পাইকারি ব্যবসা আইডিয়া
বন্ধুরা আজকের আর্টিকেলে আমরা পাইকারি ব্যাবসা আইডিয়া সম্পর্কে বিস্তারিত জানবো।
এক্ষেত্রে বলা যায়, আপনি যদি নতুন ভাবে পাইকারি ব্যাবসা শুরু করা নিয়ে ভাবছেন তাহলে আপনি অবশ্যই সঠিক দিকে রয়েছেন।
নরমালি আমরা প্রতিনিয়ত যে খুচরা ব্যাবসা দেখি সেটি আর পাইকারি ব্যাবসা ভিন্ন। পাইকারি ব্যাবসায়ের ধরন আলাদা।
আর এইখানে খুচরা ব্যাবসা এর তুলনায় অনেক বেশি ইনভেস্ট এর প্রয়োজন রয়েছে। কিন্তু সে পরিমাণে লাভ ও রয়েছে হোলসেল ব্যাবসার ক্ষেত্রে।
এখানে মূল বিষয়টি হচ্ছে ব্যাবসা। ব্যবসা করার টিপস বা নিয়ম না জেনে ব্যাবসা শুরু করলে পরবর্তীতে আপনি কিছু বুঝবেন না।
আর তাই যেকোনো ব্যাবসা (Business) শুরুর পূর্বে প্রথমে আমাদের জেনে নিতে হবে ব্যাবসা কি এবং ব্যাবসা কাকে বলে। কারণ ব্যাবসার প্রাথমিক ধারণা না থাকলে আপনি সরাসরি কোনো ব্যাবসা করতে পারবেন না।
তবে প্রথমেই জানা যাক ব্যাবসা কি?
সাধারণত মুনাফা আয়ের উদ্দেশ্যে পরিচালিত সকল অর্থনৈতিক কাজকে ব্যাবসা বলা হয়। একজন মানুষ তার পরিবারের জন্য শাক সবজি চাষ করে থাকলে সেটি ব্যাবসা বলে গণ্য করা হবে না।
কিন্তু সেই মানুষটি যখন মুনাফা আয়ের লক্ষ্যে শাক সবজির চাষ করবে তখন সেটিকে আমরা বলতে পারি এক ধরনের ব্যাবসা। এমনিতে মুনাফা অর্জনের লক্ষ্যে করা সকল কাজকে ব্যাবসা বলা হবে, যদি সে সকল কাজ উক্ত দেশের আইনে বৈধ হয়ে থাকে।
তাহলে আশা করি আমি আপনাদের ব্যাবসা মূলত কি সেটা বুঝতে পেরেছি। এবার যাওয়া যাক পাইকারি ব্যাবসার দিকে।
পাইকারি ব্যাবসা কাকে বলে?
উৎপাদক কিংবা ম্যানুফ্যাকচারার এর কাছে থেকে কোনো পণ্য পাইকারি দামে কিনে সেটিকে খুচরা ব্যাবসায়ীদের নিকট পৌঁছে দেওয়ার প্রক্রিয়াকে পাইকারি ব্যাবসা কিংবা হলসেল ব্যাবসা বলা হয়।
পাইকারি ব্যাবসা কে ইংরেজিতে "Wholesale Business" বলা হয়ে থাকে। এটিকে "Dealership Business" ও বলা যেতে পারে।
এই ধরনের ব্যাবসার ক্ষেত্রে হোলসেলার উৎপাদক বা ম্যানুফ্যাকচারার এর কাছে কম দামে অর্থাৎ পাইকারি রেটে পণ্য কিনে নেয়, এবং পরবর্তীতে সকল খুচরা ব্যাবসায়ীর কাছে সেই পণ্যগুলো বেশি দামে সেল করে থাকে।
এইক্ষেত্রে হোলসেলার এর অনেকটা লাভ হয়, কেননা সে উৎপাদক এর কাছে থেকে পণ্যটি অনেক কম রেটের বিনিময়ে পাচ্ছে।
