ফেসবুক হচ্ছে বর্তমান বিশ্বের সবচেয়ে জনপ্রিয় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম। আমরা অনেকেই আছি প্রতিদিন নির্দিষ্ট কিছু সময় ফেসবুকে ব্যবহার করে থাকি। আমাদের মধ্যে আবার এমন অনেকে আছেন যারা ফেসবুক ছাড়া কিছু বোঝেন না। তাদের ফেসবুক ব্যাবহার টা কেন অতিরিক্ত হয়ে যায়।
ফেসবুক |
সাধারণত তাদের জন্যই মূলত আমার আজকেরে আর্টিকেলটা লেখা আজকের আর্টিকেলে আমি আপনাদেরকে বলবো ফেসবুক আসক্তি থেকে কিভাবে আপনারা মুক্তি পাবেন। তাহলে চলুন জেনে নেওয়া যাক ফেসবুক থেকে দূরে থাকার উপায়ঃ
সাধারণত অনেকে আছে যারা ফেসবুক ব্যবহার করতে করতে সেটাতে আসক্ত হয়ে গিয়েছে। তারা অনেকবার চেষ্টা করেও ফেসবুকের এই আসক্তি থেকে মুক্তি পেতে পারছে না। আমি নিজেও ফেসবুকে এক সময় আসক্ত হয়ে ছিলাম। অতিরিক্ত সময় চলে যেত তখন আমার ফেসবুক ব্যবহারে।
আমি সেই সময়ে অনেক চেষ্টা করেছি কিন্তু আমি ফেসবুক আসক্তি থেকে মুক্তি পায়নি। কিন্তু আমি ক্রমাগত চেষ্টা করার ফলে কিছু উপায় অবলম্বন করে অবশেষে ফেসবুক আসক্তি থেকে মুক্তি পেয়েছিলাম।আমি আমার নিজের অভিজ্ঞতা থেকে আপনাদেরকে বলবো ফেসবুক আসক্তি থেকে কিভাবে আপনারা দূরে থাকবেন।
ফেসবুক আসক্তি আসলে কি?
ইন্টারনেটের জগতে ফেসবুক বা সোশ্যাল মিডিয়া গুলো আনা হয়েছিল আমাদের জীবনযাত্রা সহজ করার জন্য কিন্তু বর্তমানে তার উল্টোটা ঘটছে। বিষয়টা কি জন্য বললাম আপনারা হয়তো বুঝতে পারছেন সেটা হল বর্তমানে আমরা ফেসবুক ব্যবহার করি না ফেসবুক আমাদেরকে ব্যবহার করছে।
কিন্তু এই ফেসবুক যে আমাদেরকে ব্যবহার করছে সেটা কিন্তু আমাদের কারনেই।শুধু ফেসবুক না ইউটিউব সহ অন্যান্য যেসব ওয়েবসাইটগুলো রয়েছে অনলাইনে সেসব ওয়েবসাইটের মালিকরা চাই তাদের সাইটগুলো মানুষ বেশি পরিমাণে ব্যবহার করুক।
কেননা আপনি ফেসবুকে যত সময় ব্যয় করবেন তত ফেসবুকের লাভ। আপনি ইউটিউবে যত সময় ব্যয় করবেন ততই ইউটিউব এর লাভ। সাধারণত অনলাইনে যত বড় বড় সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম রয়েছে সবার বিজনেস পলিসি এটা।
আমাদের মধ্যে অনেকেই আছেন- দূর ফেসবুক চালিয়ে আবার কি হবে ফেসবুক চালিয়ে তো কোন ক্ষতি নাই,ফেসবুক তো আমরা ফ্রি তে চালাই। ফেসবুক আপনার থেকে টাকার চেয়ে মূল্যবান জিনিস নিয়ে নিচ্ছে সেটা হচ্ছে আপনার গুরুত্বপূর্ণ সময়। আপনি ফেসবুকে যত সময় ব্যয় করবেন তত তাদের লাভের সম্ভাবনা আরও বাড়বে।
কিন্তু আমরা চাইলে নিজেরা একটু সচেতন হলে আমরা নিজেদেরকে ফেসবুকের এই আসক্তি থেকে মুক্তি দিতে পারি। ফেসবুক থেকে দূরে থাকার উপায় জানার আগে আমাদের আগে জানতে হবে ফেসবুক আমরা কেন চালাই এই সম্পর্কেঃ
ফেসবুক আমরা কেন ব্যবহার করি?
