একটি ব্যবসা শুরু করতে হলে অবশ্যই সঠিক পরিকল্পনা, দক্ষতা এবং দিক নির্দেশনা সহ বিভিন্ন নিয়ম নীতি অনুসরণ করতে হয়। তাই আপনি যদি চাইছেন ব্যবসা শুরু করতে তাহলে ক্রেতার চাহিদা অনুযায়ী শুরু করে দিন ব্যবসা। ব্যবসা অবশ্যই আপনার জন্য একটি লাভজনক পেশা হিসেবে প্রমাণিত হতে পারে।