হোলসেল ব্যাবসা আর ডিলারশিপ ব্যাবসার নিয়ম প্রায় একই। কিন্তু ডিলারশিপ এর ক্ষেত্রে সেলার কে নির্দিষ্ট একটা জায়গায় তার পণ্য সেল করতে হয় কিন্তু পাইকারি ব্যাবসার ক্ষেত্রে আপনি আপনার পণ্য যেখানে ইচ্ছা সেখানে বিক্রি বা সেল করতে পারবেন আপনার দাম অনুযায়ী।
পাইকারী ১৫ টি ব্যবসা আইডিয়াঃ
( Wholesale Business Ideas)
যে কোন ব্যবসা শুরু করার প্রথমে আপনাকে ভাবতে হবে যে আপনি কোন পণ্যটি নিয়ে আপনার সে ব্যবসাটি পরিচালনা করবেন। এক্ষেত্রে অবশ্যই তাড়াহুড়া করে কোনো সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবেন না।
আপনার আশেপাশের চাহিদা এবং বাজেট অনুযায়ী আপনি একটি লাভজনক ব্যবসার টপিক নির্ধারণ করে নিতে পারেন।
তবে নিচে আমি আপনাদের সবচেয়ে লাভজনক ১৫ টি পাইকারি ব্যবসা আইডিয়া সম্পর্কে বলবো। এখান থেকে আপনি আপনার পছন্দমত যেকোনো একটি ব্যাবসা বেছে নিতে পারেন। ১৫ টি লাভজনক পাইকারি ব্যাবসা আইডিয়া গুলো হলোঃ
১.ওষধের পাইকারি ব্যাবসা
পাইকারি ব্যবসা আইডিয়ার মধ্যে এটা হতে পারে দারুন একটি ব্যবসা। ওষুধ বা ফার্মেসি ব্যাবসা অত্যন্ত সম্মানীয় এবং লাভজনক একটি ব্যাবসা। ওষুধের পাইকারি ব্যাবসা করে আপনি লক্ষ লক্ষ টাকা পর্যন্ত আয় করতে পারেন।
আপনার মাথায় প্রশ্ন আসতে পারে যে, এত ধরনের ব্যাবসা থাকতে ওষুধের ব্যাবসা কেনো আপনি করবেন?
দেখুন ওষুধ কিন্তু মানুষ কিনবেই, এটি একদম নির্ধারিত। ওষুধের পাইকারি ব্যাবসা আপনি চাইলে সরাসরি দোকান দিয়ে করতে পারেন।
তবে মেডিসিন এর ব্যাবসা করার ক্ষেত্রে ইনভেস্ট এর পরিমাণ একটু বেশি থাকা লাগবে। তবে পাইকারি ব্যাবসায় ক্ষেত্রে সব ক্ষেত্রেই আপনাকে একটু বেশি ইনভেস্ট করতে হবে। যার জন্যই আপনার লাভের পরিমাণটা বেশি হবে।
২.কাপড়ের পাইকারি ব্যাবসা
সকল শ্রেণীর মানুষ কাপড় পরিধান করে থাকেন। যার জন্য বাজারে কাপড়ের চাহিদা বরাবরের মতোই অনেক বেশি থাকে। ব্যাবসার ক্ষেত্রে এটি অনেক লাভজনক একটি ব্যাবসার আইডিয়া।
এ ধরনের ব্যাবসা শুরুর ক্ষেত্রে একটু বেশি মূলধন বিনিয়োগ করা লাগে। কিন্তু লাভের পরিমাণটাও বেশি থাকে।
কাপড়ের মধ্যে ছেলেদের শার্ট, পেন্ট, টি-শার্ট, জিন্স, পাঞ্জাবি ইত্যাদি রয়েছে এছাড়া মেয়েদের শাড়ি, থ্রি পিচ ইত্যাদি।