আপনি যেকোন আসক্তি থেকে বের হওয়ার আগে আগে একটা জিনিস আপনাকে বের করতে হবে যে এই কাজটা আপনি কেন করেন। তেমনি ফেসবুকের ক্ষেত্রে আপনাকে আগে ভাবতে হবে যে ফেসবুক আপনি কেন ব্যবহার করেন বা কেন প্রয়োজন। বর্তমানে ফেসবুক হচ্ছে বিশ্বের সেরা একটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম।
আমরা ফেসবুক ব্যবহার করে থাকি বন্ধু-বান্ধবদের সাথে যোগাযোগ করার জন্য, ভিডিও দেখার জন্য একে অপরের পোস্ট শেয়ার করার জন্য বা অন্য আরো অনেক কারণে ফেসবুক ব্যবহার করে থাকি। সাধারণত এসব ছোটখাটো কারণে আমরা ফেসবুক ব্যবহার করতে পারি সেটা সমস্যা নয়।
সমস্যাটা ঠিক তখনই তৈরি হবে যখন আপনি ব্যবহার করতে করতে অতিরিক্ত ব্যবহার করে ফেলছেন বা আসক্তি করে ফেলছেন। সাধারণত ব্যক্তির চাহিদার ভেদে ফেসবুক ব্যবহারের চাহিদা আলাদা আলাদা হয়ে থাকে কেউ অবসর সময় বেছে নেয় ফেসবুক ব্যবহারের জন্য।
কেউ সাধারণত তার কাজের জন্য, কেউ কেউ মনের মানুষের সাথে আলাপ করার জন্য, আবার অনেকেই ফাউল লাইক এবং কমেন্ট করে সারাদিন ফেসবুকে অব্যয় সময় নষ্ট করে থাকে। তো ফেসবুক থেকে দূরে থাকার উপায় এটিও একটি যে আমরা কেন ফেসবুক ব্যবহার করি এবং কতটা জরুরী আমাদের ফেসবুক ব্যবহার করা।
আপনি যদি কারণটা বের করতে পারেন তারপর আপনি ফেসবুক থেকে আসক্তির বাম মুক্তির পথ টা পাবেন। ফেসবুক থেকে দূরে থাকার জন্য আমাদের মধ্যে অনেক চেষ্টা করে থাকেন তাদের ফেসবুক আইডি ডিএকটিভেট করে দেওয়ার জন্য। অনেকে ফেসবুক থেকে জিমেইল রিমুভ করে, ফেসবুক থেকে বিদায় নেওয়ার স্ট্যাটাস দিয়ে থাকেন।
কিন্তু এতে আমাদের কোনো কাজ হয় না কিছুদিন পরেই দেখা যায় আমরা নিজেরাই আবার আইডি একটিভ করে ফেলি। আপনার হয়তো মনে হতে পারে যে আমি ফেসবুকে যাচ্ছিনা কতদিন আমার কলেজের কোন বন্ধু হয়তো আমার খোঁজ করছে আমার ইমারজেন্সি কেউ ম্যাসেজ দিয়েছে আমার ইনবক্সে।
কিন্তু আপনি যখন ফেসবুকে একটিভ করে আপনার ইনবক্স চেক করবেন তখন দেখবেন আপনার ইনবক্স একেবারে ফাঁকা। যে যার মত ফেসবুকে আছে কিন্তু আপনার ইনবক্সে কোন মেসেজ আসে নি। তাই ফেসবুক থেকে দূরে থাকার এটিও একটি কার্যকারী উপায়।
ফেসবুক থেকে দূরে থাকার উপায়?