কাপড়ের Wholesale Business ক্ষেত্রে আপনি শুধুমাত্র একটি প্রোডাক্ট টার্গেট করে আপনার Business শুরু করতে পারেন। আপনি ছেলেদের টি-শার্ট নিয়ে করতে পারেন, কিংবা মেয়েদের শাড়ি বা থ্রি পিচ নিয়েও Business আরম্ভ করতে পারেন।
এক্ষেত্রে শাড়ির ব্যাবসাটি বেশ লাভজনক হতে পারে। আমাদের বাংলার মেয়েরা শাড়ি পরে থাকে, তাই মার্কেটে এর বেশ চাহিদা আছে।
তাই আপনি বিভিন্ন শাড়ি উৎপাদকারীর কাছে থেকে শাড়ি পাইকারি দামে ক্রয় করে সেটিকে খুচরো ব্যাবসায়ীদের কাছে ভালো দামে সেল করে দিতে পারেন।
৩.মাছের পাইকারি ব্যাবসা
পাইকারি ব্যবসা আইডিয়া গুলোর মধ্যে এটিও একটি ভাল ব্যবস। কথায় আছে, ব্যাবসা যেমন হোক ছোট কিংবা বড়, কোনো ব্যাবসাকে ছোট দেখা উচিত নয়। এমন একটি ব্যাবসা হচ্ছে মাছের ব্যাবসা। এই ব্যাবসাটিকে পর্যায়ক্রমে তুলনামূলকভাবে বড় ব্যাবসায় রূপান্তর করা সম্ভব।
মাছের ব্যাবসা দুইভাবে করা যায়, একটি হচ্ছে নিজের একটি পুকুর তৈরি করে তাতে মাছের চাষ করা, এবং অন্যটি হচ্ছে পাইকারি মাছের ব্যাবসা করা।
এক্ষেত্রে পাইকারি মাছের ব্যাবসা অনেক লাভজনক। আপনি চাইলে যেকারো কাছে থেকে পাইকারি দরে মাছ ক্রয় করে সেগুলো খুচরা মাছ ব্যাবসায়ীর কাছে বিক্রি করে দিতে পারেন।
এই ব্যাবসার ক্ষেত্রে আপনি আপনার কাছে মাছ বেশিদিন রেখে দিতে পারবেন না, কারণ মাছ বেশিদিন তাজা থাকে না। তবে এই ব্যাবসায়ের ক্ষেত্রে ভালো ভালো সাপ্লায়ারদের সাথে পরিচিত থাকলে ভালো।
৪.বাদামের পাইকারি ব্যাবসা
বাদামের চাহিদা সবসময় বেশি থাকে। ছোট বড় সকলেই বাদাম খেতে অনেক পছন্দ করে থাকে। ব্যবসার ক্ষেত্রে বাদামের ব্যবসা লাভজনক।
আপনি চাইলে দুইভাবে বাদামের ব্যবসা করতে পারেন। একটি হলো নিজেই বাদামের চাষ করে, এবং আরেকটি উপায় হচ্ছে সরাসরি কৃষকদের কাছ থেকে বাদাম পাইকারি দামে কিনে সেগুলোকে বিভিন্ন খুচরা ব্যবসায়ীর কাছে সেল করে দেওয়া। আবার চাইলে ভাজা বাদামও বিক্রি করতে পারবেন।
বাদামের পাইকারি বিজনেস করার ক্ষেত্রে তেমন কোনো ঝামেলার সম্মখীন করতে হয় না।
৫.মসলার পাইকারি ব্যাবসা
রান্নার কাজে বাঙালির সঙ্গী হচ্ছে মসলা। নিত্যদিনের রান্নার কাজে আমাদের প্রত্যেকের মসলা ব্যবহার করতে হয়।
আর তাই আপনি চাইলে মসলার হোলসেলের বিজনেস করতে পারেন। এখন অনেকে চিন্তা করবে মসলার বিজনেস এর ক্ষেত্রে লাভ কেমন হবে?
দেখুন, পাইকারি বিজনেস এর ক্ষেত্রে আপনার লাভ অবশ্যই হবে। শুধুমাত্র আপনাকে মসলা হোলসেল প্রাইসে কিনে নিয়ে সেটিকে খুচরা ব্যাবসায়ীর কাছে বিক্রি বা সেল করতে হবে।
আর যেহেতু প্রত্যেক ঘরে ঘরে রান্নার কাজে মসলার অধিক ব্যবহার করা লাগে, কাজেই যেকোনো জায়গাতে এই ব্যাবসা আপনি করতে পারবেন।
৬. ফলের হোলসেল বিজনেস
আমাদের দেশের বিভিন্ন জায়গায় নানা রকমের ফলের চাষ করা হয়ে থাকে। কিন্তু যে পরিমাণ ফলমূল চাষ করে আমাদের কৃষকরা সে পরিমাণে লাভ তারা পায় না।
আপনি চাইলে ফলের হোলসেলের ব্যবসা করতে পারেন। নানান মৌসুমী নানা ধরনের ফল চাষ করা হয়। আর তাই যেই মৌসুমে যেই ফলের চাষ করা হয় আপনি সে মৌসুমে সেই ফলটি কৃষকদের কাছ থেকে সরাসরি পাইকারি দামে কিনে সেগুলোকে শহরের বিভিন্ন খুচরা ব্যবসায়ীদের কাছে ভালো দামে বিক্রি করতে পারবেন।
এ ব্যবসার সাথে পচনশীলতা নামক কথাটি জড়িত রয়েছে। তাই ফল স্টক করার ক্ষেত্রে সর্তকতা অবলম্বন করতে হবে, যাতে ফল পচে না যায়।
৭. পানের ব্যাবসা
আমাদের দেশের অনেক মানুষ পানের সাথে জড়িত। বিশেষ করে বয়স্কদের বেশি লক্ষ করা যায় পান চিবাতে।
যেখানেই যাবেন সেখানেই দেখতে পাবেন বিভিন্ন খুচরা পানের বিক্রেতা বসে আছে পান বিক্রি করার জন্য। ভালোমতো ব্যাবসা করতে জানলে এই ব্যাবসা করেও অনেক লাভবান হওয়া যায়।
এই ব্যবসা করার ক্ষেত্রে আপনাকে তেমন বেশি ইনভেস্ট করার প্রয়োজন হবে না।
আপনি নিজে পানের চাষ করতে পারেন অথবা যারা পানের চাষ করে তাদের থেকে কম রেটে কিনে সেগুলোকে অন্য খুচরা বিক্রেতাদের কাছে বিক্রি করতে পারেন।
৮. চকলেটের বিজনেস
বিভিন্ন খুচরা দোকানে নানান কোম্পানির চকলেট বিক্রি করা হয়ে থাকে। এক্ষেত্রে চকলেট ব্যাবসায় একটি সুবিধা হলো, প্রায় সব মুদির দোকানেই বিভিন্ন চকলেট বিক্রি করা হয়, এছাড়া আলাদা চকলেট বিক্রির শপ তো আছেই। প্রায় সব খুচরা দোকানে কম বেশি চকলেট বিক্রি হয়ে থাকে।
চকলেট ছোট বড় প্রায় সকলের পছন্দের, যার জন্য বাজারে এর চাহিদাও ভালো।
এমনিতে বাংলাদেশে চকলেট এর দাম তুলনামূলক বেশি। তাই চকলেট হোলসেলের বিজনেস করার ক্ষেত্রে আপনি বিভিন্ন ম্যানুফ্যাকচারার এর সাথে কন্টাক্ট করে নিতে পারেন পাইকারি দামের ব্যাপারে।
এরপর আপনি সে চকলেটগুলো দেশের যেকোনো ছোট বড় শপে দিতে পারেন, এবং খুচরা ব্যাবসায়ীদের কাছেও পৌঁছে দিতে পারেন।