১. ফেসবুক থেকে দূরে থাকার সবচেয়ে কার্যকরী একটি উপায় হল আপনার ফেসবুক আইডি ডিএকটিভেট করে রাখা তিন থেকে চার সপ্তাহের জন্য।শুরুতে যারা লম্বা সময় ধরে ফেসবুক আইডি বন্ধ রাখতে পারবেন না তারা ছোট করে এক সপ্তাহের চ্যালেঞ্জ নিতে পারেন। সাধারণত গবেষণার মাধ্যমে দেখা গিয়েছে যারা লম্বা সময় ধরে ফেসবুক ডিএক্টিভেট করে রাখে।
তাদের ক্ষেত্রে একসময় দেখা যায় তারা ফেসবুক ব্যবহারের আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছে। আপনি চাইলে এই সময়ে অন্য যেকোনো একটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম বা যে কোন সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার করতে পারেন। এতে করে আপনার আর ফেসবুকে ফেরার আগ্রহ বাড়বে না।
২. ফেসবুকে আজেবাজে যেসব গ্রুপ রয়েছে সেসব গ্রুপ থেকে আপনি অবিলম্বে রিমুভ বা লিভ নিয়ে নিন। এসব গ্রুপের বিভিন্ন ধরনের কনটেন্ট দেখার ফলে আপনার সময় নষ্ট হতে পারে তাই এসব গ্রুপে এড থাকলে অবিলম্বে লিভ নিয়ে নিন।
৩. ব্রাউজারের মাধ্যমে ফেসবুক ব্যবহার করতে পারেন।আপনি যদি আপনার ব্রাউজারের মাধ্যমে ফেসবুক ব্যবহার করে থাকেন তাহলে ফেসবুকের নোটিফিকেশন গুলো আপনার বারবার শুনতে হবে না বা আপনার ফোনে আসবে না। এর ফলে আপনার মন বলবেনা ফেসবুকে বারবার প্রবেশ করার জন্য।
৪. সাধারণত আমরা অনেকেই আছি যারা ফেসবুকে ছবি পোস্ট করার পর দেখতে চাই কত লাইক পড়ল এবং কত কমেন্ট আসলো । আপনার ছবিতে যত লাইক এবং কমেন্ট আসুক না কেন এতে আপনার কোন লাভ হবে না এটা হল ফেসবুকের একটি ফেক রিওয়ার্ড।
এটার মাধ্যমে ফেসবুক তাদের গ্রাহকদের ধরে রাখে। তাই আপনার যদি পোস্ট করার পর কমেন্ট বা লাইক চেক করার আগ্রহ থাকে তাহলে এটি অবিলম্বে বাদ দিন।
৫. আপনার যদি কম্পিউটার থাকে তাহলে আপনি কম্পিউটারের মাধ্যমে ফেসবুক ব্যবহার করতে পারেন এর ফলে আপনার মোবাইলের মতো বারবার নোটিফিকেশন দিবেনা। আপনার যখন ফেসবুকে দরকার হবে আপনি তখন শুধু ফেসবুকে যেতে পারবেন।
৬. আপনি যদি মোবাইল ব্যবহার করে থাকেন এবং এর মাধ্যমে যদি ফেসবুকের ম্যাসেঞ্জারটা আপনি ব্যবহার করেন তাহলে অবিলম্বে সেটা আনইন্সটল করে দিন। আর যদি মেসেঞ্জার আনইন্সটল করতে না পারেন তাহলে অবশ্যই এগুলোর চ্যাট হেড অফ করে দিন এবং এর সাথে নোটিফিকেশন টা ও অফ রাখুন।
আমাদের শেষ কথা
আমি আপনাদের সাথে ফেসবুক থেকে দূরে থাকার উপায় সম্পর্কে ওপরে কিছু টিপস দিয়েছি।আপনারা অবশ্যই এই টিপসগুলো মেনে চলার চেষ্টা করুন। তাহলে অবশ্যই আপনার আসক্তির ধীরে ধীরে কমে আসবে।
সবচেয়ে বড় কথা হল এটি আপনি যদি নিজেকে ফেসবুক আসক্তি থেকে মুক্তি পেতে চান তাহলে অবশ্যই আমার টিপসগুলো অনুসরণ করার পাশাপাশি নিজেকেও চেষ্টা করতে হবে। তা না হলে আপনি কোন সময় ফেসবুক থেকে বা ফেসবুকের আসক্তি থেকে মুক্তি পাবেন না।