৯. কসমেটিকস সামগ্রীর বিজনেস
বর্তমান সময়ের অনেক বেশি লাভজনক বিজনেস হচ্ছে কসমেটিকস সামগ্রীর বিজনেস। এই ব্যাবসাটি যেমন লাভজনক ঠিক তেমনি বাজারে এর চাহিদাও অনেক।
আমাদের দেশে খুচরা কসমেটিকস পণ্যের দোকান অনেক বেশি থাকলেও, পাইকারি দোকান অনেকটা কম।
আপনি কসমেটিকস পণ্যের পাইকারি বিজনেস শুরু করতে পারেন, এই বিজনেসে মোটামুটি বেশ ভালো লাভ হবে আপনার।
১০. ইলেকট্রিক প্রোডাক্ট সমূহের বিজনেস
ইলেকট্রিক প্রোডাক্ট এর সকল ব্যাবসায় লাভজনক বলে প্রমাণিত হয়,সেটা পাইকারি হোক কিংবা খুচরা।
আপনি যেখানেই যাবেন সেখানেই ইলেকট্রিক প্রোডাক্ট এর চাহিদা দেখতে পারবেন। আর তাই ইলেকট্রিক ব্যাবসা এর চাহিদা সামনে আরো বৃদ্ধি পাবেন। এছাড়া ইলেকট্রনিক্স পণ্যের পাইকারি ব্যাবসায়ে প্রায় ৩০-৩৫ শতাংশ লাভ থাকে।
ইলেকট্রিক এর হোলসেল বিজনেস এর ক্ষেত্রে আপনি বিভিন্ন কোম্পানির ডিলারদের থেকে পাইকারি দামে ইলেকট্রিক পণ্য কিনে রাখতে পারেন।
পাইকারি দামে কেনা প্রোডাক্টগুলো আপনি কোথাও রাখতে পারেন, এরপর খুচরা ব্যাবসায়ীদের থেকে অর্ডার নিয়ে সেগুলো ভালো দামে সেল করে দিতে পারেন।
১১. মুদি পণ্যের হোলসেল বিজনেস
আমাদের আশেপাশে অন্যান্য সব দোকানগুলোর তুলনায় মুদির দোকান অনেক বেশি দেখা যায়। আর মুদি পণ্য ব্যবহার করা হয়না এমন কোনো ঘর নেই, অর্থাৎ সব ঘরে ঘরে মুদি পণ্য ব্যবহার করা হয়।
তাহলে বুঝতে পারছেন নিশ্চই এই ব্যাবসাটির কতটা চাহিদা রয়েছে। আর যেমন চাহিদা আছে ঠিক তেমন ভালো মানের মুনাফা পেতে পারেন এই ব্যাবসা থেকে।
এই বিজনেস শুরু করার আগে আপনার আসে পাশের মার্কেটে একটু নজর দিন, কোন পণ্যের কেমন চাহিদা সেটা যাচাই করুন। এরপর বড় বড় কোম্পানি বা ম্যানুফ্যাকচারারদের থেকে উক্ত পণ্যগুলো পাইকারি দামে কিনে নিন।
তারপর সেগুলোকে আপনার চারপাশের খুচরা মুদির দোকানগুলোতে বিক্রি করে দিন। সঠিকভাবে সেল করতে পারলে ভালো লাভ করতে পারবেন মুদি সামগ্রীর বিজনেস করে।
১২. স্টেশনারি সামগ্রীর বিজনেস
স্টেশনারি সামগ্রী আমাদের সকলের প্রায় নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিষ। স্টেশনারি সামগ্রীগুলো হলো বই, খাতা, কলম, ডায়েরি, পেন্সিল, আরো ইত্যাদি।
স্কুল, কলেজ সহ নানান প্রতিষ্ঠানের কাজে এগুলো অনেক প্রয়োজন। যার জন্য এই প্রোডাক্টগুলো চাহিদা বর্তমানে যেমন বেশি ভবিষ্যতেও তেমনি বেশি থাকবে।
স্টেশনারি পণ্যের পাইকারি বিজনেস এর ক্ষেত্রে আপনি অন্য ব্যাবসার তুলনায় কম পুঁজি দিয়ে শুরু করতে পারেন। কিন্তু এই বিজনেসে প্রতিযোগিতা একটি বেশি।
তবে আপনার আসেপাশের স্টেশনারি পণ্যের খুচরা দোকানিদের সাথে ভালোভাবে সংযুক্ত থাকতে পারলে আপনার এই ব্যাবসার ভবিষ্যত অনেক ভালো হবে।
১৩. ফার্নিচার এর বিজনেস
ছোট বড় সকল ঘরে ফার্নিচার এর ব্যবহার করা হয়ে থাকে। বাজারে বেশ ভালই চাহিদা আছে বিভিন্ন ফার্নিচার সামগ্রীর।
অন্যান্য বিজনেসের তুলনায় ফার্নিচার এর বিজনেসে একটু বেশি ইনভেস্ট করতে হয়। তবে লাভের দিক থেকেও ভালো মুনাফা আয় করা যায় ফার্নিচার এর ব্যাবসা করে।
যদি আপনার ফার্নিচার ইউনিক ডিজাইনের হয়, এবং ভালো মানের হয় তাহলে এই ব্যাবসা করে আপনি ভালো আয় করতে পারবেন। এছাড়া যারা সরাসরি ফার্নিচার বানিয়ে থাকে, তাদের থেকে কম রেটে কিনে আপনি সেগুলো খুচরা দামে বিক্রি করতে পারেন।
১৪. ঘড়ির হোলসেল বিজনেস
আমাদের সকলের হাতেই একটি ঘড়ি থাকে। আমরা কোথাও বের হওয়ার সময় হতে ঘড়ি পড়তে সাচ্ছন্দ্যবোধ করি।
এমনিতে বাজারে অনেক প্রকারের ঘড়ি পাওয়া গিয়ে থাকে। বিভিন্ন ব্র্যান্ড এর ঘড়ি আছে যেগুলোর দাম টাও বেশি। যদি আপনি বেশি পুঁজি দিয়ে শুরু করতে চান তাহলে আপনি ভালো ভালো ব্র্যান্ড এর ঘড়ি দিয়ে শুরু করতে পারেন, তানাহলে কম দামের মধ্যে নানান কোম্পানির ঘড়ি পেয়ে যাবেন সেগুলোর ব্যাবসা করতে পারেন।
বিভিন্ন ডিলার অথবা কোম্পানির কাছে থেকে হোলসেলে কিনে আপনি খুচরা বিক্রেতাদের কাছে সেই ঘরিগুলো বিক্রি করতে পারবেন। এক্ষেত্রে খেয়াল রাখতে হবে যে কোন ঘড়ি কোন সময় চলছে।
১৫.জুতার ব্যাবসা
পাইকারি ব্যবসা আইডিয়া গুলোর মধ্যে এটিও ভালো একটি ব্যবসা। যদি মোটামুটি বিনিয়োগের মধ্যে লাভজনক পাইকারি ব্যাবসা আইডিয়া খুঁজে থাকেন তাহলে আপনার জন্য ভালো হবে জুতার ব্যাবসা করা।
ছোট বড় সকলের সমান প্রয়োজন জুতার। যার জন্য ক্রেতার বিষয়ে চিন্তা করতে হবে না আপনার।
এই ব্যাবসায় আপনি বিভিন্ন হোলসেলার কোম্পানিদের থেকে কম দামে জুতা ক্রয় করে সেটিকে খুচরা ব্যাবসায়ীদের নিকট বিক্রি করে ভালোই লাভ করতে পারবেন।
কিভাবে শুরু করবেন পাইকারি ব্যাবসা?
পাইকারি ব্যবসার আইডিয়া সম্পর্কে এতক্ষণে আপনার ধারণা হয়ে গিয়েছ। Wholesale Business শুরু করার আগে আপনাকে এটি নিয়ে কিছু চিন্তা ভাবনা এবং প্ল্যানিং অবশ্যই করতে হবে। হুটহাট করে আপনি কোনো ব্যাবসা শুরু করে দিতে পারবেন না। ব্যাবসার ক্ষেত্রে Business Plan অনেক গুরুত্বপূর্ণ।
তবে হোলসেল ব্যাবসা শুরুর আগে আপনার প্রাথমিক যে বিষয়গুলো সম্পর্কে প্ল্যান করতে হবে সেগুলো হলোঃ
শুরুতে ভাবুন আপনার কোন বিজনেসটি ভালো মনে হচ্ছে। এরপর যাচাই করুন বাজারে উক্ত ব্যাবসাটির চাহিদা কতটা রয়েছে। সকল কিছু ভালোমতো চিন্তা ভাবনা করে একটি ব্যাবসায় আইডিয়া খুঁজে বের করুন। আপনি চাইলে আপনার উপরে দেওয়া প্ল্যান গুলো থেকে একটি বেছে নিতে পারেন।
আপনার বেছে নেওয়া ব্যাবসার পণ্য সামগ্রী কোন কোম্পানি বা ম্যানুফ্যাকচারার থেকে আপনি কম দামে ক্রয় করতে পারবেন সেটি যাচাই করুন, এবং সে সকল কোম্পানিগুলোর একটি লিস্ট তৈরি করে ফেলুন।
আপনার উক্ত ব্যাবসা পরিচালনা করার ক্ষেত্রে যে যে খরচ হবে সেটির পরিকল্পনা করুন। যেমন ধরুন, পণ্যের রক্ষণাবেক্ষণবাবদ খরচ, গোডাউন বা প্রতিষ্টানের ভাড়া, বিদ্যুৎ বিল, শ্রমিকদের বেতন ইত্যাদি। আপনার ব্যাবসার সাথে জড়িত খরচগুলো দেখে নিন।
আপনার পুরো ব্যাবসার জন্য একটি Business Plan তৈরি করুন। এই প্ল্যানের মধ্যে আপনার ব্যাবসায়িক যাবতীয় প্ল্যান করা থাকবে। এর ফলে আপনার ব্যাবসার কাজ আরো ভালোমতো এগোবে।
আপনার ব্যাবসার জন্য যে ইনভেস্টমেন্ট এর প্রয়োজন সেটি কোথা থেকে পাবেন সেটি চিন্তা করুন। টাকা যোগাড় এর জন্য ব্যাংক ঋণ এর বিষয়ে ভাবতে পারেন।
আপনি যে দেশ থেকে পাইকারি ব্যাবসা শুরু করতে চান সে দেশে উক্ত ব্যাবসা করার ক্ষেত্রে কি কি কাগজপত্র বা লাইসেন্স প্রয়োজন সেগুলো জেনে নিন। যেমন; ট্রেড লাইসেন্স, পেন নম্বর, জি এস টি (GST) ইত্যাদি বিষয়গুলো সম্পর্কে খেয়াল রাখুন। যদি ব্যাবসায়িক প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সম্পর্কে আপনার ধারণা না থাকে সেক্ষেত্রে অন্য কোনো ব্যাবসায়িক এর কাছে থেকে জেনে নিতে পারেন।
এইসকল কিছু ঠিক থাকলেই আপনি শুরু করে দিন আপনার Wholesale Business টি।
পাইকারি ব্যাবসার লাভ
পাইকারি ব্যবসা আইডিয়া ঠিক করে আপনি যদি সঠিকভাবে কাজ করে যেতে পারেন তাহলে আপনি অবশ্যই লাভবান হবেন।খুচরা ব্যাবসার তুলনায় পাইকারি ব্যাবসা অনেকটা সহজ বলা যায়। কেননা খুচরা ব্যাবসার ক্ষেত্রে আপনাকে অনেক ঝামেলা পোহাতে হতে পারে।
কিন্তু হোলসেল ব্যাবসা করতে হলে আপনাকে ইনভেস্ট করতে হবে বেশি। এখানে আপনি যত বেশি পণ্য উৎপাদকের কাছে থেকে নিবেন সে হারে ডিসকাউন্ট পাবেন।
পাইকারি ব্যাবসায় লাভ খুব একটা বেশি তেমন কিন্তু না। এখানে আপনি ১-৫% করে লাভ করতে পারবেন। কিন্তু যদি আপনি এমন একটা জায়গা বেছে নেন যেখানে খুচরা ব্যাবসায়ীরা পাইকারি ব্যাবসায়ী থেকে পণ্য কিনতে আসে, তাহলে আপনার বিক্রি ভালো হবে।
এমনিতে আপনার বিক্রি অনেক হবে। কিন্তু যদি নিজের পুঁজি বাদ দিয়ে হিসেব করেন তাহলে পরিমাণটা একটু কম হতে পারে। ধরুন আপনি এক লক্ষ টাকার মাল বিক্রি করলেন, সেক্ষেত্রে আপনার লভ্যাংশ দারাবে ১ হাজার থেকে ৫ হাজার টাকার মতো।
তবে পাইকারি ব্যাবসার ক্ষেত্রে এক দিনে ১ লাখ টাকা বিক্রি করাটা স্বাভাবিক। কেননা বিভিন্ন খুচরা দোকানিরা প্রতিনিয়তই হোলসেলারদের থেকে পণ্য ক্রয় করে থাকে।
তবে যেকোনো ব্যাবসা ভালোমতো পরিচালনা করতে হলে ব্যাবসার সঠিক নিয়ম মেনে করতে হয়। তবে কিভাবে ব্যাবসায় সফল হবেন চলুন নিচে জেনে নেওয়া যাক।
ব্যাবসায় দ্রুত সফল হওয়ার উপায়
যেকোনো বিজনেসে দ্রুত সফল যাওয়ার জন্যে পরিকল্পনা করা দরকার প্রথমে, কোন বিজনেসে কেমন লাভ ক্ষতি সেটি পরিমাপ করে তারপর কোনো বিজনেস শুরু করা দরকার।
নতুন ব্যাবসায়ীরা একটা ভুল করেন, সেটি হলো তারা ধৈর্যহারা হয়ে যায়। মনে রাখতে হবে, ব্যাবসায় শুধু লাভ থাকবে এমন কোনো কথা নেই, ব্যাবসায় ক্ষেত্রে ক্ষতির সম্ভবনা ও থাকে। তাই বলে দিশেহারা হলে চলবে না। ঝুঁকি গ্রহণ অবশ্যই করতে হবে এবং যথেষ্ট ধৈর্য রেখে বিজনেস এর কাজ করতে হবে।
নিজের বিজনেস এর বিষয়ে নিজেকে ভাবতে হবে। নিজেকে বেশি সময় ব্যয় করতে হবে। অন্যের উপর ভরসা করে বসে থাকলে, সহজে সফল হতে পারবেন না।
আপনাদের ক্রেতাদের সবসময় খুশি রাখতে হবে। একজন ক্রেতা যদি আপনার পণ্য কিনে এবং আপনার ব্যবহারে খুশি হোন তাহলে সে আবারও আপনার দোকানে আসবে। তাই সবসময় চেষ্টা করবেন গ্রাহকদের সাথে ভালো সম্পর্ক বজায় রাখতে ।
যেকোনো ব্যাবসায়িক লেনদেন এর ক্ষেত্রে অবশ্যই ভালোমতো সেটি করতে হবে।
আমাদের শেষ কথা
বন্ধুরা আজকে আমরা পাইকারি ব্যাবসা আইডিয়া সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পারলাম। আজকাল এর দিনে এই বিজনেস এর অনেক চাহিদা।
আমাদের দেশে বেকার যুবক এর সংখ্যা অনেক। সে অনুসারে চাকরি পাওয়াটা বেশ কঠিন হয়ে দাঁড়ায়। আর তাই চাকরির পিছে ছুটে সময় নষ্ট না করে আপনি এই লাইনে আসতে পারেন, পাশাপাশি চাকরির জন্যেও চেষ্টা চালালেন।
এই ব্যাবসায় আপনাকে বিনিয়োগ করতে হবে বেশি, আর বিনিয়োগ ছাড়া ব্যাবসায় লাভ করা যায় না। এমনিতে পাইকারি ব্যাবসায় লাভ তেমন নেই। কিন্তু আপনি যদি এমন একটা জায়গায় আপনার বিজনেস পরিচালনা করেন যেখানে খুচরা বিক্রেতা আপনার কাছে থেকে পণ্য কিনবে তাহলে আপনার সেল ভালো হবে।
আর্টিকেল এর মধ্যে বলা সকল বিষয়গুলো বিশ্লেষণ করে যদি আপনার মনে হয় Wholesale Business আপনার করা উচিত তাহলে আপনি শুরু করে দিতে পারেন।
আর্টিকেলটা ভালো লাগলো অবশ্যই বন্ধুদের সাথে শেয়ার করে দিবেন। কোন প্রশ্ন বা মতামত থাকলে অবশ্যই মন্তব্য করে জানাবেন।